দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জানো লেখো

দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জানো লেখো

 দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জানো লেখো

চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলোকেশীর কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর

খ্রিষ্টীয়  ৩০০ শতাব্দী থেকে ৭৫০ শতাব্দী সময়পর্বের আলোচনাসূত্রে দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনের মতো পরাক্রমশীল রাজার কৃতিত্ব আমাদের মূল আলোচ্য বস্তু। এসময়কালে পল্লবরাজশক্তির সগৌরবে রাজত্বকালীন পর্বে একাংশ আমরা জানব। এই বংশীয় রাজাদের অকৃপণ পৃষ্ঠপোষকতায় তামিল সাহিত্য, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অভূতপূর্ব বিকাশ হয়। একইসঙ্গে সমন্বয়ী সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। এর অন্যতম অংশীদার বলা যায় দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনকে।


পল্লবরাজ প্রথম পরমেশ্বরবর্মন পরলোকগমন করলে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় নরসিংহবর্মন রাজপরেরার এখন। পাবিবংশের একজন শ্রেষ্ঠ নরপতি ছিলেন তিনি এবং তাঁর অন্যতম জাপদে আমীন প্রনহো চিনা সুত্র থেকে জানা যায় যে, ৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধ প্রবণ বজ্রবোধির পরিদর্শনকালে কান্তীপুরমে তিন বছর ধরে দুর্ভিক্ষ চলে, এ সময়ই নরসিংহবর্মন বজ্রবোধির পরিদর্শ করেন। যদিও কোনও পল্লবলেখতে এই দুর্ভিক্ষের উল্লেখ নেই। তার দ্বিতীয় নন্দীবর্মার বেলুপালৈয়ম তাম্রশাসনে বলা হয়েছে, রাজসিংহ ব্রাহ্মণ পরিচালিত ঘাটিয়া বা শিক্ষা সংস্থাগুলিকে পুনর্গঠিত করেন। এই অমিত্রসন্ন, অতিরণচণ্ড, অপ্রতিবিক্রম রাজন নিজের বাহুবলে অসংখ্য শত্রুদের চূর্ণ করেছেন বলে কৈলাসনাথ মন্দিরলেখতে দাদি


করেছেন। সমকালীন চালুক্যরাজের সঙ্গে নরসিংহবর্মনের সংঘর্ষের সমর্থন পাওয়া যায় তেরলুন্ডুর বেঙ্কটরাম মহালিঙ্গমের কথায়। একইসঙ্গে তামিল কাব্য পেরিয়পুরাণমের সাক্ষ্য এই বক্তব্যের সমর্থক। নরসিংহবর্মন আবার কললনৃপতি কুররুবকে পরাজিত করে 'কালবিকম' অভিধা গ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে বায়লুর স্তন্তলেখে নরসিংহবর্মনের রাজ্যতে 'দ্বীপলক্ষম' রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। 'দ্বীপলক্ষম্' কথাটি লাক্ষাদ্বীপ অর্থেই গৃহীত হয়। চিনা ইতিবৃত্তে নরসিংহবর্মন সম্ভবত 'চে-লি-ন-লো-সেউ-কিয়া-পাও-তো-প-মো' নামে পরিচিত।


পল্লবরাজ নরসিংহবর্মন যে শৈবধর্মের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যাা। তাঁর লেখতে। সেখানে তিনি নিজেকে শংকরভক্ত, ভৈরবভক্ত ও অন্যান্য শৈব অভিধায় বর্ণনা করেছেন। এই শৈবভক্ত একইসঙ্গে অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাঁর সমকালীন দুই বিখ্যাত আচার্য হলেন সুন্দরর ও শঙ্করাচার্য। এছাড়া তিনি ছিলেন হস্তীবিদা পরাঙ্গম। জানা যায় যে, তিনি চতুর্বেদী ব্রাহ্মণদের অনুকূলে তিনি বহু জমি দান করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নতিকল্পে সদাজাগ্রত এই নৃপতি ছিলেন সংস্কৃত ও তামিল সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। তাঁর লেখগুলি কাব্য ও অলংকরণে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে সংগীতশাস্ত্রেও তাঁর প্রগাঢ় ব্যুৎপত্তি ছিল।


নরসিংহবর্মনের সময়কালে স্থাপত্য-ভাস্কর্যের উন্নতি আলোচনা না করলে অনেকটা অংশ অধরা থেকে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হল কাঞ্চীপুরমের কৈলাসনাথ ও ঐরাবতেশ্বর মন্দির, দক্ষিণ আর্কট জেলার পনমলৈর পুরীশ্বর মন্দির, মহাবলিপুরমের সমুদ্রতট মন্দির ও চিঙ্গলেপুট জেলার শালুবষ্ণুপ্লেমের অতিচরণচন্ডেশ্বর গৃহ তাঁরই সময় নির্মিত হয়। পল্লব স্থাপত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল কাঞ্চীপুরমের কৈলাসনাথ মন্দির। এই মন্দির চত্বরে মহেন্দ্রবর্মেশ্বরগৃহম্ সহ আরও ৫৮টি ক্ষুদ্রাকার মন্দির আছে। তবে সমুদ্রমুখী মন্দিরটি ক্ষুদ্রের মধ্যে বৃহত্তম। কৈলাসনাথ মন্দিরগাত্রে বিভিন্ন দেব-দেবীর সুদৃশ্য চিত্র রূপায়িত হয়েছে।


পরাক্রমশীলতা, শৈল্পিক সৌন্দর্যের এক অনন্য বিকাশ এবং মোক্ষম সময়ে সিংহাসন আরোহণের পরও সাম্রাজ্যের শ্রীবৃদ্ধি নরসিংহবর্মনকে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজার তকমা দিয়েছে। কেবল পল্লবরাজ্যের সম্প্রসারণ নয়, চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পল্লবরাজ্যকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করে। একইসঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাগতা। ভাস্কর্য ও বীরবিক্রমের সমন্বয় তাঁকে দক্ষ প্রশাসকের আসনে অমর করেছে।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জানো লেখো এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟