শিবাজীর শাসনব্যবস্থা (The Administration of Shivaji) সম্পর্কে আলোচনা

শিবাজীর শাসনব্যবস্থা (The Administration of Shivaji) সম্পর্কে আলোচনা

 শিবাজীর শাসনব্যবস্থা (The Administration of Shivaji) সম্পর্কে আলোচনা 

শিবাজীর শাসনব্যবস্থা (The Administration of Shivaji) সম্পর্কে আলোচনা

শিবাজী কেবলমাত্র বিজেতা ও সাম্রাজ্য স্থাপনকারী ছিলেন না। তিনি শাসনব্যবস্থার সংগঠন করে তাঁর সাম্রাজ্যকে স্থায়ী করার ব্যবস্থা করেন। শিবাজী তাঁর শাসনব্যবস্থার কিছু কিছু নীতি বিজাপুরের বিখ্যাত মন্ত্রী মালিক অম্বরের শাসন সংস্কার থেকে গ্রহণ করেন বলে মনে করা হয়। ছত্রপতি বা রাজা ছিলেন সকল ক্ষমতার উৎস। তবে তিনি হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে প্রজা কল্যাণকেই তাঁর কর্তব্য বলে মনে করতেন। শিবাজী শাসন পরিচালনার জন্য আটজন মন্ত্রী বা অণ্ট প্রধানের উপর নির্ভর করতেন। এই আট মন্ত্রী আটটি দপ্তরের জন্য আলাদাভাবে ছত্রপতির কাছে দায়িত্ববন্ধ থাকতেন।


 (১) পেশবা ছিলেন পদমর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। তিনি শাসন পরিচালনা ও ছরপতির ছত্রপতি ও অষ্ট প্রধান প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতেন। (২) অমাত্য আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখতেন। (৩) ওয়াকিয়া নবীশ রাজার দৈহিক নিরাপত্তার দিক দেখতেন। (৪) সর্নাবিশ বা সচিব চিঠি-পত্র লেখার ব্যবস্থা করতেন। (৫) দবীর ছিলেন বিদেশী মন্ত্রী। (৬) সর-ই-নৌবং বা সেনাপতি ছিলেন সেনাধ্যক্ষ। (৭) পণ্ডিতরাও ধর্মীয় ও দাতব্য বিভাগের কাজ দেখতেন। (৮) ন্যায়াধীশ ছিলেন প্রধান বিচারক। এছাড়া মজুমদার, চিট্নীণ, সুবনীশ প্রভৃতি বিভিন্ন কর্মচারী ছিল। শিবাজী শাসনের সুবিধার জন্য রাজ্যকে কয়েকটি প্রান্ত বা জেলায় ভাগ করেন। জেলাগুলিকে নিয়ে ৩টি প্রদেশ গড়া হয়। প্রান্তগুলিকে তরফ বা পরগণায় ভাগ করা হয়।


শিবাজী তাঁর স্বরাজ্যে জমি জরিপ করে ফসলের ৩০-৪০ ভাগ ভূমিকর ধার্য' করেন। তিনি কৃষির উন্নতির জন্য চেষ্টা করেন। তিনি মিরাজদার নামক বংশানুক্রমিক জমিদার শ্রেণীকে দমিয়ে রাখেন। এছাড়া তিনি প্রতিবেশী রাজ্য থেকে চৌথ বা ফসলের ভাগ ও সরদেশমুখী বা ফসলের ১০ ভাগ আদায় করতেন।



শিবাজী তাঁর অশ্বারোহী বাহিনীকে বাগীর বা নিয়মিত সেনা ও শিলাদার বা অনিয়মিত সেনা এই দুই ভাগে ভাগ করেন। বাগীর বা পাগাদের সংখ্যা ছিল ৪০-৪৫ হাজার। এদের তিনি নিয়মিত বেতন দিতেন, ঘোড়া ও অস্ত্র দিতেন। শিলাদারদের ঘোড়া ও অস্ত্র নিজেদের যোগাড় করতে হত। যুদ্ধের সময় শিলাদারদের বেতন দেওয়া হত। এছাড়া শিবাজীর এক লক্ষ পদাতিক সেনা, ১২৬০টি হাতী, ২৪০-২৮০টি দুর্গ, ২০০টি রণতরী ছিল। সেনা সংগঠনের জন্য ২৫ জন সেনার উপর এক হাবিলদার, ৫ হাবিলদারের উপর 326 এক জামালদার: ১০ জামালদারের উপর এক হাজারি ৫ হাজারির উপর এক ৫ হাজারি ও সবার উপরে ছিল সর্ণবৎ।


শিবাজীর শাসনব্যবস্থার প্রধান ত্রুটি ছিল যে, তিনি জাগীর প্রথা লোপ করলেও, তা সম্পূর্ণ হয় না। ডঃ ঈশ্বরীপ্রসাদের মতে, শিবাজীর শাসনব্যবস্থা তাঁর ব্যক্তিগত যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর উপযুক্ত শাসকের অভাবে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফ্লায়ার নামক পর্যটিক শিবাজীর রাজস্ব ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছেন যে. এই ব্যবস্থায় প্রজারা শোষিত হত। রাজস্ব ব্যবস্থার সমালোচনা কর্মচারীরা প্রজাদের উপর উৎপীড়ন চালাত। শিবাজীর চৌথ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ক্ষতি-কারক। স্যার জে. এন. সরকারের মতে, চৌথ ছিল মারাঠা আক্রমণ থেকে এক ধরণের "নিষ্কৃতি কর।" এই কর আদায়ের ফলে মারাঠাদের লুঠেরা ও উৎপীড়নকারী বলে বদনাম হয়। স্মিথের মতে, চৌথ আদায়ের ফলে শিবাজীর রাষ্ট্র "দস্যরাষ্ট্র" রূপে পরিচিত হয়। শিবাজী জাতিভেদ প্রথা ও ব্রাহ্মণদের গোঁড়ামি দূরে করে মহারাষ্ট্রে প্রকৃত "নেশন" বা জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করতে পারেন নাই। তিনি বাণিজ্য ও শিল্প গঠন করে মহারাষ্ট্রের প্রকৃত আর্থিক উন্নতির জন্য কোন চেষ্টা করেন নাই।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ শিবাজীর শাসনব্যবস্থা (The Administration of Shivaji) সম্পর্কে আলোচনা এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟