মুঘল যুগে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

মুঘল যুগে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

 মুঘল যুগে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

মুঘল যুগে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

ধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুঘল সাম্রাজ্য ছিল অত্যন্ত আলোচিত ও ঐতিহাসিক মহলে বিশ্লেষিত একাধিক অধ্যায় ৷ এই যুগে শিল্প সাহিত্য স্থাপত্য অভূতপূর্ব বিকাশের সঙ্গে অন্তর বাণিজ্য ও দূর্বাণিজ্য সম্প্রসারণ কৃষি ও শিল্প অর্থনীতির ব্যাপক সম্প্রসারণ ৷ এই সমস্ত কিছুর নিরিখেই মুঘল ভারতে ইতিহাসের চরম সীমায় উন্নতি হয়েছিল ৷ উন্নত অর্থনীতির সঙ্গে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার ভূমিকা ও অতপ্রতভাবে যুক্ত ৷ মুঘল ভারতের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার বিশেষ সক্রিয়তা অর্জন করেছিল ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

মুঘল আমলে উন্নত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক ছিল ৷ ছোট বড় সমস্ত ব্যবসায়ী ঋণদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল ৷ মুঘল ভারতে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রচলিত ছিল ৷ মুঘল যুগে দেশের সমস্ত বাণিজ্য শিল্প ব্যবস্থার সঙ্গে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাযুক্ত ছিল ৷ মুঘল ভারতের অধিকাংশ গ্রামে ছোট বড় ব্যাঙ্কার ছিল ৷ মুদ্রার বিনিময়ে টাকা পাঠানো ইত্যাদি কাজ ব্যাংকারের মধ্যে ছিল ৷ মুঘল আমলে সুদের হার ছিল 7.5% ৷ বার্নিয়ে বলেছেন ," মহাজনদের মধ্য দিয়ে ধনীরা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টাকা ধার দিয়ে সুদের ব্যবসা করত ৷"

হুন্ডি ও বিনিময়ে পণ্যের মাধ্যমে ঋণদান করা হতো হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে ৷ যে সমস্ত টাকা দেওয়া হতো তাকে বলা হতো দর্শনই হুন্ডি ৷ আর মেয়াদের আগে হুন্ডিকে যে টাকা দেওয়া হতো তাকে বলা হতো মেয়াদি হুন্ডি ৷ এছাড়াও নানা ধরনের হুন্ডি প্রচলিত ছিল ৷ হুন্ডির দুই ধরনের ব্যবহার দেখা যেত প্রথমত এর সাহায্যে অর্থ হস্তান্তর করা যেত, দ্বিতীয়ত এটি ছিল ঋণপত্র এছাড়াও অনেকেই ভাঙ্গাতে এলে তাকে নগদ টাকা না দিয়ে তার নামে সেই টাকা গচ্ছিত রাখা হতো । এছাড়াও শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঋণদানের প্রচলন ছিল একে বলা হত দাদনী ৷ এটি একটি ফার্সি শব্দ এর অর্থ হলো দেওয়া ৷ সাধারণত ব্যবসায়ীরা তাঁতীদের ঋণদান করত এ ক্ষেত্রে কারিগররা পুজির জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল ৷ এই দাদনি সুদের হার এক এক জায়গায় এক এক রকম ছিল ৷

ট্রাভারনিয়ে জানিয়েছেন যে ,"প্রায় প্রতি গ্রামে একজন করে মহাজন থাকতো ৷" ভারতের বড় বড় শহরের সমবায় ও গঞ্চে মহাজনদের দেখতে পাওয়া যেত । সুরাট অন্তর বাণিজ্য ও বর্হির বাণিজ্যের স্বার্থে কৃষক ও কারু শিল্পীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতিতে দাদন দিতেন ৷ পাঞ্জাবের শস্য ব্যবসায়ীরা বাংলায় জমিদারদের অতি উচ্চ সুদে টাকা ধার দিতেন ৷ বাংলার জগৎ শেঠের মহাজনি বাণিজ্য করে বহু অর্থের মালিক হয়েছিলেন ৷

মুঘল সম্রাট আকবরের ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়েছিলেন ৷ জাহাঙ্গীরের আমলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচার ঘটেছিলেন ৷ তবে ব্যাংক গুলির ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল না ৷ বীমার ব্যবসা ও যথেষ্ট ভাবে বেড়েছিল ৷ মুঘল ভারতের সংঘটিত বীমার ব্যবসা চালু থাকাই বণিকরা ঝুঁকি নিয়ে পণ্য আদান প্রদান করতে পারত ৷ মুঘল আমলে নীল ব্যবসায়ীর ছিল ব্যাংকের মালিক ৷ এই সময় নীল চাষ লাভজনক থাকায় বহু নীল ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মানের ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ মুঘলদের অধীনে ব্যাংক ব্যবস্থা কোটি নামে পরিচিত ৷ ওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে একজন ধনী ব্যাংকার ছিলেন মানিক চাঁদ, যিনি ব্যাংকার হিসেবে এত খ্যাতি ছিলেন যে ঔরঙ্গজেব তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে শেঠ পদে ভূষিত করেন ৷

১৭০৪ সালের নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করলেই এই শেঠ পরিবার নতুন রাজধানীতে চলে আসেন ৷ এই সময় থেকেই তারা জগত শেঠ উপাধি পান ৷ এই সময় শেঠ পরিবার বাংলার ট্যাকসাল পরিকল্পনা মুদ্রা ব্যবস্থা ও মুদ্রা বিনিময় করার অধিকার পায় ৷ আধুনিক যুগের স্টেট ব্যাংক যা কাজ করে শেঠ পরিবার রাও মোটামুটি ভাবে সেই কাজ করতো ৷ নবাবরা শেঠদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন ৷ এই পরিবার 1750 সালের আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে সুদে টাকা ধার দিতেন ৷

কিন্তু ১৭৬৫ সাল থেকে এই কোম্পানির সঙ্গে শেঠ দের সম্পর্ক অবনতি ঘটে ৷ লর্ড ক্লাইভ শেঠদের কাজকর্মের সমালোচনা করেন ৷ শেঠ পরিবারের সঙ্গে কোম্পানির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয় ৷ প্রথমে নবাব তারপর কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির হলে জগত শেঠের পরিবর্তণ হয় ৷ মির কাসিম শেঠ ভ্রতাদেরকে হত্যা করে বহু টাকা কেড়ে নেন ৷ ওয়ারেন হেস্টিং বাংলায় টাকশাল বন্ধ করে দিলে শেঠদের আরো ক্ষতি হয় । পরিবারের থেকে কোম্পানির সুদে টাকা ধার নেওয়া বন্ধ করে দিলে সেট পরিবার ব্যাংকারের দায়িত্ব হারায় ৷

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের শেঠদের কুঠি রাজনৈতিক গন্ডগোলের ফলে বন্ধ হয়ে যায় ৷ শেঠ পরিবার নবাবী আমলে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করতো ৷ কোম্পানির শেঠদের এই অধিকার লাভ করে ৷ কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা সকল প্রকার বাণিজ্য একচেটিয়া অধিকার স্থাপন করায় শেঠদের ব্যবসা নষ্ট হয়ে যায় । এর ফলে বাংলায় এক ব্যাংকিং কারবার নষ্ট হয়ে যায় এবং কোম্পানি তা দখল করে নেয় ৷

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মুঘল যুগে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟