১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে চীনের ওপর জাপানের 'একুশদফা দাবি' সম্পর্কে আলোচনা করো।

১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে চীনের ওপর জাপানের 'একুশদফা দাবি'
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৪-১৮ খ্রিঃ জাপান তার সাম্রাজ্যবাদী আশা- আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার সুযোগ লাভ করে । জাপান নিজ স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে জার্মানীর বিরুদ্ধে মিত্রশক্তিবর্গের পক্ষে যোগদান করে চীনদেশে অবস্থিত জার্মানীর অধিকৃত অঞ্চল শানটুং, কিয়াওচাও প্রভৃতি অঞ্চল দখল করার সুযোগ লাভ করে । এভাবে সাম্রাজালিপ্সা কায়েম করার পর এবং জাপান চীনে দুরবস্থা সুযোগ নিয়ে 1915 খ্রিস্টাব্দে ১৮ ই জানুয়ারি চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের য়ুয়ান শিকাই এর কাছে ২১ দফা দাবি পেশ করেছিল ৷
এই সকল দাবী চীনের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য । চীনকে মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় । অপরদিকে এইসব দাবি সম্বলিত চরমপত্র চীনের বৈদেশিক দপ্তরের নিকট প্রেরণ না করে সরাসরি চীনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি যুয়ান-শি-কাই -এর নিকট প্রেরণ করা হয় এবং জাপানের এই দাবী সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যানা পাশ্চাত্য শক্তি জাপানের এই দাবীর কথা জানার পূর্বেই চীনের নিকট থেকে দাবী পূরণের সম্মতি পেলে এবং বৃহৎ শক্তিবর্গ সুদূর প্রাচ্যের স্থিতাবস্থা মেনে নিতে স্বীকার করলে জাপান সুচিন্তিতভাবে তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে সমর্থ হবে, এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই জাপান তার দাবি সম্পর্কে গোপনীয়তা রক্ষা করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে । কিন্তু চীনের বৈদেশিক দপ্তরের এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জাপানের দাবির কথা বিদেশী শক্তিবর্গের পক্ষে জানা সম্ভব হয় । যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড নীতিগতভাবে চীনের অখন্ডতা রক্ষার কথা বলেছিল কিন্তু , জাপানকে কার্যকর ভাবে প্রতিরোধ করার কথা ভাবেননি ৷
একুশ দফা দাবির শ্রেনীবিভাজনঃ জাপানে উদ্ভাবিত একুশ দফা দাবি পাঁচটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম ভাগে ছিল সান্টুন সম্পর্কিত দাবি। দ্বিতীয় ভাগে ছিল দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া ও পূর্ব ও অন্তরঙ্গলিয়া সম্পর্কিত দাবি, তৃতীয় ভাগে ছিল মধ্য চিনে কয়লা ও লোহার দাবি, চতুর্থ ভাগে ছিল চীনের উপসাগর বন্দর, ও উপকূল বা প্রণালী ইউরোপ বা আমেরিকা প্রভৃতি কোনো বিদেশী শক্তির নিকট ত্যাগ করতে পারবে না। পঞ্চম ,ভাগে ছিল ফুকিন অঞ্চলে চীন শাসনকার্য পরিচালনায় জাপানী পরামর্শদাতা নিয়োগ, জাপান থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় এবং অন্য কোন দেশকে এইসব সুবিধা দেওয়া যাবে না।
জাপান যখন চীনের কাছে তার একুশ দফা দাবি পেশ করেছিল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল চীনের সবথেকে বড় বন্ধু, যুক্তরাষ্ট্রের চীনে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার রক্ষার কথা বলেছিলেন ৷ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যানা পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ জাপানের এই একুশ দফা দাবি তাদের নিজ নিজ স্বার্থের দিক থেকে বিচার করে সমর্থন করতে অসম্মত হয় । কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত থাকায় জাপানকে দৃঢ়ভাবে বাধাদান করাও তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। দুর্বল চীন সরকার বাধ্য হয়েই একশ দফার অধিকাংশ দাবী স্বীকার করতে বাধা হয়। প্রত্যেকটি শর্ত পৃথক ভাবে আলোচনা করে চীন একুশ দফার মধ্যে ষোলটি দফা কার্যকর করতে সম্মত হয়।
চীনের পক্ষ থেকে এই সকল দাবি মেনে নেওয়ার ফলে দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া ও মঙ্গোলিয়ায় জাপান বিশেষ কতকগুলি অধিকার লাভ করে । তাছাড়া প্রয়োজন অনুসারে নতুন রেলপথ তৈরি করার, চীনকে আর্থিক সাহায্য করার নানারূপ সুযোগও লাভ করে। দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া এবং কিরিন-চাং-চু রেলপথ প্রভৃতি ১৯ বছর দখলে রাখার অধিকারও জাপান লাভ করে। তবে একুশ দফা দাবির মধ্যে যে সব শর্ত স্বীকার করলে চীনদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল সেগুলি প্রত্যাখ্যান করা হয় । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে চীন মিত্রপক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে প্যারিসে শান্তি সম্মেলনের সুবিচার পায়নি ৷ ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ই মে জাপানি অগ্রসরনের বিরুদ্ধে চীনের ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীরা নবজাগরণ আন্দোলন শুরু করেছিল ৷ অধিকার বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে তা চীনের জীবন ও সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল ৷
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে চীনের ওপর জাপানের 'একুশদফা দাবি' সম্পর্কে আলোচনা করো ৷ এই নোটটি পড়ার জন্য