স্বাধীন হায়দাবাদ রাজ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা,নিজাম উল মূলক, প্রথম আসফ খাঁ কিভাবে হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে সংহত করেছিলেন?
অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে মুঘল সাম্রাজ্য দ্রুত ভাঙতে থাকে ৷ বিভিন্ন প্রদেশের সুবাদরগন স্থানীয় রাজা ও জমিদাররা বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্রোহী ঘোষণা করেন ৷ ড.দত্তের মতে অষ্টাদশ শতক ছিল দুঃসাহসী ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তিদের যুগ ৷ এই যুগে সামান্য তরবারিকে সম্বল করে ওই সকল ভাগ্যান্বেষী ধ্বংসপ্রাপ্ত মুঘল সাম্রাজ্যের উপর এক একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, কিন্তু পরাজিত হয় পরবর্তীকালে ৷ এই সকল আঞ্চলিক শক্তি গুলি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করে ৷ এই সকল আঞ্চলিক রাজ্য গুলি নিজ নিজ অঞ্চলের অরাজকতা দমন করে শাসকরা কঠোর হাতে আইন-শৃঙ্খলা স্থাপন করেন ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
জমির উদ্বৃত্ত উৎপাদন স্থানীয় রাজা জমিদারদের হাত থেকে তারা হস্তগত করে ৷ এই সকল আঞ্চলিক শক্তি গুলির বেশিরভাগই ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণ করেছিল ৷ এই শক্তিগুলি সম্প্রদায়িকতার মুক্ত নীতি রাজ্যের অর্থনৈতিক শাসনের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয় ৷ ভেঙে পড়া মুঘল সাম্রাজ্যের উপর স্থাপিত হয় আঞ্চলিক শক্তি গুলি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন সফল হয়নি ৷ এই শক্তিগুলির অধীনে জাইগির ও জমিদারের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷ ফলে কৃষকের ওপর শোষণের মাত্রা বাড়ে ৷ এই সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলি নিজ নিজ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য রক্ষা নীতি নেন ফলে তারা শিল্পের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে ৷
মুঘল দরবারের তুরানি গোষ্ঠীর নেতা গাজী উদ্দিন ফিরোজ ও তার পুত্র নিজাম-উল-মূলক তুরানি গোষ্ঠীর ওপর যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্র বিস্তার করেছিল ৷ নিজাম-উল-মূলক ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রশাসনিক পদে কাজ করেছিলেন এবং তার অধীনে একদল গোলন্দাজ বাহিনী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন ৷ মহম্মদ শাহের আমলে সৈয়দ ভাতৃদ্বয়ের একছত্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে এই দরবারে রক্ষণশীল জোট তৈরি হয় তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিজাম-উল-মূলক ৷
তিনি সৈয়দ ভাতা হুসেন আলীকে যুদ্ধে নিহিত করেন ৷ সৈয়দ গোষ্ঠীর পতনে নিজামের ভূমিকা ছিল অপরিসীম ৷ ১৭২০ থেকে ২২ খ্রিস্টাব্দে নিজাম হায়দ্রাবাদ কে কেন্দ্র করে তার প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন করেন ৷ তিনি এই অঞ্চলে মুঘল বিরোধী শক্তি গুলিকে দমন করেন ৷ উজির আমিন খানের মৃত্যু হলে ১৭২২ খ্রিস্টাব্দের সম্রাট নিজামকে দক্ষিণ থেকে দিল্লিতে এনে উজিরের পথে যোগ দিতে আহ্বান জানান ৷ ১৭২২ থেকে ২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিজাম উজিরের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন ৷
নিজাম মহম্মদ শাহের দরবারে প্রশাসনিক দুর্নীতি কর এবং জায়গীরদারী ব্যবস্থার উন্নতি সাধন এবং সরকারের খালিসা জমির ইজারা বন্ধের জন্য এক শাসন পরিকল্পনা নেন ৷ কিন্তু মহম্মদ শাহ এই পরিকল্পনা গ্রহণের অনিচ্ছা প্রকাশ করাতে নিজাম হতাশ হয়ে উজিরের পথ ত্যাগ করেন । তিনি দক্ষিণে চলে যান এবং মহম্মদ শাহ নিজামকে বিদ্রোহী মনে করে ৷ তার দখলের জন্য মুবারিজ খাকে দক্ষিণে পাঠান কিন্তু নিজামের কাছে মুবারিজ খাওয়া শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় নিজামকে দক্ষিণের সুবাদার বলে স্বীকৃতি দেন এবং তাকে আসফা খাঁ উপাধি দেন ৷
এরপর নিজাম প্রায় স্বাধীনভাবে হায়দ্রাবাদ রাজ্য শাসন করতে থাকেন ৷ তবে মুঘল সম্রাটদের প্রতি মৌখিক আনুগত্য জানাতেন ৷ তিনি স্বাধীনভাবে বৈদেশিক নীতি পরিচালনা, কর্মচারী নিয়োগ এবং জায়গির দান করতেন ৷ তার শাসনব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন কাফি খাঁ ও গুলাম হোসেন ৷ ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে আসফ এর মৃত্যু হলে নিজামের সিংহাসন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয় সেই সুযোগে ইংরেজ শক্তি দক্ষিণ ভারতে আধিপত্য বিস্তার করেন ৷