শৈলচিত্রকলা বা Rock Art কী? কয়েকটি প্রাচীন শৈলচিত্রকলার বিবরণ দাও।
প্রাচীন ভারতীয়, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে শৈলচিত্রকলা বা Rock Art-এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পুরাতাত্ত্বিক সংজ্ঞা অনুসারে যে-কোনো শিলার ওপর খোদাই করা বা অঙ্কন করাকে বলা হয় শৈলচিত্রকলা। তবে শব্দটি বিশেষ করে প্রাগৈতিহাসিক অথবা সমসাময়িক প্রাক-আক্ষরিক সমাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। শিল্প ও শিল্পকলা প্রাচীন পৃথিবী থেকে নতুন পৃথিবী সর্বত্র ব্যাপকভাবে বিস্তৃত রয়েছে। এই শিলা ও শিল্পকলা থেকে তৎকালীন মানুষের মানসিকতা বিষয়ে অবগত হওয়া যায় যে, তারা কোন্ ধরনের রুচিসম্পন্ন মানুষ ছিল এবং তাদের প্রকৃতি ও প্রেম সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যায়।
শৈলচিত্রকলাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল লালজল শৈলচিত্র যেটির অবস্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি জনপদটি থেকে ২৩-২৪ কিমি উত্তর-পশ্চিমে লালজল গ্রামটির মধ্যে অবস্থিত। গ্রাম ছিল পাহাড় দিয়ে ঘেরা। সমতলভূমি থেকে ২৫০-৩০০ মিটার উঁচুতে একটি গুহা রয়েছে। অনুসন্ধানে আবিষ্কৃত সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য নিদর্শনটি হল দেওয়াল গাত্রে অঙ্কিত একটি হরিণ বা গোরু জাতীয় চতুষ্পদ প্রাণীর পার্শ্বচিত্র। এই চিত্রে লাল, সবুজ ও ক্রিম রং-ব্যবহার করা হয়েছে। শিল্পচিত্রটি ক্ষুদ্রাশ্মীয় থেকে নবাশ্মীয় যুগের মধ্যবর্তী সময়ে অঙ্কিত হয়েছিল।
অপর একটি শৈলচিত্র হল ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ শৈলচিত্র, এখানে একাধিক প্রাচীন গুহাচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখনকার ইস্কো গুহাচিত্রটি প্রাচীন গুহাচিত্রের মধ্যে বিখ্যাত। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ গুহাচিত্র হল টন্ডোয়া ব্লকের টিটাঙ্গি গ্রামে যেখানে ডাইনোসরের শৈলচিত্র দেখা যায়। পুরাতাত্ত্বিকরা বলছেন এই চিত্রটি ১০ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাথর কুঁদে আঁকা। তবে এই নিয়ে বিতর্ক আছে। অন্য আর একটি শৈলচিত্র যে কাশ্মীরের বুরজাহোমে পাওয়া যায় সেখানে একটি প্রস্তর খণ্ডে হরিণ শিকারের একটি দৃশ্য আছে। হরিণটিকে সামনের দিক থেকে একজন ব্যক্তি তিরবিদ্ধ করছে আর অন্যা একটি ব্যক্তি তাকে বল্লম দিয়ে আঘাত করছে। ছবিটির তারিখ খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্ ছবির ওপর দিকে আছে সূর্য ও কুকুরের ছবি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অসাধারণ সম্ভার রয়েছে পাহাড়ি শহর পাঁচমারীতে। পাঁচটি পান্ডব গুহা থেকেই সাঁচী শহরটির নামকরণ হয়েছে পাঁচমারী। এখানে একটি গুহায় নৃত্যরত মানুষের ছবি পাওয়া যায়।
সুতরাং বলা যায় যে, প্রাচীনকালের আদিম মানুষদের বসবাসের স্থান গুহাগুলিয়ে যে চিত্রগুলি পাওয়া যায় তা থেকে তৎকালীন আদিম মানুষদের অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে কিছুটা আভাষ পাওয়া যেতে পারে। আজ তার সঙ্গে সেইসব আদিম মানুষদে শিল্পসৌন্দর্যে সম্পন্ন মানসিকতার একটি বাস্তবিক চিত্র অঙ্কন করা সম্ভব হবে।