১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ইঙ্গ-জাপান চুক্তির গুরুত্ব আলোচনা কর বা, ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গো জাপান যুক্তির গুরুত্ব কি ছিল

১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ইঙ্গ-জাপান চুক্তির গুরুত্ব আলোচনা কর বা, ১৯২ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গো জাপান যুক্তির গুরুত্ব কি ছিল

১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ইঙ্গ-জাপান চুক্তির গুরুত্ব আলোচনা কর বা, ১৯২ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গো জাপান যুক্তির গুরুত্ব কি ছিল বা,১৯০২-এর ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তির পটভূমি আলোচনা কর এবং এর গুরুত্ব নির্দেশ কর।

১৯০২ খ্রিস্টাব্দের জাপান চুক্তির গুরুত্ব আলোচনা কর বা ১৯২ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গো জাপান যুক্তির গুরুত্ব কি ছিল

দূর প্রাচ্যের তথ্য পৃথিবীর রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে এই চুক্তিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ' অভিনয় স্বরূপ । জাপানের নিকট এই চুক্তিটির গুরুত্ব অপরিসীম । এর ফলে জাপানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বৃদ্ধি পায় । জাপান প্রথম সারির দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে । ইহা জাপানের পক্ষে কম গৌরবের ছিল না যে, বৃটেনের মত একটি ইউরোপীয় শক্তি জাপানের মত একটি এশীয় "শক্তির সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে মিত্রতাস্থাপনে সম্মত হয় । এই প্রসঙ্গে চিতোশি ইয়ানাগা (Chitoshi Yanaga) তাঁর "Japan since Perry" নামক গ্রন্থে মন্তব্য করেন যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী জাপানীদের ইউরোপীয় রাজনীতির মূল ধারায় মিশে যাওয়ার চেয়ে কিছু কম ছিল না । এই চুক্তির বিশেষ গুরুত্ব হল এখানে যে এটাই পুরনো প্রতিষ্ঠিত পাশ্চাত্য শক্তির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নবাগত একটি প্রাচ্য দেশের স্বাক্ষরিত প্রথম ও শেষ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ।


এই চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হয় । ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াটারলুর যুদ্ধের পর ইংল্যান্ড ইউরোপীয় রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয় । চুক্তিটির ফলে কি ব্রিটেনের এই রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা দূরীভূত হয়? এ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতদ্বৈধ আছে । ফেয়ারব্যাঙ্কের, "মতে বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে ।" সুদূর প্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্রিটেনের সমর্থন পাওয়ার ফলে জাপানের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে আর কোন বাধাই রইল না । ইংল্যান্ডের সহায়তায় জাপানের নৌশক্তির বিকাশ জাপানের সামরিক মনোবল বৃদ্ধি করেছিল । ইংল্যান্ডের সমর্থনপুষ্ট হয়ে জাপান নির্দ্বিধায় রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে সাহসী হয়। ইন্স-জাপান মৈত্রী স্থাপনের ফলে রাশিয়াকে সমর্থন করতে অন্য কোন দেশ এগিয়ে আসেনি।


এই চুক্তির তাৎপর্য এই যে দূরপ্রাচ্যে রাশিয়াকে কোল-ঠাসা ও রাশিয়া যাতে অপর ফোন রাষ্ট্রের নিকট হতে কোন সাহায্য না পায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা । অবস্থা পরিবর্তনে রাশিয়া চীনের প্রস্তাব অনুযায়ী মাঞ্চুরিয়া থেকে রুশ সৈন্য অপসারণে সম্মত হয়। এই মর্মে রাশিয়া ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া কনভেনশন স্বাক্ষরিত করে । এই কনভেনশন অনুযায়ী স্থির হয় যে, দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া থেকে ছয় মাসের মধ্যে এবং মধ্য মাঞ্চুরিয়া থেকে বার মাসের মধ্যে রাশিয়া তার সৈন্যবাহিনী অপসারিত করবে, যদি অবশ্য সৈন্য অপসরণকালে কোন গোলমাল বা বাধার সৃষ্টি না হয়। আসলে কিন্তু রাশিয়া তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না । ফলত ইঙ্গ-জাপান চুক্তি রুশ-জাপান যুদ্ধ ত্বরান্বিত করে ।


ঐতিহাসিক এ. জে. পি টেলর (A. J. P. Taylor) ইঙ্গ- জাপান মৈত্রী চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন যে ইঙ্গ-জাপান চুক্তি উভয়পক্ষকে তাই দিয়েছিল যা তারা চেয়েছিল । ইংল্যান্ড ও জাপান উভয় দেশই সুদূর প্রাচ্যে রুশ অগ্রগতি রোধ করতে চেয়েছিল, কারণ কোরিয়া ও মাকুরিয়ায় রুশ একাধিপত্য ইংল্যান্ড ও জাপানের স্বার্থ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিপন্থী ছিল। ইংল্যান্ড ও জাপানের এই প্রয়াস অনেকাংশে সফল হয়েছিল, কারণ এই চুক্তি সুদূর প্রাচ্যে রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়াসকে বন্ধ করেছিল এবং রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত হয়েছিল। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের সাহায্য ও সমর্থন পেয়ে জাপান অন্যতম বিশ্বশক্তি রূপে আত্মপ্রকাশের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হয়েছিল। এইভাবে ঊনবিংশ শতকের শেষ দশকে চীনকে পরাজিত করে জাপানী সম্প্রসারণ বাদের যে সূচনা হয় তা রুশ-জাপান যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করে অপ্রতিহত বেগে এগিয়ে চলে এবং পার্ল হার্বার আক্রমণের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে ।


ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তি গ্রেট ব্রিটেনের কাছেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল । রিচার্ড স্টোরী (Richard Storry) বলেন যে বিংশ শতকের প্রথম দিকে রাশিয়ার শক্তির বিরোধী শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গ্রেট ব্রিটেনের কাছে এই মৈত্রী যথেষ্ট মূল্যবান ছিল, এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপানী সহায়তা বিশেষত সমুদ্রে যথেষ্ট কাজে এসেছিল । তবে একথা অনস্বীকার্য যে রাজনৈতিক ও ভাবাবেগ সবদিক থেকেই জাপানের কাছে এই মৈত্রী চুক্তির গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি । এই চুক্তিতেই কোরিয়াতে জাপানের বিশেষ স্বার্থের কথা স্বীকৃত হয়েছে, যার অর্থ হল কোরিও ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাপানের মধ্যস্থতা করার চূড়ান্ত অধিকার ব্রিটেন কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছিল। ভাবাবেগের দিক থেকে এই মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে জাপান তার অর্ধশতক পূর্বের হৃত গর্বকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল যখন কমোডর পেরী ও তাঁর উত্তরসূরীরা সেই দেশকে জোর করে উন্মুক্ত করে। জাপানবাসী ব্রিটেনের এই মৈত্রীকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে এবং শিমোনোসেকির সন্ধির পর রুশ নেতৃত্বে গড়া ত্রিশক্তি হস্তক্ষেপের গ্লানি দূর হয় ।


ঐতিহাসিক ফেয়ারব্যাঙ্ক ও ঐতিহাসিক ভিনাকের মতে ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তির দ্বারা ব্রিটেনের বিচ্ছন্নতার অবসান ঘটেছিল । কিন্তু ঐতিহাসিক টেলর ভিন্নমত পোষণ করে বলেন যে এই মৈত্রীর ফলে ব্রিটেনের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটেনি; বরং তার বিচ্ছিন্নতা আরো সুনিশ্চিত হয়েছিল। তাঁর মতে একটি এশীয় দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইংল্যান্ড ইউরোপীয় শক্তিসাম্যের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারেনি, ফলে ইউরোপীয় রাজনীতিতে ইংল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতারও অবসান ঘটেনি।


১৯০২ খ্রিস্টাব্দের চুক্তির পরও ব্রিটেন ইউরোপের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে ইউরোপীয় শক্তিবগে'র বলসাম্য থেকে পৃথক বা নির্লিপ্তভাবেই অবস্থান করে । অথচ ইউরোপীয় রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চকে কেন্দ্র করেই তখন যত কিছু কূটনৈতিক চক্রান্ত চলতে থাকে । সে ক্ষেত্রে ইউরোপের রাজনীতিতে ব্রিটেনের বিচ্ছিন্নতার অবসান হয় নি বলেই মনে হয় । এই অবস্থার অবসান ঘটে ১৯০৪ খৃষ্টাব্দে ইঙ্গ-ফরাসী আঁতাত (Anglo-French Entente, 1904) স্বাক্ষরিত হবার পর । তবে, ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে দূব প্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্রিটেনের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে । বিউরীও এই মত সমর্থন করেন । জাপানের কাছে এই মৈত্রী চুক্তি ছিল এক আদর্শ চুক্তি কারণ - প্রথমত, এই চুক্তির দ্বারা উভয় দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, রুশ-জাপান যুদ্ধের পর পূর্ব এশিয়ায় শান্তি বজায় ছিল। সবশেষে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে এই মৈত্রী জাপানকে পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক মর্যাদা অর্জনে সাহায্য করেছিল ।


তবে ঐ চুক্তিটি অযথা দূরপ্রাচ্যে জাপানের সাম্রাজ্যবা দতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। মোট কথা চুক্তিটির তৃতীয়বার নবীকরণের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুদ্ধ হয় এবং জাপানের 'ডানা কেটে' দেওয়ার উদ্দেশ্যে জাপানেব নৌবাহিনীর বহর সীমিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে । এই ব্যবস্থা গৃহীত হয় ওয়াশিংটন সম্মেলনে (১৯২১-২২)। সুতরাং ইঙ্গ-জাপান চুক্তিটি অন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয় । দূরপ্রাচ্যের তথা ইউরোপীয় রাজনীতিতে জাপান-বিরোধী মনোভাষ ক্রমশই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে । মাত্র দুবৎসর পরই রুশ-জাপান যুদ্ধ (১৯০৪-০৫) শুরু হয় । ফলে দূরপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟