কমোডর পেরির অভিযানের উদ্দেশ্য লেখ অথবা, কমোডর পেরির অভিযানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা কর

কমোডর পেরির অভিযানের উদ্দেশ্য
টোকুগাওয়া শাসন (১৬০৩-১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ) জাপানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কিন্তু উনিশ শতকের প্রথমার্ধের শেষদিকে জাপানকে উন্মুক্ত করার যে পদক্ষেপ শুরু হয়েছিল তারই এক অন্যতম পদক্ষেপ হল কমোডর পেরির অভিযান (১৮৫৩-৫৪ খ্রিস্টাব্দ) । কমোডর পেরি কর্তৃত্ব জাপান বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হলে জাপানের দীর্ঘ বিচ্ছিন্ন তার যুগের অবসান ঘটে ৷ পেরি জাপানের বন্ধ দরজা সজোরে আঘাত করলে জাপানের শ্রবণ সরকারের পক্ষে তা অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয়নি ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগের পদস্থ কর্মচারি কমোডর ম্যাথু গলব্রেইথ পেরিকে জাপানে প্রেরণ করা হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফিলমোরের প্রতিনিধি হিসেবে কমোডর পেরি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইয়েডো উপসাগরে এসে পৌঁছান এবং শোগুনের দরবারে ফিলমোরের চিঠি প্রদান করেন। চিঠিতে বলা হয়, ক) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য জাহাজের জন্য জাপানের উপকূলের তেল গ্রহণ করতে সুযোগ দান খ) অবাধ বাণিজ্যের অনুকূলে একটি বাণিজ্যিক সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর দক্ষিনাবে গ) যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপানের মৈত্রী স্থাপন। চিঠির উত্তর পেতে বিলম্ব হবে একথা জানার পর পরবর্তী বছরে ফিরে আসার সংবাদ জানিয়ে পেরী স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পরের বছর পেরি আবার জাপানে এলে আশঙ্কিত জাপান কমোডর পেরির সাথে কানাগাওয়া চুক্তি (১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ) স্বাক্ষর করে।
কমোডর পেরির অভিযান ও কানাগাওয়া সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে জাপান প্রথমবার বিদেশি শক্তির কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী,ক) নাগাসাকি সহ আরও দুটি বন্দর বৈদেশিক অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রীয় জাহাজের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। সেখানে জাহাজ মেরামত এবং জাহাজে তেল, কয়লা প্রভৃতি গ্রহণের সুযোগও থাকবে। খ) এডো থেকে ৬০ মাইল দূরে অবস্থিত শিমাডো নামক স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কনসাল নিযুক্ত হবে। গ) বিপন্ন জাহাজের নাবিকদের আশ্রয় দেওয়া হবে। ঘ) জাপানে অন্যান্য বৈদেশিক শক্তিবর্গ যে সকল বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরাও সেই সকল সুযোগ- সুবিধা ভোগ করবে। এর পরবর্তীকালে মার্কিন কনসাল টাউণ্ডসেও হ্যারিশ জাপানের সাথে 'হ্যারিশের চুক্তি' স্বাক্ষর করেন (১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই)। হ্যারিশের চুক্তি অনুসারে জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ।
ইতিমধ্যে কানাগাওয়া সন্ধি সম্পাদিত হওয়ার পরে ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও হল্যান্ড জাপানের সাথে যথাক্রমে আরও তিনটি সন্ধি স্থাপনের সুযোগ লাভ করে । এর ফলে জাপানের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হয় এবং জাপান একটি আধা-উপনিবেশিক দেশে পরিণত হয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে জাপান আইনত বিদেশি রাষ্ট্রের অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। বিদেশিদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে জাপানের সূতিবস্ত্র ও অন্যান্য কারিগরি শিল্প ধ্বংস হয়,মুদ্রাস্ফীতি ঘটে ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, শহরে খাদ্য দাঙ্গা শুরু হয় । কৃষক, শ্রমিক, উৎপাদক ও ভোক্তা সকলেই এর জন্য শোগুন শাসনকে দায়ী করতে থাকেন । শোগুনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ শেষপর্যন্ত সম্রাটের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরি করে ।
কমোডর পেরির অভিযান একদিকে যেমন জাপানের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়েছিল, অন্যদিকে তেমন জাপানকে বিদেশি শক্তির কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল। একদিকে যেমন এটি শোগুনতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিল, অন্যদিকে তেমন মেইজি শাসনের পটভূমি রচনা করেছিল । আধুনিক জাপানের ইতিহাসের পর্যালোচনায় তাই কমোডর পেরির অভিযানের গুরুত্ব অপরিসীম ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
কমোডর পেরির অভিযান সম্পর্কিত আপনার সব প্রশ্নের উত্তরঃ
কমোডর পেরি কে ছিলেন?
কমোডর ম্যাথিউ পেরি ছিলেন একজন আমেরিকান নৌ-অফিসার, যিনি ১৮৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে জাপানে যান এবং দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চুক্তি করেন।
কমোডর পেরির অভিযান কী?
১৮৫৩ সালে কমোডর পেরি 'কালো জাহাজ' নিয়ে জাপানের উপকূলে আসেন এবং টোকুগাওয়া শাসকদের চাপের মুখে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫৪ সালে 'কানাগাওয়া চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়। এই অভিযান জাপানের একাকীত্ব নীতির অবসান ঘটায়।
কমোডর পেরির জাপানে আগমন কবে ঘটে?
কমোডর পেরি জাপানে প্রথমবার আগমন করেন ১৮৫৩ সালের ৮ই জুলাই।
কমোডর পেরির জাপান অভিযানের তাৎপর্য কী?
এই অভিযান জাপানের শতাব্দীপ্রাচীন নিঃসঙ্গতা নীতির অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের দ্বার উন্মুক্ত করে। এটি মেইজি পুনরুত্থানের পথ প্রস্তুত করে।
কমোডর পেরির অভিযান pdf
পিডিএফ নিতে নিজে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করে আমাদের জিমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন