শাহজাহানের আমলে কলা ও স্থাপত্য শিল্পের পরিচয় দাও বা, মুঘল স্থাপত্য শিল্পে শাহজাহানের অবদান কী ছিল।
![]() |
শাহজাহানের আমলে কলা ও স্থাপত্য শিল্পের পরিচয় দাও
শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পে উৎকৃষ্ট সৌধের নিদর্শন গুলি আগ্রা দিল্লি লাহোর দুর্গের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে রয়েছে ৷ বিশেষ করে দিল্লিতে দেওয়ান-ই-খাস, মতি মসজিদ, জামা মসজিদ ,শিস মহল, তাজমহল ইত্যাদি শাহজাহানের অনবদ্য শিল্প সৃষ্টির নিদর্শন ৷ আগ্রা দুর্গে অনুরূপভাবে নির্মিত তার জীবনের প্রথম দিকে সৌধে গুলির স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন দিল্লিতে দেওয়ান-ই-আম এ লাল বেলে পাথর ব্যবহৃত হয়েছে । এর পিছনে তৈরি হয়েছে শিল্প সুষমা মন্ডিত দেওয়ান-ই- খাস ৷ তবে শিল্প সুষুমার দিক থেকে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে মতি মসজিদ, দিওয়ান-ই -আমের উত্তর দিকে অবস্থিত মতি মসজিদ এটি ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দের নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৬৬২ তে নির্মাণ শেষ হয় ৷
মতি মসজিদ নির্মাণে ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল এটি সম্পূর্ণ শ্বেত মার্বেল পাথরের নির্মিত, এখানে শাহজাহান ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল ৷ শাহজাহানের বিখ্যাত পরিকল্পনা আর ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দের শাহজাহানাবাদ নামে দিল্লির উন্নতিদূরে নতুন প্রাসাদ দুর্গসহ রাজধানী শহর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন এবং ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদ দুর্গের নির্মাণ কাজ শেষ করেন ৷ আগ্রা দুর্গের অনুকরণে লালকেল্লা তৈরি হয় । লাল বেলে পাথরের তৈরি সু উচ্চ প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত এই প্রাসাদের বিশালতা আজও বিশেষ স্থাপত্য বিদেশীদের কাছে শ্রদ্ধার উদ্ভোগ করে ৷ এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল ১ কোটি টাকা ৷ প্রাচীরটির উচ্চতা ৬০ থেকে ১১০ ফুট, লাল কেল্লার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ দেওয়ান-ই- আম ৷
পরিকল্পিত ও সমন্বিত এই প্রাসাদ দুর্গের প্রবেশ পথ দুটি পশ্চিম দিকে মধ্যস্থিত ৷ প্রবেশ পথটি লাহোর গেট নামে পরিচিত ৷ দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথটি দিল্লি গেট নামে অভিহিত হত ৷ দেওয়ান-ই আমের থাম ও গম্বুজের আকার এমন পরিকল্পিতভাবে করা হয় যে সিংহাসনে বসে সম্রাট আস্তে আস্তে কথা বললেও সকলেই তা শুনতে পেতেন এবং যে কোন স্থান থেকে সম্রাটকে দেখা যেত ৷ দেওয়ান-ই আমের মধ্যস্থলে স্থাপন করা হয়েছিল ময়ূর সিংহাসন । পারস্যের বিখ্যাত শিল্পী বেবাদল খাঁ এটি নির্মাণ করেছিলেন ৷ এই সিংহাসনের বাহন ছিল রত্নখচিত ময়ূর, সিংহাসনের মাথায় ছিল পৃথিবী বিখ্যাত কাহিনী হীরা ও রত্ন খচিত রাজছত্র ৷ মুক্ত দিয়ে তৈরি অকৃত্রিম আঙ্গুরের ধোকা ঝুলত এবং মনে হয় ময়ূরেরা সেগুলি ছিড়ে খাচ্ছে ৷ পারস্যের সম্রাট নাদির শাহ এই মহামূল্যবান ময়ূর সিংহাসনটি লুন্ঠন করে নিয়ে যায় ৷
দেওয়ান-ই- খাস নামক গম্বুজের অলংকরণ ও পাথরের সঙ্গে সোনা রুপার কাজে শাহজাহানের স্থাপত্যশৈলীর পরিচয় বহন করে ৷ রুপোর পাতে মোরা ছাদ, তিন দিকে মার্বেল এবং সোনামণি মুক্ত দিয়ে সজ্জিত মার্বেল পাথরের তৈরি শীষ মহল শাহজাহানের আরেকটি অনবদ্য সৃষ্টি ৷ 70 মাইল দূরে যমুনা নদীতে বাঁধ দিয়ে কার্নেলের সাহায্যে এখানে অবিরাম জল সরবরাহের অব্যাহত রেখে ফোয়ারার সাহায্যে এক স্বপ্ন বহুল মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করা ৷
এরপরেই দিল্লির জামা মসজিদ ও মতি মসজিদ শিল্প রীতি ও ঐশ্বর্যের দিক থেকে অনবদ্য সৃষ্টি ৷ জামা মসজিদের বিশালতা ও জাঁকজমকতার দিক দিয়ে আজও বিস্ময়কর ৷ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে এবং শেষ হয় ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে । এটি ভারতের বৃহত্তম মসজিদ এই মসজিদ প্রাঙ্গনে দিল্লি শহরের সকল মানুষ শুক্রবারে নামাজের সমবেত হতে পারতেন ৷ শাহজাহানও এই প্রার্থনা সভাই যোগদান করতেন তবে এর অলংকরণের কাজ খুবই স্বল্প । শ্বেত পাথরের নির্মিত নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার সমাধি স্থানটি ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন শুধু মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসেই নয় সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসের শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল তার প্রিয়তম মমতাজ মহল এর স্মৃতিসৌধ আগ্রার তাজমহল ৷
তাজমহল ইন্দো-পারসিক শিল্প সুষমার সুস্পষ্ট ছাপ আছে ৷ প্রকৃতপক্ষে পারস্যের ওস্তাদ ইসাখা তাজমহলের নকশা করেন ৷ প্রাচ্যের সমস্ত শ্রেষ্ঠ শিল্পী বুকের রক্ত দিয়ে পরিশ্রম করে এই কালজয়ী সৌধ তাজমহল গড়ে তোলেন ৷ শাজাহান তার স্থাপত্য শিল্পে ইন্দো পারসিক ভাবধারায় ব্যবহার এবং তাজমহলের উদ্যানে নকশা করেন ৷ তাজমহলের অভ্যন্তরীণ অলংকরণের কাজ করেন সুলতান ও কৌনজ থেকে আগত হিন্দু শিল্পীরা তাজমহলের দেওয়ালে কোরআনের বাণীগুলি কোথায় করেন ৷ ১৮ হাজার শ্রমিক ২১ বছর ধরেই এই সৌধ নির্মাণ করেছিলেন ৷ তাজমহল সম্রাট শাহজাহানের গভীর পত্নী প্রেমের প্রতিস্ফুটিত ফল ৷
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ শাহজাহানের আমলে কলা ও স্থাপত্য শিল্পের পরিচয় দাও এই নোটটি পড়ার জন্য