রক্ষণশীল উলিমাদের সঙ্গে আকবরের বিরোধের কারণ
ইসলাম ধর্মের পণ্ডিতদের উলেমা বলা হয় ৷ উলেমা শব্দটি আক্ষরিক অর্থ হলো জ্ঞান ৷ প্রাথমিকভাবে ইসলামিক জ্ঞানকেই বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ উলেমা শব্দটির দ্বারা মুসলমান ধর্মীয় পণ্ডিতদের এক গোষ্ঠীকে বোঝানো হয় ৷ মধ্যযুগে ইসলামিক রাজত্বে উলিমা গোষ্ঠী যথেষ্ট প্রভাব ছিল ৷ সুলতানি যুগে ভারতে মুসলমান রাজাদের শাসন চালু হওয়ার সাথে সাথে এই সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটে ৷ জিয়াউদ্দিন বরনি ছিলেন এই সম্প্রদায়ের একজন ৷ আলাউদ্দিন খলজি উলেমাদের কার্যকলাপে উদ্যোগী হলেও মহম্মদ বিন তুঘলক উলেমাদের বিশেষ মর্যাদায় ক্ষুন্ন করেছিলেন ৷
উলিমাদের ব্যাপারে মুঘল সম্রাট আকবর আলাউদ্দিন খলজি বা মহম্মদ বিন তুঘলক এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন ৷ মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে উলামাদের মধ্যে বিবাদ চরম আকার ধারণ করলেও সম্রাট আকবর ইবাদত খানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন । তাছাড়া উলেমাদের ব্যক্তিগত অহমিকা,লোভ-লালসা আকবরকে ব্যতীত করেছিল ৷ এই প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র লিখেছেন যে,"মুঘল যুগে বহু ভন্ড উলেমাদের প্রভাব ছিল ৷"
উলেমাদের ও ধত্য, অনামিকা, লোভ ও লালসার বিরুদ্ধে সম্রাট আকবর মহাজার জারি করেন ৷ আকবর নিজেকে রাষ্ট্রের শাসনের পাশাপাশি ধর্মীয় ব্যাপারেও প্রধান বলে দাবি করেন ৷ আকবরের বিরুদ্ধে উলেমারা বিদ্রোহের ফতোয়া দিলে উলামাদের এক অংশ বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্ত হয় । আকবর এদের কঠোর হাতে দমন করেন এবং যমুনা জলে ডুবিয়ে এদের হত্যা করেন ৷
মুঘল ভারতে উলিমাদের যথেষ্ট মান্যতা ছিল ৷ তাই আকবর তাদেরকে এক্কেবারে অবহেলা করতেন না ৷ মুঘল ভারতে এরা ভরণপোষণ বাবদ নিস্কর জমি পেত ৷ সবদিক থেকে উলিমাদের প্রভাব প্রতিপত্ত্ব বলবৎ ছিল ৷ কিন্তু জমি লাভের কারণে উলেমারা অলস হয়ে পড়ে এবং উৎপাদনমুখী কোন কাজ না করার আকবর এক নির্দেশ জারি করে ৷ নিষ্কর জমি কে অর্ধেক হবে আবাদি জমি এবং বাকি অর্ধেকটা হবে আবাদযোগ্য জমি ৷ এর ফলে আকবরের সঙ্গে উলেমাদের বিরোধ চরমে ওঠে ৷
আকবর প্রকৃতপক্ষে ধর্ম বিরোধী ছিলেন না ৷ আবার ধর্ম গোড়াও ছিলেন না ৷ আকবর মহাজার করে উলিমাদের হাত থেকে কোরআনকে নিজের হাতে নিয়েছিলেন ৷ তাই ঐতিহাসিক স্মিথ আকবরের মহাজার কে অভ্রান্ত কর্তৃত্ব ঘোষণা বলে মনে করেন ৷ যদিও এ.এল.শ্রীবাস্তবের মতে মহাজারকে অভ্রান্ত কতৃত্বের ঘোষণা বলে অভিহিত করা যথার্থ নয় ৷ তার মতে সম্রাট এই ঘোষণা দ্বারা কেবলমাত্র সংকীর্ণমতা মনা উলেমাদের ধর্মীয় গোড়ামী ও সহিষ্ণুতা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন ৷"
ঐতিহাসিক ইক্তিদার আলম খান মহাজার প্রসঙ্গে আকবরের দৃষ্টিভঙ্গি এবং উলেমাদের সম্পর্ক বিরোধের এক নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন ৷ ইক্তিদার আলম খান বলেছেন আকবর সারা বিশ্বের মুসলমান জনগোষ্ঠীর নেতা হতে ইচ্ছুক ছিলেন না তার লক্ষ্য ছিল ভারতে মুসলমানদের প্রধান রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ৷ যাইহোক আকবরের এইসব প্রাধান্য রক্ষণশীল উলেমাাদের বিরোধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷