নব্যপ্রস্তরীয় বিপ্লব সম্পর্কে লেখো।
নব্যপ্রস্তর যুগে কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব অগ্রগতি লক্ষ করা গিয়েছিল সেগুলির গভীর বিশ্লেষণ করে বিখ্যাত ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড সেইগুলিকে সেই সময়ের মানুষের অগ্রগতির স্বাভাবিক ধারা বলে মানতে পারেননি। পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় অনেক কম সময়ে নব্যপ্রস্তর যুগে যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল তাকে গর্ডন চাইল্ড "নব্যপ্রস্তর যুগের বিপ্লব" বলে অভিহিত করেছেন।
নব্যপ্রস্তর যুগের আনুমানিক সময়কাল হল খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ খ্রিস্টপূর্ব ৫,০০০ অব্দ পর্যন্ত। এই যুগের হাতিয়ারগুলিতে ধারাবাহিক বিবর্তনের ছাপ সুস্পষ্ট। হাতিয়ারগুলি এসময়ে যথেষ্ট তীক্ষ্ণ মসৃণ ও উন্নত হয়ে ওঠে। এ যুগে মাটি খুঁড়ে বীজবপন বা আগাছা পরিষ্কারের জন্য নতুন ধরনের যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন ঘটে। ফসল কাটার জন্য এই সময় কাস্তে তৈরি হয়। এছাড়া এই সময় কুলো, হামানদিস্তা, শিলনোড়া, জাঁতা, হাতুড়ি, বাটালি প্রভৃতি যন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল।
নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল কৃষিকাজ। কৃষিকাজ শেখার ফলে মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শেখে। এর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়। কৃষিকাজ মানুষকে খাদ্যের নিশ্চয়তা দান করায় অবসরকালে মানুষ নিজেদের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দিকে অগ্রগতির সুযোগ পায়। এইসময় মানুষ আগুনের নানাবিধ ব্যবহার, চাকার ব্যবহার, মৃৎশিল্প, বয়নশিল্প, যানবাহন তৈরি, নৌকায় পাল খাটানো, গৃহনির্মাণ, পাথর সাজিয়ে 'ডোেলমেন' নামে সমাধি নির্মাণ প্রভৃতি শেখে।
এই যুগে মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে উপজাতীয় ধরনের সমাজ গড়ে তোলে। সামাজিক সংগঠন হিসাবে এই সময় পরিবারের উদ্ভব ঘটে। এই সময় পেশাভিত্তিক বিভিন্ন শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। মানুষের জীবনযাত্রায় নানাবিধ পরিবর্তন আসায় নব্যপ্রস্তর যুগকে 'নব্যপ্রস্তর বিপ্লব' বলা যথার্থই যুক্তিযুক্ত।