চিন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। তুমি কি মনে করো এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের উত্থান হয়েছিল।

চিন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। তুমি কি মনে করো এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের উত্থান হয়েছিল।

চিন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। তুমি কি মনে করো এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের উত্থান হয়েছিল।

চিন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। তুমি কি মনে করো এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের উত্থান হয়েছিল। 
 

চিন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫) প্রেক্ষাপট 


চীন জাপান বিরোধের প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ভিনাক বলেছেন," চিনো জাপানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক কোরিয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ৷" আধুনিক ইতিহাসের তাদের মধ্যে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিরোধ কোরিয়াকে নিয়ে আরম্ভ হয়েছিল ৷ ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালানো পরিকল্পনা পরিত্যক্ত হবার পর জাপান কোরিয়ার সঙ্গে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন ৷ এই চুক্তির মাধ্যমে কোরিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করেন ৷ জাপান ও কোরিয়ার মধ্যে রাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ৷ এর ফলে ক্রিয়ার তিনটি বন্দর জাপানের বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত হয় ।

চিন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। তুমি কি মনে করো এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের উত্থান হয়েছিল।
চিন-জাপান যুদ্ধের 

চীনের ইতিহাস আলোচনা প্রসঙ্গে বলা যায় যে কোরিয়া এতদিন চীনের করদ রাজ্য ছিল ৷ জাপান যে মুহূর্তে কোরিয়াকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয় সেই মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবে চীনের সার্থক ক্ষুন্ন হয়েছিল ৷
কোরিয়াতে জাপানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কে প্রতিহত করার জন্য চীন সচেষ্ট হন । কোরিয়ায় চীনের স্বার্থ রক্ষার জন্য লি-হাং -চাংকে নিযুক্ত করা হয়  ৷ বিদেশীদের কোরিয়া সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে চীন উৎসাহ পেয়েছিল ৷ জাপানকে প্রতিহত করা এটা একটি উপায় বলে তাদের মনে হয়েছিল ৷ ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে ব্রিটেন ,ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল ৷




ইতিমধ্যে কোরিয়ায় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দুটো গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয় একটি ছিল জাপানের সমর্থক ৷ অপর গোষ্ঠী ছিল চীনের সমর্থক ৷ জাপানের সমর্থক  গোষ্ঠী ছিল প্রাণে বাদী ও কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংস্কারের পক্ষপতি ৷ কিন্তু চীন পন্থী গোষ্ঠী ছিল পনি প্রণীত বিরোধী এবং যাবতীয় আধুনিক সংস্কারের বিপক্ষে কোরিয়ার এই অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে চীন জাপানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে ৷ ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে জাপান বিরোধী গোষ্ঠী রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে ৷ এতে রানি রক্ষা পান ৷ কিন্তু জাপানি তুতাবাস ভস্মীভূত হয় ৷ ফলে ৭ জন জাপানি অফিসার মারা যান ।

প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্য জাপান কোরিয়াতে যুদ্ধ জাহাজ পাঠায় ৷ তখন চীনের পরামর্শ জাপানের সঙ্গে কোরিয়ার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হয় ৷ এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান কোরিয়াতে স্থায়ীভাবে সৈন্য রাখার অধিকার লাভ করে ৷ চীন ও তৎক্ষণাৎ কোরিয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন করেন এবং কোরিয়াতে প্রতি আঞ্চলিক অধিকার লাভ করেন ৷ ইউয়ান-সি-কাই নামে এক তরুণ চীনা সামরিক অফিসার কে কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ দেবার জন্য কোরিয়াতে পাঠানো হয় ৷ কিন্তু কোরিয়ার ভেতরে জাপানপন্থী গোষ্ঠী এবং চীনাপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ অব্যাহত থাকে ৷ এই সময় জাপানে আধুনিক শিক্ষা গড়ে উঠেছিল শিল্পায়নের স্বার্থে জাপান কোরিয়াতে কিছু বিশেষ সুবিধা আদাই করার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেছিল ৷


১৮৮০ দশকের জাপান কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত চালের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল ৷ এই সময় ইউরোপীয় এর প্রচারণায় কোরিয়া জাপানি চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেন জাপান উত্তেজিত হয়ে ওঠে ৷ কোরিয়ার অভ্যন্তরে জাপান পন্থী গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন কিম-ওক-কিউন ৷ তিনি ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ নগদ কোরিয়াতে একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং কিম-ওক-কিউন কে ষড়যন্ত্র করে সাংহাই থেকে নিয়ে আসা হয় ও নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হয় । এই হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কোরিয়াতে নিযুক্ত সামরিক শিক্ষক ইউয়ান-সি-কাই তার এই কার্যকলাপ জাপান ক্ষুদ্ধ হয় ৷


এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই কোরিয়াতে টংহ্যাক অভূর্থান দেখা দেয় ৷ বিদ্রোহীদের দমন করতে ব্যর্থ হওয়ার পর কোরিয়া রাজ দরবার ইউয়ান-সি-কাইকে সাহায্য প্রার্থনা করেন এই সময় জাপান একটি কূটনৈতিক চাল চালে ৷ জাপান প্রকৃতপক্ষে ইউয়ান-সি-কাই যে টাঙ্গাইল বিদ্রোহের ফলে কোরিয়াতে জাপানের বাণিজ্যিক সার্থক পূর্ণ হচ্ছে এবং কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাপান চীনের সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য মদত দেয় ৷ আসলে জাপানের উদ্দেশ্য ছিল চীন কোরিয়ার সৈন্য প্রেরণের সঙ্গে সঙ্গে জাপান ও কোরিয়াতে সামরিক বাহিনী পাঠাবে । চীন তুমি জাপানের ফাঁদে পা দেয় এবং ওই বিদ্রোহ দমন করার জন্য একটি ছোট্ট বাহিনী করিয়াতে পাঠিয়ে দেয় ৷ জাপান ও ততক্ষনাক প্রায় আট হাজার সৈনিক একটি বাহিনী করিয়াতে পাঠায় টংহ্যাক বিদ্রোহ দমনের সহজ দমের দমনে যায় ৷


জাপান তখনো কোরিয়া থেকে তখনও সৈন্য প্রত্যাহার করেনি অফুরন্ত জাপান পড়িয়া সরকার কতগুলি অভ্যন্তরীণ সংস্কার সাধনের জন্য চাপ দিতে থাকে ৷ লি-হ্যাং-চ্যাং নামক চীনের জৈনিক রাজপুরুষ যিনি চীন ও কোরিয়া সম্পর্কে বিষয়ে তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব ছিলেন ৷ তিনি কোরিয়ার সরকারের নির্দেশ পাঠান যে কোরিয়া যেন জাপানকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বলেন এবং জানিয়ে দেয় যে সৈন্য প্রত্যাহিত হলে অভ্যন্তরীণ সংস্কার বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে ৷ ইতিমধ্যে চিনো জাপান উভয় উভয় পক্ষের সৈন্যবাহিনী কোরিয়াতে পরস্পরের সম্মুখীন হয় ৷ চীন যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিলেন ৷ লি-হ্যাং-চ্যাং আশা ছিল যে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় আসা যাবে ৷ রাশিয়া তার প্রস্তুতি ভঙ্গ করে চীনকে কোনরকম সাহায্য করা থেকে বিরতি থাকেন ৷ ব্রিটেন ও আমেরিকা অবশ্য জাপানের কাছে শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন রাখে কিন্তু জাপান তা প্রত্যাখ্যান করে ৷

১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাস জাপানি সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে এবং রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ৷ ওইখানে একটি সরকার গঠন করে ২৫শে জুলাই জাপানিরা কোরিয় উপসাগরে 'কাউশিং' নামে একটি চীনা জাহাজ ডুবিয়ে দেয় ৷ ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ই আগস্ট উভয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ৷ আগেই বলা হয়েছে যে, বিগত কুড়ি বছর ধরে জাপানি রাষ্ট্রনায়করা জাপানকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ৷ আধুনিক সম্বর শয্যায় সজ্জিত জাপানি বাহিনী চীনা সৈন্যদের অনায়াসে পরাস্ত করে এবং ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের 17 এপ্রিল চীন-জাপানের মধ্যে শিমানোশেক এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ৷ এই সন্ধির ফলে জাপান লাভবান হয়েছিল এই সন্ধিতে বলা হয় ৷
  1.  চীন কোরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে ৷
  2.  চীনের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জাপানকে সুবিধা দেওয়া হবে 
  3.  চীন জাপান যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে চেইন জাপানকে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হবে৷
  4. জাপানিরা চীনে কারখানা নির্মাণ ও শিল্প গড়ে তোলার অনুমতি পাবে ও রপ্তানি ক্ষেতে শুল্ক নিয়ন্ত্রণের অধিকার ফিরে পেয়েছিল ৷


চীন জাপান যুদ্ধে চীনের শোচনীয় পরাজয় চীনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিবর্গ চীনের দুর্বলতার সুযোগে চীনকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় । চীনের সার্বভৌমত্ব স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা বিপন্ন হয়ে পড়ে ৷ তাছাড়া জাপানের মত একটি ক্ষুদ্র দেশের হাতে পরাজয়ের ফলে দেশের জনসমক্ষে মাঞ্চু রাজবংশের প্রভাব- প্রতিপত্র ও মর্যাদা বণ্ডিত হয় । অন্যদিকে চীনের মতো একটি সুবিশাল দেশকে পরাস্ত করার পর জাপানের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে যায়, অর্থাৎ চীন জাপান যুদ্ধে জাপানের সাফল্য তার সাম্রাজ্যবাদের উত্থানের সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟