অশোকের ধর্মের প্রকৃতি নির্ণয় কর ও বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা তা কতটা প্রবাহিত হয়েছিল

অশোকের ধর্মের প্রকৃতি নির্ণয় কর ও বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা তা কতটা প্রবাহিত হয়েছিল

 অশোকের ধর্মের প্রকৃতি নির্ণয় কর ও বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা তা কতটা প্রবাহিত হয়েছিল বা,অশোকের 'ধম্মের' প্রকৃতি নির্ণয় করো। বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা তা কতটা প্রভাবিত হয়েছিল।

অশোকের ধর্মের প্রকৃতি নির্ণয় কর ও বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা তা কতটা প্রবাহিত হয়েছিল


অশোকের ধর্মের প্রকৃতি নির্ণয় কর ও বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা তা কতটা প্রবাহিত হয়েছিল 


পিতা বিম্বিসারের মৃত্যুরপর ২৭৩ খ্রিস্টাব্দে অশোক মৌর্য সিংহাসন আরোহন করেন ৷ সিংহাসন আরোহন কালে তিনি ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৷ কলিঙ্গ যুদ্ধে মর্মান্তিক ও হৃদয়ে বিরহ ঘটনা অশোক অনুতাপে দগ্ধ হয়ে যুদ্ধের পথ পরিত্যাগ করেন এবং অহিংসা মন্ত্রের সাধক হন ৷ তিনি উপগুপ্ত নামের জনক বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছে বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করেন ৷ তিনি যুদ্ধের পরিবর্তে ধর্ম বিজয়ের আদর্শ গ্রহণ করতে শুরু করেন ৷  তিনি বৈরিখোষকে ধর্মঘোষে রূপান্তর করেন ৷ বিহার যাত্রা ত্যাগ করে ধর্মযাত্রা শুরু করেন ৷


ধর্ম মা ধম্ম বলতে সাধারণত বোঝায় মানুষের আচার-আচরণ ও নীতি-নিষ্ট জীবন যাপনের নিয়ম-কানুন ৷ পালি ভাষায় ধর্মকে ধম্ম বলা হয় ৷ অশোকের ধর্ম কথাটির নৈতিক নিয়ম-কানুনের সমষ্টিকে বোঝাতে চেয়েছেন ৷ এই নৈতিক নিয়মকানুনের অন্তর্গত ছিল পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা, গুরুনাম অপচিত, গুরুজনকে শ্রদ্ধা করা ,প্রাণী হত্যা না করা ,অল্প ব্যয় ,অল্প সঞ্চয় ,বয়স্ক ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা ইত্যাদি ৷ অশোক তার ধর্মের মাধ্যমে বহু কর্ম মতো ও পথের অনুগামী এবং মানুষের নৈতিক মনুষত্ব বাড়াতে চেয়েছিলেন ৷ এজন্য তিনি অকালীন সমস্ত ধর্মমতের অন্তর্গত নৈতিক নিয়ম-কানুন মেনে নিয়ে তার ধর্মমত গড়ে তোলেন ৷



অন্যায় হতে নিবৃত্ত থাকা এবং মানুষের কল্যাণ সাধন করায় তার মতে "ধম্ম' ৷ জনসাধারণের পক্ষে কোন পথে চলার ঠিক হবে অশোক তার ধম্মের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছিলেন ৷ অশোকের প্রচলিত ধম্ম ছিল আলো উদ্ধার ও মানবধর্মী ৷ তিনি ধম্মকে দেখাতে চেয়েছিলেন একটি সামাজিক দায়িত্ববোধের মনোভাব নিয়ে ৷ তাই ডক্টর রোমিলা থাপার বলেছেন "  Thamma was Ashaka's won invention "     ৷ অশোক শিলালেখ ও স্তম্ভলেক গুলিতে ধম্মর প্রচার করা হতো ৷ যেটি তিনি সৃষ্টি করেন মৌর্য সাম্রাজ্যের বিশেষ পটভূমিকায় ৷



অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনের যেসব সমস্যা দেখা গিয়েছিল সেগুলি সাধারণের জন্য তাকে এই ধম্ম প্রচার করতে হয়েছিল ৷  তাছাড়া বিভিন্ন গতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় নিয়ে গড়ে ওঠা এই সাম্রাজ্যের ঐক্যবদ্ধ সুদীর্ঘ ছিল না ৷ তাই তিনি মনে করেছিলেন সর্বস্তরের প্রজাদের ধর্মের নামে ঐক্য করা যাবে ৷ তিনি আশা করেছিলেন জাতি- ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষ সকলে এই নীতি অনুসরণ করতে পারে । এজন্য কাউকে নিজের ধর্মকে ত্যাগ করতে হবে না ৷ রোমেলা থাপার এর মধ্যেই মুঘল সম্রাট আকবর তার দ্বীন-ই-ইলাহী এর মাধ্যমে যে চেষ্টা চালিয়েছিলেন তা অনেকটাই অশোকের ধর্মের অনুকরণে ‌৷ 


সর্বজনীনতা হল অশোকের ধর্মের মূলনীতি ৷ পারিবারিক জীবনই ছিল তার ধর্মের মূল কথা ৷ অশোক তার দ্বিতীয় লিপির ব্যাখা প্রসঙ্গে বলেন,"পাপ যতই কম করা যায় ততই ভালো" । তিনি সত্যবাদিতা, পবিত্রতা,সংযম প্রভৃত্তি অনুশীলনের কথা বলেছেন ৷ অশোকের ধর্মের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল অহিংসা ৷  তিনি পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও বিভিন্ন ধর্ম বিলম্বিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সংযোগ প্রভৃতি বৃদ্ধির পক্ষপাতী ছিলেন ৷ প্রথম স্তম্ভলেখতে তিনি বলেন যে, "ধর্মের গণ্য তা থেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা" ৷ দ্বিতীয় স্তম্ভ লেখতে বলেন,"ধর্মই হল সর্ব কর্মের আধিক্য এবং তৃতীয় স্তম্ভ লেখতে বলেন,"অসৎ কর্ম থেকে নিবৃত থাকা"। অশোক তার ধর্মকে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন ৷



অশোকের ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম কতটা একে অপরের পরিপূরক ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে বিতর্ক আছে ৷ উইলসন সহ একাধিক ঐতিহাসিকগণ বলেছেন অশোকের ধর্মে বৌদ্ধ ধর্ম ছিল কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে ৷ ডঃ ফিল্ট অশোকের "ধম্মকে" ধর্ম এবং ন্যয়নিষ্ঠ রাজা গনের কর্তব্য কর্মের নীতি সমাবেশ বলে মনে করেন ৷ ডঃ বেণীমাধব বড়ুয়া, অধ্যাপক ভান্ডারকর রায় প্রমুখ ঐতিহাসিক অশোকের ধর্মকে বৌদ্ধ ধর্ম বলে স্বীকার করেছেন ৷ অন্যদিকে অধ্যাপক টমাস অশোকের ধর্মকে বৌদ্ধ ধর্ম বলে মনে করেন ৷ ভিনসেন্ট স্মিথ এর মতে অশোকের ধর্ম ভারতীয় সকল ধর্মের মূলনীতির সমাবেশ মাত্র ৷ ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন অশোকের ধর্ম বলে যাকে প্রচার করা হচ্ছে তাকে ধর্ম না বলে নৈতিক অনুশাসন বলাই যুক্তিযোগ্য ৷



যাইহোক ব্যক্তিগতভাবে অশোক বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা ছিলেন ৷ তিনি কখনোই অন্য ধর্মমত বর্জন বা আগ্রহ করতেন না ৷ অবশ্যই রমিলা থাপার ধর্মনীতি প্রসঙ্গে বলেছেন,"মৌর্য শাসন ব্যবসা ছিল ঘোরতর কেন্দ্রীয় প্রবণতা এবং কেন্দ্রে প্রবণতার বিরুদ্ধে তার বিশাল সাম্রাজ্যের বিচ্ছিন্নভাবেদের উদ্ভব হতে শুরু করে ৷" এই বিচ্ছিন্ন অবাধের ভিত্তি থেকে মুক্তি লাভ করতে নতুন নীতি গ্রহণ করেন ৷ তবে কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে তার ধম্ম সাফল্য লাভ করেনি ৷ কিন্তু অশোক তার ত্রয়োদশ অনুশাসনে দাবি করেছেন তার ধম্ম সাফল্য লাভ করেছিল এবং এর প্রভাবে সামাজিক কুপ্রথা ও বিভেদ দূর হয়েছিল ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟