আদি মধ্যযুগের ভারতে মন্দির স্থাপত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
আদি মধ্যযুগের ভারতের স্থাপত্য শিল্পের কেন্দ্রে ছিল মন্দির ৷ স্থাপত্যের সূচনা হলেও বৈচিত্র ও অলংকরনের দিক থেকে আদি মধ্যযুগেই এই মন্দির শিল্প আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ৷ ভারতীয় মন্দির শিল্পে তিনটি ধারার উপস্থিতি দেখা যায় ৷ যথা - নাগররীতি, দ্রাবিড় রীতি,বেসর রীতি ৷
আরও পড়ুন
নাগর শৈলীর মন্দিরগুলি সাধারণভাবে হয় বর্গাকৃতি ৷ দাবির শৈলির অষ্টকন বিশিষ্ট এবং বেসর শ্রেণীতে বৈশিষ্ট্য বৃত্তাকারগৃহ ৷ সাধারণভাবে হিমালয় ও বিন্ধ পর্বত এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে নাগররীতি জনপ্রিয়তা ছিল ৷ দ্রাবিড় রীতি প্রকাশ দেখা যায় সুদূর দক্ষিণে কৃষ্ণা নদী থেকে কন্যাকুমারীকার মধ্যবর্তী ভূখণ্ডে আর বিন্ধ থেকে কৃষ্ণা নদী পর্যন্ত অন্তর্বর্তী ভূভাগে প্রচলিত ছিল বেসর রীতি ৷
আদি মধ্যযুগে বাংলার শিল্পচর্চার মধ্যে স্থাপত্য ভাস্কর্য স্তুপ,বিহার,মন্দির ইত্যাদি সবই ছিল । সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত গ্রন্থে একাদশ শতকের বাংলার প্রসাদ ও মন্দিরগুলি ছিল বলে গর্ববোধ করেছেন ৷ ড মজুমদারের ভাষায়,"বাংলার স্থাপত্য শিল্পের কীর্তি আছে কিন্তু নিদর্শন নাই ৷" চীন দেশীয় পর্যটকরা বাংলাদেশের অসংখ্য স্তুপের কথা বলেছেন ৷
স্তুপের মতোই বিহারগুলির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় ৷ এই বিহার গুলি ছিল বিদ্যা চর্চার অন্যতম ক্ষেত্র৷ পাল রাজা ধর্মপাল সোমপুরী বিহার নির্মাণ করেছিল ৷ এছাড়াও অন্যান্য বিহার গুলিতে নানা ধরনের শিক্ষা চর্চিত হতো । ছোট ছোট কক্ষে নির্মিত বিহার গুলিতে শিক্ষা দেওয়া হতো ৷
রামচরিত গ্রন্থে রামাবতিকে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান ক্ষেত্র বলা হয়েছে ৷ আদি মধ্যযুগের মন্দির শিল্পের নিদর্শন হিসেবে সোমপুরী বিহার মধ্যবর্তী অংকনের মন্দিরটি নজরে পড়ে ৷ বিশেষত কাশিনাথ দীক্ষিত ও সরসী কুমার সরস্বতীর প্রচেষ্টায় মন্দিরটির মৌলিক রূপ ও গঠন অনেকটাই বোধগম্য হয়ে উঠেছে ৷
আদি মধ্যযুগের স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল কেন্দ্র দাক্ষিণাত্য ও দক্ষিণ ভারত ৷ এ প্রসঙ্গে পল্লব রাজাদের কৃতিত্ব প্রথমে উল্লেখের দাবি রাখে ৷ এই পর্বে অনন্ত সায়ন মন্দির,ভৈরবকোন্ডের মন্দির, মহাবলীপুরামের রথ মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছিল ৷ এই পর্বের মন্দিরগুলি কেবল পাহাড় কেটে তৈরি হয়নি এগুলি স্বাধীনভাবে নির্মিত হয় ৷ চোল রাজাদের আমলে স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন বিজয়ালয় চোলেশ্বর মন্দির এছাড়াও কোরঙ্গনাথ মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য ৷ আনুমানিক ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গায় কোণ্ড চোলপূরমের বিখ্যাত মন্দির নির্মাণ করেন ৷
নবম ও ত্রয়োদশ শতকের অন্তবর্তী কাল উড়িষ্যাতে বহু মন্দির নির্মিত হয় ৷ যার মধ্যে অন্যতম ছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দির এবং কোনারকের সূর্য মন্দির ৷ উড়িষ্যার মন্দির স্থাপত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল চতুষ্কোণ দেবালয় ৷ মূল মন্দির দেউল নামে অভিহিত হয় ৷ দেউলের শীর্ষ দেশ পিরামিডের মতো ক্রমশ সরু হয়ে অনেক উপরে উঠে যায় ৷ খ্রিষ্ঠীয় ৭৫০ থেকে ৯০০ অব্দের মধ্যে নির্মিত ভুবনেশ্বরের 'পরশুরামেশ্বর ও ভিটলা মন্দিরে ওড়িশা স্থাপত্য রীতির প্রাথমিক প্রকাশ দেখা যায় ৷
আদি মধ্যযুগের জৈন স্মৃতি স্তম্ভ গুলিও স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ্য দাবি রাখে ৷ স্মরণীয় এমন দুটি স্মৃতি স্তম্ভের নির্মাতা ছিলেন গঙ্গরাজা ও চতুর্থ রাক মল্লর মন্ত্রী চামুন্ডা রায় ৷ দুটিরই অবস্থান শ্রাবণ বেলগোলায় রাষ্ট্রকূটদের আমলে শিল্পকলার বিশেষ অগ্রগতি না ঘটতে এদের আমলে একমাত্র শিল্প নিদর্শন 'কৈলাসনাথ মন্দির' প্রথম কৃষ্ণের আমলে এটি নির্মিত হয় ৷
উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আদি মধ্যযুগের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন গুলি মন্দির শিল্প ৷ আদি মধ্যযুগের বৈচিত্র ও অলংকরণের দিক থেকে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তবে মন্দির শিল্পের পাশাপাশি বিহার এদের অবদান ও কোন অংশেই কম নয় । তবে আদি মধ্যযুগের স্থাপত্যের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এই মন্দিরগুলি স্তুপ বা বিহার শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনা লয় ছিল না ৷ এগুলি ছিল শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র তাই বলা যায় আদি মধ্যযুগের স্থাপত্যের ক্ষেত্রে এগুলি ধর্ম ও শিক্ষাকে একই সঙ্গে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল ৷