আকবর থেকে ঔরঙ্গজেবের সময়ে মনসবদারী প্রথার বিবর্তন সম্পর্কে

আকবর থেকে ঔরঙ্গজেবের সময়ে মনসবদারী প্রথার বিবর্তন সম্পর্কে

আকবর থেকে ঔরঙ্গজেবের সময়ে মনসবদারী প্রথার বিবর্তন সম্পর্কে

আকবর থেকে ঔরঙ্গজেবের সময়ে মনসবদারী প্রথার বিবর্তন সম্পর্কে

আকবর থেকে ঔরঙ্গজেবের সময়ে মনসবদারী প্রথার বিবর্তন সম্পর্কে


মধ্য এশিয়া পদ হিসাবে মনসব প্রদানের রীতি আগে থেকে প্রচলিত ছিল ৷ ভারতবর্ষের মুঘল সম্রাট আকবর মনসব ব্যবস্থা কে ব্যাপক আকারে প্রচলন করেন এবং ভারতের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর রাজকীয় আমলাতন্ত্র গঠনের অঙ্গ হিসাবে মনসবদারি প্রথা সূচনা করেন ৷ ঐতিহাসিক আবুল ফজল তার 'আইন -ই-আকবরী' গ্রন্থে মনসবদারি ব্যবস্থার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ৷ সাম্প্রতিককালে রচিত ইরফান হাবিবের " The Monsob syestem" শীর্ষক প্রবন্ধে ও মোহাম্মদ আতাহার আলী "The mughal nobily under Aurangzeb" প্রভৃতি গন্থ ও প্রবন্ধ থেকে মনসবদারির বিবর্তন সম্পর্কে জানা যায় ৷

সাধারণভাবে মনসব হলো কোন ব্যক্তিকে পদত্ত মর্যাদা এবং তার কর্তব্য ও দায়িত্বের পরিচয় ও ভিত্তি ৷ আবুল ফজল মনসবদারদের ৬৬ টি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তবে অনিল চন্দ্র ব্যানার্জীর মতে ৩৩টির অধিক স্তরের অস্তিত্ব ছিল না । প্রতিটি মনসবদার জাট ও সাওয়ার পদের অধিকারী হতেন ৷ একজন মনসবদারের অধীনে অনুমোদিত সৈন্য সংখ্যার সূচক ছিল জাট পদ এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যত সৈন্য রাখতো তার দ্বারা নির্ধারিত হতো সবার পদ ৷ ডক্টর ঈশ্বরী প্রসাদ এর মতে জাট পদ ছিল মনসবদারের ব্যক্তিগত পদমর্যাদা সূচক এবং সাওয়ার পদ ছিল তার অধীনে রক্ষিত অতিরিক্ত সৈন্যবাহিনীর সূচক ৷



রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন ঘটানো হয় । ওরঙ্গজেবের রাজত্বকালের দ্বিতীয়র্ধে মনসবদারদের নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত সওয়ার রাখতে হতো । এই প্রসঙ্গে আতাহার আলী বলেছেন যে," ওরঙ্গজেবের সময় অধিক সংখ্যক বিশ্বস্ত ও অনুগত আমলা পাওয়া যাচ্ছিল না তাই এই ব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷" জাহাঙ্গীরের আমলে একাধিক পদ চালু হয়েছিল ৷ শাহজাহানের আমলে এই ব্যবস্থা আরো সাম্প্রতিক হয় ৷ আতাহার আলীর মতে ঔরঙ্গজেবের রাজত্বের প্রথম কুড়ি বছরে ৮৮ জন মনসব দারকে এই বিশেষ অধিকার দেওয়া হয় । 


সাধারণভাবে সম্রাটের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তি মনসব দার হতে পারতেন ৷ কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে মনসবদারী প্রথা ছিল একটি বদ্ধ অভিজাত গোষ্ঠীর দ্বারা । যার দরজা সরকারের জন্য খোলা থাকত না । মুঘল রাজ পরিবার ও মনসবদারদের আত্মীয় পরিজন অগ্রাধিকার পেতেন ৷ ঔরঙ্গজেবের আমলে ৫৭৫ জন মনসবদারদের মধ্যে তার আত্মীয় ছিল ২৭২ জন ৷ গোষ্ঠী গত বিরোধ মনসবদারী ব্যবস্থার কার্যকারিতা শিথিল করেছিল ৷


মনসবদারি ব্যবস্থা ছিল এক কথায় একের মধ্যে অনেক ৷ ড. সরকারের ভাষায় এই ব্যবস্থার সাফল্যে বহুল অংশ সম্রাটের বিচক্ষণতা ও ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভরশীল ছিল ৷ সংগঠিত ব্যবস্থা হিসেবে মনসবদারী প্রথা যথেষ্ট কার্যকর হয়েছিল ৷ কাল ক্রমেও মনসবদারী ব্যবস্থাকে কূটনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রয়োগ করলে এই সংগঠনটি লক্ষ্য হয় ৷ নানা কারণে মনসবদারি সংগঠনের ত্রুটি ও দুর্বলতা গুলি শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে --


প্রথমত, সামরিক বিভাগের মধ্যে আমলাতান্তিকতা প্রাধান্য পেলে পরিস্থিতি জটিল হয় ৷ মুঘল রাষ্ট্র ছিল মূলত একটি যুদ্ধ রাষ্ট্র ৷ সেনাবাহিনী নির্ভরশীল ছিল মনসবদার এর ওপর কিন্তু মনসবদার হওয়ার ক্ষেত্রে সামরিক দক্ষতা প্রধান বিবেচ্য না হওয়ায় কালক্রমে সামরিক বাহিনী কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে ৷

দ্বিতীয়ত, মনসবদারি ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে প্রয়োগ করে শাহজাহান এবং ঔরঙ্গজেবের কার্যকারিতা নষ্ট করে ৷ এদের আমলে বহু রাজপুত ও মারাঠাদের মনসবদারি দেওয়া হয়েছিল যা আর্থিক বা সামরিক দিক থেকে ক্ষতিকর ছিল ৷


তৃতীয়ত, বহু মনসবদার নিজ নিজ জায়গীর এর প্রচ্ছন্ন স্বাধীন শাসন গড়ে তুলেছিল ৷ কেন্দ্রে দুর্বলতার মুহূর্তে এই ব্যবস্থা আঞ্চলিকতাদের জন্ম দেয় স্বাধীন হায়দ্রাবাদ ও অযোধ্যা রাজ্যের উত্থানকে অনুরূপ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায় ।


চতুর্থত, মনসবদারি ব্যবস্থার উপর পরোক্ষ বংশানুক্রমিক অধিকার কায়েম হলে দক্ষ অভিজাতন্ত্রের পদের লুপ্ত হয় ৷ অন্যদিকে বংশানুক্রমিক অভিজত তন্ত্র সম্রাটের অস্তিত্বকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করা হয় ।

এভাবে মনসবদারি প্রথা সিথিল বিবর্তন কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বে দুর্বলতা শেষ পর্যন্ত মনসবদারি ব্যবস্থাকে মৌলিক লক্ষ্য ও আদর্শ থেকে বিচ্যুতি করে ফেলে ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟