সংসদীয় ব্যবস্থার উত্থানে নেহেরুর ভূমিকা আলোচনা কর

সংসদীয় ব্যবস্থার উত্থানে নেহেরুর ভূমিকা আলোচনা কর অথবা, সংসদীয় ব্যবস্থার উত্থানের নেহেরুর ভূমিকা পর্যালোচনা কর

সংসদীয় ব্যবস্থার উত্থানে নেহেরুর ভূমিকা আলোচনা কর অথবা, সংসদীয় ব্যবস্থার উত্থানের নেহেরুর ভূমিকা পর্যালোচনা কর

পৃথিবীর আদি সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম ক্ষেত্র হল ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আধুনিক সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম পৃষ্ঠ স্থান হল ভারত বর্ষ ৷ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জনবহুল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যার পথ পরিক্রমণ শুরু হয় ১৯৫০ সালে ২৬ শে জানুয়ারি ৷ জহরলাল নেহেরু বলেন,"I must confess that i am  a socialist and a republican and i am no believer in kings and princes" ভারতবর্ষের সংসদীয় ব্যবস্থার বিকাশ সাধনে যার নাম সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য তিনি হল স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু নেহেরু ৷ নেহেরু যথার্থই বুঝিয়েছিলেন ভারত বর্ষ হল একাধিক জাতি, ধর্ম,বর্ণ, ভাষাবিত্তিক মানুষের রাষ্ট্র তাই সংসদীয় ব্যবস্থা ব্যতীত অপর কোন বিকল্প নেই ৷


স্বাধীনতা প্রাপ্তির কিছু পূর্ব হতেই ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতি থেকে এই মোট 389 জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয় ৷ প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৪৬-এ ৯ ডিসেম্বর গণপরিষদে উল্লেখযোগ্য সদস্যরা ছিলেন জহরলাল নেহেরু,আশরাফ আলী, হুমায়ুন কোভিদ,গোপাল স্বামী সারাঙ্গার, ডি স্যার গ্যাটগিল, কে.এম.মুন্সী প্রমুখ ৷ স্বাধীন ভারতের সংবিধান ভারতকে একটি সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন সকলের জন্য সমবিচার, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা সকলের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে গণপরিষদের সদস্যরা প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন ৷


ভারতের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি এবং স্বাধীনতার অধিকার, সাম্যের অধিকার, সংবিধানের মৌলিক অধিকার, সন্নিবেশষ্ট করা হয়েছে ৷ ১৪ থেকে ১৮ নম্বর ধারায় জাতি,ধর্ম,বর্ণ,স্ত্রী,পুরুষ নির্বিশেষ সকলের জন্য সাম্য এবং ১৯ থেকে ২২ নম্বর ধারায় স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । নেহেরু রিপোর্টে বলা হয় আমাদের প্রথম প্রয়াস হবে এমন ভাবে আমাদের মৌলিক অধিকার গুলিকে প্রস্তুত করা যাতে কোন পরিস্থিতিতেই তা প্রত্যাহার না করা যায় ৷ মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি নির্দেশমূলক নীতির অবস্থান রয়েছে । 36 থেকে 51 নম্বর ধারায় যাতে কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার,  অপুষ্টিকর হাত থেকে বাঁচার অধিকার গুলিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ।


সংবিধানের ৭ নম্বর তপশিল ভুক্ত তিনটি তালিকায় উল্লেখ বিশেষ তাতপর্যপূর্ণ ৷ ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় তালিকার 97 টি রাজ্য তালিকা ৬৬ টি যুগ্ম তালিকা ৪৭ টি বিষয়কে অঙ্গীভূত করা হয়েছে ৷ এছাড়াও রয়েছে অতিরিক্ত তালিকা ৷ তাই বলা যায় ভারতের বিভিন্ন তালিকার মাধ্যমে ক্ষমতার বিভাজনের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে ৷ সংবিধানের ৩৫২ থেকে ৩৬০ ধারায় জরুরি অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ৷ মূলত বর্হি আক্রমণের সময় বা সশস্ত্র বিদ্রোহের সময় এই দেশে নিরাপত্তার জন্য এই জরুরি অবস্থার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৷ যে সময় নাগরিক অধিকার খর্ব হয় তবে ভারতের সংবিধানের নিম্নতম মূলক আটক আইন ৷ ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি দুষ্ঠ ক্ষত ৷ ভারতের সংবিধানের অন্তর্গত"Armed force special power Act" অর্থাৎ সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আদর্শকে গণতন্ত্রের সামনে এক সীমাবদ্ধতা ৷


জহরলাল নেহেরু নেতৃত্বে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একাধিক আবর্তন বিবর্তন ঘটেছে  ৷ কিন্তু ভারতবর্ষে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নেহেরুর অবদান অনস্বীকার্য ৷ যদিও সীমাবদ্ধতা গুলিতে উপেক্ষা করার মতো না কারণ সার্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত হলেও সার্বজনীন শিক্ষার উপর চরম গুরুত্ব আরোপ করা হয়নি ৷ যদিও বিশেষ তাওডের মতে ,"নেহেরুকে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এগোতে হয়েছিলেন কারণ স্বাধীনতার পর নেহেরুর কাছে সর্বাপেক্ষা চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের অখন্ডতা রক্ষা করা,এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঠান্ডা লড়াই,চীনের উত্থান, দেশভাগ দেশের মধ্যে বিপুল অনাহার ও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য চাহিদ, দাঙ্গা ভাষাগত দ্বন্দ্ব এই সমস্ত কিছু সঙ্গে নিয়ে সংসদীয় ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটতে হয়েছিল


কোন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন সেই সময়ের পরিপেক্ষিতে করার প্রয়োজন ৷ যে অশান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে নেহেরু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তখন ভারত এই সাথে পৃথিবীর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পৃথিবীর জটিলতার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল ৷ পাশাপাশি আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক অভ্যন্তরের সংকট এই অতি জটিল আবর্তের মধ্যেও নেহেরু বহু অংশে সফল হয়েছিলেন , যার প্রমাণ প্রতিবেশী পাকিস্তানের গণতন্ত্র যখন আজও নাবালক অবস্থায় চিনে আজও এক দলীয় শাসন,মায়ানমারের সামরিক শাসন,বাংলাদেশে মৌলবাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের সংঘাত তখন ভারতীয় গণতন্ত্র সমৃদ্ধি ও পূর্ণতা লাভ করে বিশ্ব গণতন্ত্রের ইতিহাসে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে । এই সাফল্যের নৌপথ্য কারিগর হলেন পন্ডিত জহরলাল নেহেরু ৷ প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও সাংসদ হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন,"তৎকালীন আন্তর্জাতিক কথা মাথায় রাখলে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কৃতিত্বকে অস্বীকার করা যায় না ।"
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সংসদীয় ব্যবস্থার উত্থানে নেহেরুর ভূমিকা আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟