বিদেশি পর্যটক হিসেবে বার্নিয়ের বিবরণী কি নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য As a foreign tourist, is Bernier's account unquestionably acceptable?

বিদেশি পর্যটক হিসাবে বানিয়ে বিবরণ কি নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য

 বিদেশি পর্যটক হিসেবে বার্নিয়ের বিবরণী কি নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য

ইউরোপীয় পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন ফরাসি পর্যটক ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে তার ভ্রমণ কাহিনী থেকে ভারতের সমাজ,রাজনীতি,অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কে অনেক কথাই জানা যায় । প্রথমে ওরঙ্গজেবের অধীনে চিকিৎসকের চাকরি নেন কিছুকাল পরে মুঘল অভিজাত সভাসদ দানিসমন্দ খানের অধীনে চাকুরী নেন ৷ তার বর্ণনা থেকে ঔরঙ্গজেবের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও কুটবুদ্ধি চিত্রটি পরিষ্কার ফুটে উঠেছে ৷ তিনি তার বিবরণীতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার তুলনা করে বলেছেন,"ভারতকে যথার্থ রাষ্ট্র আখ্যা দেয়া যায় না , ইউরোপীয় রাষ্ট্র অনেক উন্নত ও আধুনিক এবং যুক্তিবাদী ৷ কিন্তু ভারত অনুন্নত যুক্তিহীন ও অজ্ঞ ৷ অজ্ঞতার একটি বড় কারণ হলো অশিক্ষা ও ধর্মীয় কুসংস্কার ৷" ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে লিখেছেন এশিয়াতে সমস্ত জমির মালিক হলেন সম্রাট এবং কারো কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই এর ফলে ফরাসি দেশের মতো মুঘল সাম্রাজ্যের উন্নতি হচ্ছে না এবং এই জন্যেও এর পতন অবসান ভাবি ৷



ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে লিখেছেন ভারতের কৃষকদের অবস্থা করুন, অধিকাংশ জমি জায়গীর হিসাবে আমির ওমরাহ ও মনসবদারদের মধ্যে বন্টন করা হতো ৷ তিনি লিখেছেন খাজনার দায়ে শাসকরা চাষীদের ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত,অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চাষিরা পালিয়ে গিয়ে শহরে আশ্রয় নেই ৷ ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে দিল্লি ও আগ্রা শহরে বর্ণনা অমূল্য ৷ দিল্লি যমুনা নদীর তীরে নির্মিত হয়, এই শহরের তিনদিকে ইটের প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত, নকশা দেখতে অর্ধচন্দ্রাকৃত ৷ এখানকার রাস্তা বাজার বাড়িঘর জল সরবরাহ,বাগান, সৌধ অধিবাসী প্রভৃতির সকল বিষয়ের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন  ৷ ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে হিন্দুদের ধর্ম দর্শন ও আচার ব্যবস্থার উল্লেখ করেছেন, ভারতের ফকির, দরবেশ,সাধু-সন্তদের কথাও বলেছেন ৷ বানিয়ে দিল্লিতে সূর্যগ্রহণের সময় হিন্দু আচার-আচরণ দেখে অবাক হয়েছিলেন ৷ তিনি মুঘল সম্রাট অভিজাতকের বিপুল সম্পদের উল্লেখ করেছেন ৷ আমির থেকে সাধারণ সৈনিক সকলেই বিভিন্ন ধরনের সোনা রুপার অলংকার পড়তো তা তিনি বর্ণনা করেছেন ৷



ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে লেখা থেকে বাংলার ফসল , খাদ্যাভাস,হস্তশিল্প ইত্যাদির নানা বিষয় সম্পর্কে জানা যায় ৷ তিনি আরাকানের জলদস্যুদের বাংলার উপস্থিতি ও নৃশংসতার উল্লেখ করেছেন ৷ তিনি কাশ্মীরের ভূ-সৌন্দর্যের এখানকার মানুষের বর্ণ ও দেহ সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন ৷ ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে মুঘল যুগে যে সমকালীন বর্ণনা দিয়েছেন তার মধ্যে খুব বেশি ভুল ছিল না বলে অনেকেই মনে করেন ৷ তিনি দিল্লি শহরের ধন-দৌলত,সৈন্যবাহিনী দেশের আয়তন, কৃষি, শিল্প,বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করেছেন ৷ এখানে ফ্রান্সের বুর্জোয়াদের মত কোন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অস্তিত্ব নেই বলে তিনি জানিয়েছেন ৷ তিনি লিখেছেন এখানে জমির ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না । তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে এই বক্তব্য মানেনি ৷ জমিতে জমিদার ও কৃষকদের অধিকার ছিল ৷ ফ্রাসোয়া বার্নিয়ে অভিজাতকের ভোগবিলাস, ভারতবর্ষের বেশিরভাগ মানুষের দরিদ্রের যে ছবি এঁকেছেন তা মূলত সত্য ৷ তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত মুঘল যুগের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟