পৃথিবীর ইতিহাসে সংগ্রহশালা গড়ে ওঠার ইতিহাস বা উৎপত্তির বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা কর

পৃথিবীর ইতিহাসে সংগ্রহশালা গড়ে ওঠার ইতিহাস বা উৎপত্তির বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা কর

 পৃথিবীর ইতিহাসে সংগ্রহশালা গড়ে ওঠার ইতিহাস বা উৎপত্তির বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা কর

পৃথিবীর ইতিহাসে সংগ্রহশালা গড়ে ওঠার ইতিহাস বা উৎপত্তির বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা কর

মিউজিয়াম হলো মিউজ দেবীর মন্দির ৷ এই দেবীরা এক একজন বিভিন্ন বিষয়ক যেমন সঙ্গীত, কাব্য নাটক, জ্যোতিষবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অধিষ্ঠিত দেবী এবং এক একজন এক একজনের আরাধনার মাধ্যমে মানুষেরা বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান আরোহণের চেষ্টা করত ৷ শুধুমাত্র এই দেব দেবীদের পুজো করতো তাই নয়, মিউজ দেবীর মন্দির কে কেন্দ্র করে গ্রন্থাগার, মান-মন্দির,চিত্রশালা প্রভৃতি গড়ে উঠেছিল যেখানে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার অনুশীলন ও চর্চা হতো । পরবর্তীকালে শুধু মন্দিরেই নয় প্রাসাদে অনেক গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল বর্তমানে মিউজিয়াম বা সংগ্রহ শালার রূপ নিয়েছে ৷

শুধুমাত্র গ্রিস বা ইউরোপের দেশগুলিতেই যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বা মিউজিয়ামের পত্তন হতে দেখা গিয়েছিল তা নয় ৷ আমাদের ভারতবর্ষেও এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় । আমাদের দেশের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন নালন্দা বিক্রমশিলা প্রভৃতি বিহার এবং মহাবিহার গুলি নামে না হলেও মিউজিয়ামের মতই কাজকর্মে লিপ্ত ছিল ৷ শুধুমাত্র উত্তর ভারতে নয়, দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলিতে ধর্মীয় আচরণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পঠন পাঠন,নৃত্য সংগীত,পরিথির চর্চা করা হতো । তাছাড়াও বৌদ্ধ বিহার গুলিতেও ধর্মচর্চার সাথে সাথে দর্শন চর্চাও করা হতো ।



পৃথিবীতে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠিত হয় ২৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মিশরের আলেকজান্দিয়া নামক স্থানে ৷ এর প্রতিষ্ঠা করেন টলেমি সবেটাস এবং এর মধ্যে একটি বিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন ৷ প্রথম টলেমির পুত্র ফিলাডেলফাস তৎকালীন সময়ে এই গ্রন্থাগারে প্রায় সাত লক্ষের মতো বিভিন্ন বিষয়ের পুঁথি সংগৃহীত হয়েছিল ৷ পরবর্তীকালে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে রোমের গৃহযুদ্ধের ফলে আলেকজান্ডার এই মিউজিয়াম টি ধ্বংস হয়ে যায় । যদিও এর আগেও ব্যাবিলনের রাজধানীতে একটি সংগ্রহশালা হদিস বা খোঁজ পাওয়া যায় । যেটি এনিগাল্ডিনানা (৫৩০B.C.) সংগ্রহশালা নামে পরিচিত. | এটি ছিল একটি আজব কক্ষ বা অনুসন্ধিৎসা কক্ষ যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত শিল্প বস্তু সংরক্ষণ করে রাখা হতো ।


প্রারম্ভিক পর্বে ধর্মীয় কেন্দ্রে সংগ্রহশালা গুলি গড়ে উঠলেও পরে দেখা গেছে ধীরে ধীরে সেগুলি জ্ঞান চর্চা ও চিত্ত বিনোদনের কাজে লাগতে শুরু করে ৷ জ্ঞানচর্চার পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহশালা সমসংস্থান প্যারা মিউজিয়ামের জন্ম হতে দেখা যায় ৷ শখের সংগ্রহ বা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের দেখার জন্য উন্মুক্ত করার ভাবনা আসতে থাকে ৷ খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মিশরের আলেকজান্দিয়াই যে সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার বিভিন্ন বস্তু গ্রন্থাগারের পুস্তক প্রভৃতি জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ যেমন ব্যবহার করতেন তেমনি রাজকীয় শোভযাত্রা সময় সাধারণ জনগণের সেইসব দূরমূল্য বস্তু সম্ভার দেখার সুযোগ পেত ৷


ষোড়শ শতকের প্রারম্বরিক পর্বে গোড়ায় রোমে ভ্যাটিক্যান চার্চকে কেন্দ্র করে যে সংগ্রহশালা গড়ে ওঠা ধারা শুরু হয় সেটি গত শতাব্দি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল ৷ এই সংগ্রহশালা একত্রে "কনটিপিক্যল মিউজিয়াম অ্যান্ড গ্যালারিজ" নামে পরিচিত ৷ ভ্যাটিকান মিউজিয়াম পৃথিবীর দ্বিতীয় পুরানো মিউজিয়াম নামেও স্বীকৃতি পায় । যেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস ৷ সংগ্রহশালার ইতিহাসে ১৬৮৩ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর এই সময় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় "আসমোলিয়ান মিউজিয়াম" গড়ে তোলেন এটি শুধুমাত্র প্রাচীন বিশ্বের বিদ্যালয় সংগ্রহশালায় নয় জনসাধারণের জন্য প্রথম উন্মুক্ত সংগ্রহশালা বলা যেতে পারে ৷ এই সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে আধুনিক সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠার গোড়াপত্তন ঘটতে থাকে ।


বিশ্ব সংগ্রহশালার ইতিহাসে ১৭৫৩ আর একটি স্মরণীয় বছর ৷ এই বছরের ইংল্যান্ডের আইনসভায় আইন পাস করে একটি সাধারণ সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠিত করা হয় । যার নাম ব্রিটিশ মিউজিয়াম । এটি পৃথিবীর বিখ্যাত সংগ্রহশালার মধ্যে একটি তবে ইতিপূর্বে ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন টাওয়ারে অবস্থিত হয় ৷ এছাড়াও ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে ইন্দোনেশিয়ার এমবনে একটি বোটানিক্যাল মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ আর ১৯১৭ সালের রাশিয়ায় সেন্ট পিটারস্ বার্গে কুনস্ট ক্যামেরা সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠিত হয় । এইভাবে ফ্রান্সের লুভার মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ যেটি পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান এখানে প্রায় ৩৮০০০ বস্তু রয়েছে এবং লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বিখ্যাত ছবি "মোনালিসা" এখানে সংরক্ষিত আছে ৷ ১৭৬৪ সালে রাশিয়ার সেন্ট হার্মিটেজ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ যেটি পৃথিবীর বৃহত্তম সংগ্রহশালা যেখানে তিন লক্ষ বস্তু আছে যার তিনভাগের একভাগ মুদ্রা ৷


উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় ব্রিটিশ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হবার পর থাকতে সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠার নবজোয়ার সূচিত হয় । এরপর থেকে ইউরোপের একাধিক রাষ্ট্র যেমন ফ্রান্স,রাশিয়া, নেদারল্যান্ড, ইতালি,জার্মানি এবং ইউরোপের বাইরে আমেরিকা ওয়াশিংটন,শিকাগো ফিল্ডেন,ক্যালিফোর্নিয়া,নিউ ইয়র্ক,লস এঞ্জেলস তে সংগ্রহশালা গড়ে উঠতে থাকে  ৷ ফলত ইউরোপ থেকে সংগ্রহশালা নির্মাণের ধারা ক্রমে আমেরিকা, আফ্রিকা,এশিয়া প্রভৃতি মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ৷ এশিয়া মহাদেশের ভারতবর্ষ মিউজিয়ামের ইতিহাসে গৌরব উজ্জ্বল স্থান দখল করে ৷ আছে অন্যদিকে আফ্রিকা মহাদেশের মিশর একইভাবে অগ্রগণ্য ৷


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟