কলিঙ্গরাজ খারবেল-এর হাতিগুম্ফা লিপি
মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের সময় কলিঙ্গে চেদী বংশীয় মহা-মেঘবাহনের নেতৃত্বে মগধের অধীনতা ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়। এই বংশের তৃতীয় পুরুষ ছিলেন খারবেল।
খারবেল ভুবনেশ্বরের কাছে হাতিগুম্মা শিলালিপিটি তৈরি করেছিলেন। এই শিলালিপি থেকে খারবেলের কৃতিত্ব সেই সঙ্গে সমসাময়িক কালের সমাজ, ধর্ম, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়।
খারবেল কখন কলিঙ্গের সিংহাসন আরোহণ করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। হাতিগুম্ফা লিপিতে এই সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে, খারবেল ছিলেন প্রথম খ্রিস্টপূর্বাব্দের শেষের দিকের রাজা। তাঁর সমসাময়িক ছিলেন সাতবাহন রাজা প্রথম সাতকর্ণী।
![]() |
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার কানিংহাম দ্বারা কর্পাস ইন্সক্রিপ্টিওনাম ইন্ডিক্যারাম নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হাথীগুম্ফা শিলালিপি |
হাতিগুম্ফা শিলালিপিটি একটি প্রশস্তি। এতে খারবেল প্রতিবছর কী কী কাজ করেছেন তার বিবরণ দাওয়া আছে। এই লেখাটি রচিত হয়েছিল প্রাকৃত ভাষায়। এই লিপি থেকে জানা যায় যে, কলিঙ্গরাজ খারবেলের সমসাময়িক সাতবাহন রাজ্যটি ছিল মগধের পশ্চিমে দিকে। এই সময় রাজত্ব করতেন সাতবাহন রাজা প্রথম সাতকর্ণী। এই লিপি থেকে জানা যায় যে, নন্দরাজারা তানাসুলিতে একটি জলধারা তৈরি করেছিলেন। খারবেল ওই জলধারা থেকে খাল কেটে রাজধানী পর্যন্ত সেচের জন্য জল নিয়ে এসেছিলেন। এইভাবে কলিঙ্গে তিনি কৃষি, অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।
খারবেলের হাতিগুম্বা লিপি থেকে কলিঙ্গোর অগ্রসর অর্থনীতির কথা আমরা জানতে পারি। দক্ষিণ ভারতের থেকে কলিঙ্গ' অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে ছিল।
হাতিগুম্ফ শিলালিপিতে যে অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তা অশোকের ব্যবহৃত অক্ষরের থেকে অনেক উন্নত ছিল।
খারবেলের শিলালিপি থেকে ওই যুগের ভাস্কর্য প্রমাণ ছিল হাতিগুম্ফ শিলালিপিটি নিজেই। সেইসঙ্গে উদয়গিরি ছিল একটা উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।
ওই সময়ে কলিঙ্গে জৈনধর্মের অবস্থান সম্পর্কেও আমরা জানতে পারি যে, কলিঙ্গরাজ খারবেল নিজে জৈন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তিনি ভুবনেশ্বরের কাছে এই সংক্রান্ত একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন। হাতিগুম্ফা শিলালিপি থেকে মগধের রাজনৈতিক অবনতির কথা জানা যায়। ওই সময়ে যবন গ্রিক বা শকরা মগধ আক্রমণ করেছিল।
খারবেলের হাতিগুম্ফা শিলালিপি থেকে আমরা তৎকালীন যুগের একটি ঐতিহাসিক বিবরণ পেয়ে থাকি। সুতরাং, হাতিগুম্ফ শিলালিপিটিকে একটি ঐতিহাসিকই দলিল হিসাবে বিবেচনা করা যায়।