কলোনিয়ান বা উপনিবেশ স্থাপত্য রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

কলোনিয়ান বা উপনিবেশ স্থাপত্য রীতি

 কলোনিয়ান বা উপনিবেশ স্থাপত্য রীতি 

কলোনিয়ান বা উপনিবেশ স্থাপত্য রীতি


ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের আগমন ও উপনিবেশিক যুগের সূচনা ভারতের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সমাজকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক জগত কেউ গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে ৷ ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীতে নতুন যুগের সূচনা হয় ব্রিটিশ তথা অন্যান্য ইউরোপীয়দের আগমনের সূত্রে পারম্বভিক পর্বে ৷ তারা ভারতীয় স্থাপত্য শৈলী কে অনুসরণ করলেও তারা ধীরে ধীরে নিজেদের তৈরি শৈল স্থাপত্য উপর গুরুত্ব দিতে থাকে যা ইন্দ্র-সারসেনীয় স্থাপত্য রীতি নামে পরিচিত ৷ এই রীতি মূলত হিন্দু ,ইসলাম ও পশ্চিমী ধারা সংমিশ্রিত ফলে উদ্ভিত ৷ যার প্রদর্শন লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তর,প্রতিষ্ঠান,প্রশাসনিক গৃহ,ডাকঘর ও রেলস্টেশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ৷



                উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে ইঙ্গ-ভারতীয় গির্জা গুলি ইংল্যান্ডের প্রথিক শৈলী নিদর্শন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ৷ যার মধ্যে অন্যতম ছিল কানপুরের মিউটিনি চার্জ এবং দিল্লির গ্যারিসন চার্জ ৷ বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যার গিলবার্ট স্কট বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন ভারতীয় স্থাপত্য ৷ইতালিও গতিক শৈলীর প্রয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয় এখান থেকেই হয়তো স্থাপত্যের সাম্রাজ্যবাদী ধারণার সূত্রপাত ঘটেছিল ৷



উপনিবেশিক স্থাপত্যগুলিকে কতগুলি ভাগে ভাগ করা হয় যেগুলি নিচে সম্পূর্ণ বিবরণ দেয়া হলো ৷


(১) ব্রিটিশ স্থাপত্য :

                         প্রায় ৩০০ বছরের অবস্থানে ভারতে গড়ে উঠেছে বহু নতুন ধরনের স্থাপত্য যেগুলি তাদের কলোনি উপনিবেশ গুলিতেও দেখা যায় ৷ যেমন কলকাতা,বোম্বে,মাদ্রাজ,দিল্লি,আগ্রা,হায়দ্রাবাদ,ভূপাল প্রভৃতি ৷ পারম্ভবিক পর্বে ব্রিটিশরা ধ্রুপদী রীতি অনুসরণ করলেও ধীরে ধীরে প্রচলিত ভারতীয় শৈলী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নতুন ধরনের স্থাপত্য নির্মাণ কর্ম শুরু করে ৷ যেটি ইন্দ্র-সারসেনীয় স্থাপত্য শৈলী নামে পরিচিত ৷ এগুলির আরেক অন্য নামও রয়েছে যেমন -- ইন্দ্র গথিক,গোল গথিক,নব্য মুগল এবং হিন্দু গতিক এই সমস্ত শৈলী নিদর্শন গির্জা,সহকারী গৃহডাকঘর রেল স্টেশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় । 


                            চেকক প্যালেস ইন্দ্র-সারসেনীয় স্থাপত্য শৈলীর প্রথম নিদর্শন যেটি মাদ্রাজে অবস্থিত ৷ এছারাও হেরিটেজ হিসাবে মাদ্রাজ হাইকোর্ট,চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশন,কলকাতার ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল হল,মহীশূর প্রাসাদ,অমৃতসরের ফলসা কলেজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ৷ কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল যেটি সেত মর্মর দিয়ে তৈরি এবং সৌন্দর্য ও গড়িমার শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে আছেন ৷ উইলিয়াম ইমারশন কর্তৃত্ব পরিকল্পিত এই স্থাপত্যের যেমন সারশ্রী ও স্থাপত্যের পুনর্জীবন ঘটেছে , তেমনি ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীর দক্ষিণে ধারা মিশরীয়, ভ্যানেসিও,মুঘল এবং অন্যান্য ইসলামীয় রীতির সংমিশ্রণ ঘটেছে ৷


(২) ফরাসি স্থাপত্য শৈলী :

                                       ফরাসি উপনিবেশ স্থাপন ও তাদের কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয় মূলত করমন্ডল উপকূলে ৷ অর্থাৎ বর্তমানে পুদুচেরি,কালিকর, কালিকট,বাহুর ইত্যাদি অঞ্চলে, এছাড়াও গুজরাটের মাহেক,সুরাট,মাসরীপট্টনম,অন্ধপ্রদেশ এদিকে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগর ৷ পুদুচেরি (পুদুচেরি হল পন্ডিচেরি বর্তমান নাম )ভারতের এমন একটি এলাকা যেখানে ফরাসি আধিপত্যের নিদর্শন আজও টিকে আছে ৷ ফরাসি শৈলির প্রতিফলন দেখা যায় তাদের নগরের পরিকল্পনায় যার ৷ তিনটি বৈশিষ্ট্য হলো --- 


(i)জ্বালাকা ছাদ 

(ii)পরিষ্কার ক্ষেত্র 

(iii) সমকোনে বিন্যস্ত রাস্তা। 


                                 যেগুলি দক্ষিণ ভারতে ফরাসি উপনিবেশ গুলিতে পরিলক্ষিত হয় ৷ পুদুচেরিতে বন্দর,শহর,রাস্তা,জনের মূর্তি,খিলান,মেরীর বিল্ডিং প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফরাসি শিল্পের প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয় ৷ এছাড়াও কালিকলের নব্য বধিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত কালিকল চার্জ প্রভৃতি ৷ হৃদয় গির্জা (heart church),ইয়ালেন ইন এর চার্জ গুলি ফরাসি শৈলীর উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ৷



(৩) পর্তুগিজ স্থাপত্য শৈলী :

                                        ১৪৯৮ সালে ভারতে আসেন পর্তুগিজরা প্রায় ৪০০ বছর গোয়াতে রাজত্ব করেন এবং আজও পর্তুগিজ সংস্কৃতির প্রভাব গোয়ার বিভিন্ন শহরে লক্ষ্য করা যায় ৷ বিশেষত মারগো শহরে লক্ষ্য করা যায় পর্তুগিজ মিশনারিরা গোয়ার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ইসলামিক ও পর্তুগিজ স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে গির্জা চার্জ শিক্ষা প্রসাদ রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান যেমন রাজপ্রাসাদ গোয়ার চার্জ হেরিটেজ ক্ষেত্র হিসাবে যেমন ভ্রমণপিপাসু মানুষদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে তেমনি সাংস্কৃতিক মিশ্রণে চমৎকার নিদর্শন হিসাবে স্বীকৃত পেয়েছেন এছাড়াও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে সেন্ট জোসেফের পবিত্র স্থান,অগুয়ার দুর্গ,রেলব্রেটেড দুর্গ,সেন্ট ফ্রান্সিস চার্জ প্রভৃতি ৷


           তবে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের অন্যতম নিদর্শন হল বং যীশুর প্রাসাদ এবং বোড়ে প জুসার বা জালিকা একটি বারাক স্থাপত্য চৈলীর দ্বারা নির্মিত হয়েছিল নবজাগরণের সময়কাল শৈলী প্রতিফলন দেখা যায় এক বিশেষ স্থাপত্য যেখানে পলেস্তরা এবং লাল মাটির কারুকার্য দেখা যায় এছারাও রাজপ্রাসাদের এবং মেঝেতে মূল্যবান রত্নের কারুকার্য পরিলক্ষিত হয়। প্রসাদের দেওয়ালে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্সের জীবনের নানা ঘটনা চিত্রিত হয়ে হয়েছে পলেস্তরার মাধ্যমে ৷


             গোয়া,দমন এবং দিউয়ের প্রভৃতি স্থানে এমন অনেক গৃহ আছে যেগুলিতে পর্তুগিজ স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ৷ এই ঘর গুলিতে বাইরের দেওয়ালে এমন রং করা হয় যাতে নাবিকরা দূর থেকে দেখে চিনতে পারে ৷ আবার অন্যদিকে এমন জানালা তৈরি করা হয় যা বারান্দার সঙ্গে যুক্ত থাকতো এবং দেওয়ালের রং ছিল অতি উজ্জ্বল বর্ণের ৷ গৃহের অভ্যন্তরে ছাদে ফল সিলিং লাগানো থাকতো তাদের আসবাবপত্রের হত মূলত ধূসর বর্ণের ৷ 

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কলোনিয়ান বা উপনিবেশ স্থাপত্য রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟