সাইমন কমিশন কি

সাইমন কমিশন

সাইমন কমিশন কি

Simon Commission
১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের প্রত্যাহার এবং ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের পর রাজনৈতিক দলাদলি ও সাম্প্রদায়িক বিরোধ প্রভৃতি কারণে ভারতীয় রাজনীতিতে যে হতাশা ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এই সময় ভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে দুটি প্রধান গতিধারা লক্ষ্য করা যায়, যথা-সাংবিধানিক প্রশ্নে ভারতীয় নেতাদের নূতন ধ্যান-ধারণা এবং অন্যদিকে সংগ্রামী শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার ও যুবসমাজে রাজনৈতিক তৎপরতা।

মন্টেণ্ড-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তিত হলেও ভারতীয় নেতাদের কাছে তা ছিল অপ্রতুল ও হতাশাব্যঞ্জক। ইতিমধ্যে স্বরাজ্য দলের নেতা মতিলাল নেহরু সাংবিধানিক  সংস্কারের জন্য একটি জাতীয় দাবিপত্র পেশ করেন (১৯২৬ খ্রীঃ)। প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য ভারতীয়দের মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করে বড়লাট লর্ড আরউইন একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করার কথা ঘোষণা করেন। সেই অনুসারে ব্রিটিশ সরকার প্রখ্যাত উদারনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট সাংবিধানিক আইন বিশারদ স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে

এক কমিশন গঠন করেন। কমিশনের অন্যান্য সদস্য ছিলেন ভাইকাউন্ট বার্নহ্যাম, লর্ড স্ট্র্যাথকোনা, স্টিফেন ওয়েলস্, এডোয়ার্ড ক্যারোগান, মেজর এল্লী ও কর্নেল লেনফক্স। ব্রিটিশ সরকার ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে এই কমিশনকে ভারতে পাঠান। এই কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দের সংস্কার আইন কতদূর কার্যকর হয়েছে তা পর্যালোচনা করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করা। কোন ভারতীয়কে এই কমিশনে নেওয়া হয়নি। কোন ভারতীয়কে না নেওয়ার যুক্তি হিসাবে সরকার পক্ষ থেকে বলা হয় যে একমাত্র পার্লামেন্টের সদস্যরাই পার্লামেন্টের কাছে সরকারী রিপোর্ট পেশ করার অধিকারী।

সাইমন-কমিশন নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হলে এবং তাতে কোন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ না করা হলে ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস ছাড়াও মুসলিম লীগ, লিবারেল ফেডারেশন ও হিন্দু মহাসভা প্রভৃতি
রাজনৈতিক সংস্থা কমিশনের গঠনতন্ত্রের নিন্দা করে।


এই সময় ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছিল। কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির ফলে শ্রমিকশ্রেণীর অবস্থাও সঙ্গীন হয়ে ওঠে। এর ফলশ্রুতি হিসাবে শ্রমিকশ্রেণী সংগ্রামী হয়ে ওঠে এবং জঙ্গী শ্রমিক আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ করে শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে সাম্যবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিও সাইমন-কমিশনের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সমেত অন্যান্য রাজনৈতিক দল সাইমন-কমিশনকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে 'বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯২৮ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারী সাইমন-কমিশন বোম্বাই-এ এসে পৌঁছালে দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হয়। "সাইমন-কমিশন ফিরে যাও"-ধ্বনি সর্বত্র ওঠে। কমিশনকে কালো পতাকা দেখান হয়। সাইমন-কমিশনের বিরুদ্ধে সব স্তরের মানুষের উদ্দীপনা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং আন্দোলন সফলও হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এর পূর্ণ সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়। সে সময় তরুণ কংগ্রেস নেতা সুভাষচন্দ্র বসু মন্তব্য করেছিলেন যে, বিক্ষোভ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলন খুবই সময়োপযোগী হত। কিন্তু তা হয়নি। কারণ সে সময় কংগ্রেসী নেতাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্যের যথেষ্ট অভাব ছিল। যাইহোক এই রকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যেই সাইমন-কমিশন তাঁদের তদন্ত সম্পন্ন করেন এবং ১৯৩০ সালে কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইন (Government of India Act-1935) প্রণয়ন করা হয় ।


🔹প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলিঃ

সাইমন কমিশন কবে গঠিত হয়?

১৯২৭ সালে।

সাইমন কমিশন কবে ভারতে আসে?

১৯২৮ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি।

সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ক্ষোভের কারণ কি ছিল?

সাইমন কমিশনের সকল সদস্য ব্রিটিশ ছিলেন, এতে কোনো ভারতীয় প্রতিনিধিত্ব ছিল না, যা ভারতীয়দের গভীর ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সাইমন কমিশন কত সালে গঠিত হয়?

১৯২৭ সালে।

সাইমন কমিশন কবে ভারতে এসেছিল?

১৯২৮ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি।

সাইমন কমিশন কবে ভারতে আসেন?

১৯২৮ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি।

সাইমন কমিশনের উদ্দেশ্য কি ছিল?

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সাংবিধানিক অবস্থা মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সুপারিশ করা।

সাইমন কমিশনের সদস্য সংখ্যা কত ছিল?

৭ জন।

‘সাইমন গো ব্যাক’ উক্তিটি কার?

ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের দেওয়া একটি স্লোগান।

সাইমন কমিশন কে গঠন করেন?

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি বল্ডউইন।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সাইমন কমিশন কি এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟