প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির ক্ষতিপূরণ সমস্যা কেন তাৎপর্যপূর্ণ ছিল?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পরাজয়ের পর জার্মানিকে ভার্সাই চুক্তি করতে বাধ্য করেন ৷ এই চুক্তি ২৩১ নম্বর ধারায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে দায়ী করা হয় এবং সেই অনুযায়ী মিত্রপক্ষ জার্মানির কাছ থেকে এক বিরাট অংকের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন ৷ যুদ্ধ পরখ কন্ট্রোল সংক্রান্ত ধারা জার্মানিতে তীব্র সঞ্চয় করেছিল ৷ তাছাড়া যে সমস্ত জার্মান যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তারা একটি অন্যান্য কাজের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন ৷ তাছাড়া ভার্সই ক্ষতিপূরণ অংক স্থির করার বিষয়ে মৃতপক্ষে ঐক্যমত হতে পারেননি ৷ ডেভিড ফাংশন বলেছেন," এর অর্থ ছিল জার্মানিকে দিয়ে ১৯১৯ সাল সালে একটা ফাঁকা চেক সই করিয়ে রাখা ৷"
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মিত্রশক্তিবর্গ ও জার্মান প্রতিনিধিরা ক্ষতিপুরণ সমস্যা আলোচনার জন্য সুইজারল্যান্ডের স্পাতে মিলিত হয়। জার্মানি ক্ষতিপূরণ বাবদ কয়লা দিতে রাজি হয়েছিল । ক্ষতিপূরণের অর্থ মিত্রশক্তিবর্গের মধ্যে কীভাবে বণ্টিত হবে তাও এখানে ঠিক হয়ে যায় । জার্মানির দেওয়া অর্থের ৫২ শতাংশ পাবে ফ্রান্স, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ২২ শতাংশ, ইতালি দশ শতাংশ, বেলজিয়াম ৮ শতাংশ এবং বাকি অর্থ ছোটো ছোটো দেশগুলির মধ্যে বন্টিত হবে।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মহামন্দা শুরু হয়েছিল, অনিবার্যভাবে জার্মান অর্থনীতির ওপর এর ভয়ংকর প্রভাব পড়েছিল। পুঁজির বিনিয়োগ কমে যায় উৎপাদন হ্রাস পায় পণ্যের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে নেমে গিয়েছিল। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্ট্রেসম্যান মারা যান, মার্কিন পুঁজিপতিরা জার্মানিতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে সাহস করেনি। অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুভার যুদ্ধ ঋণ ও ক্ষতিপূরণের ওপর ১৯৩২ সনের জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেন।
এই সময়সীমা পার হওয়ার আগেই জার্মানির চ্যান্সেলর ক্রনিং কার্যত ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। তিনি ঘোষণা করেন যে বর্তমান পরিস্থিতিতে জার্মানির পক্ষে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। এর পরেও মিত্রশক্তিবর্গ সুইজারল্যান্ডের লসানে মিলিত হয়ে জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন ১৫ কোটি পাউন্ড আদায়ের চেষ্টা করেছিল জার্মানি এই প্রস্তাব সরাসরি বাতিল করে দিয়েছিল। এভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীর এক দীর্ঘ বেদনাদায়ক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল।
সন্দেহ নেই ক্ষতিপূরণ সমস্যা জার্মানির যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির ভয়ংকর ক্ষতি করেছিল, দেশে বেকারত্ব, দারিদ্রা ও হতাশা দেখা দিয়েছিল। সরকার ও জনগণ জার্মানির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। ভয়ংকর মুদ্রাস্ফীতি মধ্যবিত্তের সর্বনাশ করেছিল, শ্রমিক শ্রেণিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের প্রকৃত আয় কমেছিল। এদের হতাশাকে মূলধন করে হিটলারের নাৎসি দল ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে, ফ্রান্স ক্ষতিপূরণকে তার নিরাপত্তা রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দেখেছিল।