মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর অথবা,মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের চরিত্রের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করো।

মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর অথবা,মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের চরিত্রের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করো।

 মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর অথবা,মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের চরিত্রের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করো।


মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর অথবা,মুঘল আমলে কৃষক বিদ্রোহের চরিত্রের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৫৫৬ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত ইতিহাসে গ্রেট মুঘল যুগ হিসাবে পরিচিত। পর্যালোচনার সময়কালে ভারত সমস্ত আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক অত্যন্ত দৃঢ়তা লাভ করেছিল । অর্থনীতি ও ছিল অত্যন্ত মজবুত । মুঘল যুগে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্য, উৎপাদন এবং প্রযুক্তি সবই উন্নত হলেও অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি ছিল কৃষি  । এমনকি মুঘল রাজবংশ জুড়ে কৃষির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেলেও, সর্বোচ্চ স্তরে কৃষক বিদ্রোহের বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্ত ছিল ৷ বাস্তবে, ওরঙ্গজেবের শাসনামল জুড়ে, বেশ কয়েকটি যুদ্ধ বিদ্রোহের ফলে অসংখ্য শিল্প স্থাপত্যের বিকাশের জন্য প্রচুর খরচ হয়েছে এবং সেই সাথে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ পরিস্থিতি ফলে বিভিন্ন এলাকায়  কৃষক ও কৃষির ওপর ব্যাপক অসন্তুষ্ট ঘনীভূত হয় । যা ছিল এই কৃষক বিদ্রোহ গুলির অন্যতম কারণ ।


বিক্ষু কৃষকরা ক্রমাগত জমি রাজস্ব দিতে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয় । সেই বিদ্রোহ গুলির চরম রূপ ছিল সশস্ত্র বিদ্রোহ ৷ অনেক ক্ষেত্রে কৃষক বিদ্রোহকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মূলত জমিদার শ্রেণী । সাধারণত, দুর্গম নদী এবং বন- জঙ্গল বেষ্টিত গ্রাম গুলিতে বিদ্রোহ বেশি প্রকোপ ছিল ।  জাহাঙ্গীরের শাসনামল থেকে খালি জমি ইজারা দওয়া হলেও, অতিরিক্ত কর আদায়ের জন্য কৃষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হতো । নিপীড়ন এড়াতে কৃষকরা প্রায়ই তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ।  বানিয়েএর বিবরণী থেকে জানা," উড়িষ্যার দেওয়ান হাসিমের অত্যাচারে বহু কৃষক বাড়ি ছেড়ে পলায়ন করেন ৷" ইরফান হাবিব,গৌতম ভদ্রের মতো ইতিহাসবিদরা বাংলার শোভা সিংয়ের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহের কথা লিখেছেন।


মিরাট-ই-অহমদির মতে, গুজরাটের সুবাদার আজনমানের অত্যাচারে কৃষকরা দূরবর্তী অঞ্চলে জমিদারদের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন । জমিদারদের অধীনে এক শ্রেণীর পাইক সর্বদা উপস্থিত থাকত । মুঘল যুগের সমন্বিত কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম একটি ছিল জাট  বিদ্রোহ । কৃষক এবং কৃষি ব্যবস্থার সমস্যাগুলি মুঘল যুগে কৃষক বিদ্রোহের জন্ম দেয়, কিন্তু জাতি ও ধর্ম কখনও কখনও এই বিদ্রোহগুলিকে আরও সহিংস করে তোলে । অধ্যাপক গৌতম ভদ্রের মতে, শওয়ার বিদ্রোহের উপর ধর্মের উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল।


ভারতের গ্রামগুলি গঠিত ছিল মূলত একই জাতের মানুষদের নিয়ে যাদের সামগ্রিক স্বার্থ ছিল একই রকম । বিদ্রোহ গুলিতে একদিকে যেমন একই বর্ণের মানুষকে যোগদানের উৎসাহ প্রদান করত তেমনি অন্য বর্ণের মানুষকে এই বিদ্রোহে যোগদান থেকে দূরে সরিয়ে রাখত । ইরফান হাবিবের মতে, যে দুটি সামাজিক কারণ কৃষক আন্দোলনের অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল তা হল জাত ও ধর্ম । উপরন্তু, ধর্মীয় সচেতনতা কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল যেমন ধর্মকে কখনো কখনো বিদ্রোহীরা প্রতিবাদের উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছে । ধর্মবিশ্বাস শান্তি ও সংহতির জন্ম দিয়েছিল ।


মুঘল যুগে কৃষক বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ ব্যবহার করে ইরফান হাবীব তার "প্রেজেন্ট ইন ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি" প্রবন্ধে উপসংহারে বলেছেন যে "আন্দোলনে অতীতের কৃষকদের চেতনার অভাব ছিল এবং শুধুমাত্র জমিদারদের স্বার্থে সংঘটিত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল মাত্র ।" মুঘল যুগে কৃষক আন্দোলন গুলি ছিল বিক্ষিপ্ত অঞ্চল ভেবে যেগুলোর চরিত্র ছিল পৃথক ।  এই সময়ে কৃষকদের শোষণ ও নিপীড়ন তাদের সবাইকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে ।


তারিখ-ই-ফেরিস্তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "হিন্দুস্তানে বনে জঙ্গলে পরিপূর্ণ" এই বন জঙ্গল এত বড় ছিল যে প্রজারা অনায়াসে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে উঠতে পারে । ঐতিহাসিক গৌতম ভদ্র তার "মুঘল যুগে কৃষি অর্থনীতি এবং কৃষক বিদ্রোহ" অনুসারে মুঘল যুগে প্রাদেশিক স্তরে প্রধানত তিন ধরনের কৃষক বিদ্রোহ ছিল। প্রথমত, পাইক বা এক বিশেষ শ্রেণীর রায়ত ও যোদ্ধাদের বিক্ষোভ থেকে, দ্বিতীয়ত সাধারণ রায়তদের বিক্ষোভ থেকে এবং তৃতীয়ত, সামন্তদের বিক্ষোভ থেকে



 গৌতম ভদ্ধের মতে মুঘল কৃষক বিদ্রোহ বেশিরভাগই দুটি ধারায় পরিচালিত হয়েছিল । প্রথমত, ত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ এবং দ্বিতীয়ত, মুঘল রাজস্ব সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত কৃষক বিদ্রোহ ৷ অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহ গুলি মুঘল শক্তির কাছে বারবার বিরম্বনার উপস্থাপিত করেছিল। ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟