কোরিয়া যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা আলোচনা করো।
ভারত কোরিয়া যুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু প্রবর্তিত জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রথম সার্থক প্রয়োগ ঘটেছিল এই যুদ্ধের সময়। কোরিয়া যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই ভারত কোরিয়ার সমস্যার সমাধানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
কোরিয়ার সমস্যার সমাধানকল্পে মার্কিন ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে সমস্ত রকম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ১৯৪৭ সালে সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় উত্থাপন করে। জাতিপুঞ্জ সমস্যার সমাধানে নয়জন সদস্যবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী কমিশন (United Nations Temporary Commission on Korea UNTCOK) গঠন করে, যার সভাপতি নিযুক্ত হন বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে.পি.এস. মেনন। কোরিয়ায় শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ও কোরিয়া থেকে বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের দায়িত্ব এই কমিশনের হাতে দেওয়া হয়।
কোরিয়া যুদ্ধে ভারতের ভূমিকাঃ
জাতিপুঞ্জে ভারত অন্যান্য দেশের সাথে সাথে উত্তর কোরিয়াকে 'আক্রমণকারী' বলে বর্ণনা করলেও কোরিয়া সমস্যার সমাধানে তৃতীয় কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপের বিরোধী ছিল। একারণে ১৯৫০ সালে জুনে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে সব সদস্যকে আক্রমণ প্রতিহত করতে ও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে সাহায্য করতে বলা হয়, কিন্তু ভারত ভোটদানে বিরত থাকে। ভারত চেয়েছিল উভয় পক্ষকেই যুদ্ধের পথ থেকে সরিয়ে শান্তি স্থাপন করা। এ ছাড়া জাতিপুঞ্জ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো পরিচালিত হতে থাকায় ভারত এর তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করে।
এরপর জেনারেল ম্যাক আর্থারের বাহিনী চিন আক্রমণ করলে ভারত এর তীব্র প্রতিবাদ করে। জাতিপুঞ্জ এসময় আমেরিকার প্ররোচনায় চিনকে আক্রমণকারী হিসাবে প্রস্তাব আনলে ভারত এর তীব্র বিরোধীতা করে। এভাবে ভারত কোরিয়া যুদ্ধে তার নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী ও নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে বিশ্বকে চমকিত করে।
প্রত্যাবাসন কমিশনের সভাপতিঃ কোরিয়া যুদ্ধের শেষে যুদ্ধবন্দি সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী জাতিপুঞ্জ একটি প্রত্যাবসান কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের সভাপতি হন ভারতীয় প্রতিনিধি জেনারেল বিমাইয়া। এই কমিশনের প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ খ্রিঃ জুন মাসে একাট বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী স্থির হয় স্বদেশে ফিরতে বাক্তিরূপে বসবাস করতে পারবে। না চাওয়া যুদ্ধবন্দিরা নিরপেক্ষ দেশে বেসামরিক ৷
কোরিয়া যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা পশ্চিমী শক্তিজোট তথা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বা সাম্যবাদী শক্তিজোট তথা সোভিয়েত রাশিয়া কোনো পক্ষকেই খুশি করতে পারেনি। এই ঘটনা ভারতের নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণকেই প্রমাণিত করে। কোরিয়া যুদ্ধে ভারতের এই ভূমিকা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনকে নিঃসন্দেহে আরও শক্তিশালী করে হাঁর ভুলেছিল।