বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব আলোচনা কর
১৭৮৯ সাল ইউরোপ তথা বিশ্ব ইতিহাসের জল বিভাজিকা স্বরূপ কারণ ১৭৮৯ সালের মধ্যযুগের সমাপ্তি এবং আধুনিক যুগের সূচনা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে ৷ যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ১৭৮৯ এ সংগঠিত হয়েছিল তা হল ফরাসি বিপ্লব ৷ এই ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল বাস্তিল দুর্গের পতনের মাধ্যমে ৷ প্যারিসের দরিদ্র বেকার ও ক্ষুধার্ত মানুষরা খাদ্যের দাবিতে দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু করে । এই জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কঠোর দমন নীতি গৃহীত হলে জনগণ আরো উত্তেজিত হয়ে ৷ স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের অত্যাচারের পথিক বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে তার পতন ঘটায় ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
এরকম পরিস্থিতিতে ১৪ ই জুলাই প্রায় সাত থেকে আট হাজার জনতার একটি দল বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ৷ ঐতিহাসিক আলফ্রেন্ড কোব্যান এর মতে এর সংখ্যা ছিল ৮০০ ৷ এরপর তারা দুর্গ ধ্বংস করে বন্দিদের মুক্ত করে দেয় ও দুর্গের অস্ত্র-শস্ত্র সহ অন্যান্য জিনিস লুট করে ৷ ইতিহাসে এই ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা বিদ্রোহের অবনতি উদাহরণ আছে ৷ সেভাবে দেখলে বাস্তিল কারা দুর্গের পতন এমন কিছু সাংঘাতিক ঘটনা ছিল না ৷ কিন্তু এই পতনের প্রত্যেকে মূল্য ছিল অসামান্য । এর গুরুত্ব হল -
প্রথমতঃ ফ্রান্সের রাজারা ছিল চরম স্বৈরাচারী প্রভূত আর তার ভিত্তি ছিল বাস্তিল দুর্গ বিনা বিচারে অনেক প্রজাকে এই বাস্তিল দুর্গে প্রাণ হারাতে হয়েছে সেই কারণে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বৈরতন্ত্রের প্রতি ওই বাস্তিল দুর্গের ধ্বংস। আর এই দুর্গের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্র ক্ষমতা হারায় ৷
দ্বিতীয়তঃ রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা জাতীয় আইনসভার হাতে আছে এবং সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটে ৷
তৃতীয়তঃ বাস্তিল পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবী জনগণ প্যারিসের পৌর শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয় গঠিত হয় অস্থায়ী পৌর পরিষদ "প্যারিস কমিউন" ৷
চতুর্থতঃ প্যারিসের বিপ্লব ফ্রান্সের অন্যান্য অঞ্চলেও দারুন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ৷ শহরে,গ্রামে গঠিত হয় কমিউন এবং রক্ষী বাহিনী এইভাবে ফ্রান্সের রাজার একছত্র ক্ষমতার বিলুপ্তি ঘটে ৷
পঞ্চমতঃ ১৭৮৯ এর পূর্ববর্তী কয়েক বছর অজান্মার কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল ফলে দরিদ্র ক্ষুধা ও অভিজাতকের শোষণের অস্তিত্ব সাধারণ কৃষক শ্রেণীর মধ্যে অসন্তোষ জমে উঠেছিল এই অবস্থায় বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটনা তাদের বিদ্রোহীমুখী করে তোলে ৷
ষষ্ঠতঃ ফ্রান্সের রাজতন্ত্র পতনের সৃষ্টি হয় ও গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে শুরু করে ৷ জনগণের আক্রমণের ফ্রান্সের বাস্তিল দুর্গের পতন হলে সম্রাটরা বুঝতে পারে তাদের সময় বেশি দিন থাকবে না এরপর থেকে গণতন্ত্রের জোর বাঁধে শুরু করে ও ফ্রান্সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় ৷
সুতরাং বলা যায় যে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের প্রতিভ বাস্তিল দুর্গ পতন হলে ফ্রান্সের জনগণ স্বাধীনতা ফিরে পেতে শুরু করে, ফ্রান্সের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি হয় বাস্তিল দুর্গের পতনের হাত থেকে। বাস্তিল দুর্গের পতন ছোট ঘটনা হলেও এর গুরুত্ব ছিল সুদূরপ্রসারী ৷ গুডউইন এর মতে,"বাস্তিলের পতন শুধু ফ্রান্সেই নহে বিশ্বের সর্বত্র স্বাধীনতার জন্ম লগ্নের সংবাদ প্রচার করে ৷