কুষাণসম্রাট কণিষ্ককে কী দ্বিতীয় অশোক বলা যায়?

কুষাণসম্রাট কণিষ্ককে কী দ্বিতীয় অশোক বলা যায়?

কুষাণসম্রাট কণিষ্ককে কী দ্বিতীয় অশোক বলা যায়?

কুষাণসম্রাট কণিষ্ককে কী দ্বিতীয় অশোক বলা যায়?


মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতীয় উপমহাদেশে কোনো বৃহৎ শক্তির একক আধিপত্য প্রায় ৫০০ বছর (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২০০-৩০০ খ্রিস্টাব্দ) দেখা যায় না; বরং আলোচা ভালপর্বে একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুত্র বেশীয় এবং বৈদেশিক শক্তিবর্গের যুগপৎ অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। এই শক্তিগুলি আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টায় পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত ছিল এবং কালরুমে যে বৈদেশিক শক্তিটি দীর্ঘ সংঘাতের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে একটি ঐক্যবন্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল সেটি হল কুযাগ জাতি। যারা মধ্য এশিয়া থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে (ব্যাকট্রিয়া) বসবাস করে এবং পরে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গো একাত্ম হয়ে যায়।


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

কুজুল কদফিসেস এবং বিম কনফিসেস-এর হাত ধরে কুষাণ সামাজ্য বিস্তারের যে সূত্রপাত হয়েছিল কদিভের আমলে তা পূর্ণতা পায়। ৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিংহাসনে আসীন হবার পর তিনি ধীরে ধীরে মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান ও উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তিনি দখল করেন এবং সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তি প্রমান করেন। অধুনা আবিষ্কৃত আফগানিস্তানের রবাতক শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, কুষাণ সাজাজ্য মধ্য এশিয়ার কাশগড়, সাদিয়ানা থেকে পূর্ব ভারতের শ্রীচম্পা অর্থাৎ, ভাগলপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। জলছ চিনে হান সাহাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেছিলেন কিন্তু পরাজিত হন। কণিছের আমলেই কুষাণ জাতিরা যাযাবর গোষ্ঠী থেকে স্থায়ী সাগাজ্যের বুপকারে পরিণত হ্যা এবং উপমহাদেশ পুনরায় একটি ঐকাব্য সাম্রাজ্যের সাক্ষী হয়ে ওঠে।


সুবিশাল সান্ডাজ্যের প্রশাসনিক সুবিধার জন্য কণিষ্ক তাঁর সাম্রাজ্যকে বেশ কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক বিভাগের শাসনকার্য কখনও একজন, কখনো দুজন প্রশাসকের হাতে ন্যস্ত করেন যা ক্ষরণ বা মহাক্ষরূপ নামে পরিচিত ছিল। তবে কুষাণ শাষনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল দ্বৈত শাসনব্যবস্থা। যেটি কণিছের সময় থেকে পরিলক্ষিত হয়। এই শাসন কাঠামোয় সম্রাটের সহযোগী শাসক হিসাবে কখনো পুত্র বা পৌত্ররা শাসন করতেন। মুদ্রাগত তথ্য এবং শিলালেখ থেকে জানা যায় যে, কণির এবা বাসিদ্ধ একদলো কিছুকাল শাসন করেছিলেন। রাজতান্ত্রিক শাসনে এই ধরনের ব্যবস্থা ছিল সত্যিই অভিনব এবং এই ব্যবস্থায় পরবর্তী শাসকের আগাম বার্তা প্রতিফলিত হত এবং সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার সুনিশ্চিত হত।


একজন সুবিজেতা ও সাম্রাজ্জের রূপকার হিসাবে কণিষ্ক যতটা খ্যাতি পেয়েছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি খ্যাত হয়ে আছেন তাঁর সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ ও বৌনন্দধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য। মৌর্য আমলে বিশেষত অশোকের সময়ে বৌদ্ধধর্মের যে প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল শুদ্ধ-কাদ্বযুগে তা কিছুটা প্রিয়মান হয়ে পড়লেও কুষাণযুগে কণিতের পৃষ্ঠপোষকতায় তা বেশ সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে। কণিষ্ক যে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তার ইঙ্গিতে আছে উৎকীর্ণ লেখে ও মুদ্রায়। রাজধানী পেশোয়ারে সুউচ্চ মিনার এবং সঘোরাম নির্মাণ করে তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশ করেন। বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির এক বড়ো কেন্দ্র ছিল কণিষ মহাবিহার। সোয়ান সাজ এবং আলাবিবুণি তাদের ভ্রমণ বৃত্তান্তে এই বিহারের উল্লেখ করেছেন। বৌদ্শদের মধ্যে মতবিরোধ ও সলাদানিং দুর করার জন্য তিনি কাশ্মীরে (মতান্তরে জলখরে) চড়গ বৌদ সম্মেলন আহবান করেন পণ্ডিত বন্ধুমিত্রের সভাপতিত্বে। এই সমস্ত কার্যাবলির প্রতি লক্ষ রেখে ঐতিহাসিক হেনচন্দ্র প্রারাটৌধুরি বলেছেন, "বদিছের খ্যাতি ততটা রাজাজয়ে নেই যতটা আছে শাক্যমুনির বর্ষের পৃষ্ঠপোষকতায়।” বৌলবর্মের প্রতি অনুষস্ত হবার মূলে অধঘোষের প্রভাব ছিল বলে তিনি মতপ্রকাশ করেছেন।


সৌন্দধর্মের প্রতি অনুরত্ব হওয়া সত্ত্বেও কশিদ্ধ ছিলেন পরবর্মসহিছু শাদক। তাঁর মুত্রায়। যেমন শাক্যমুনি বুদ্ধের স্মৃতি উৎকীর্ণ আছে, তেমনি চিক, পারনিক, সুমেরীয় ও ব্রাহণ দেবদেবীর মূর্তিও খোদিত আছে। ই. জে. র‍্যাপসন বলেছেন, বৃহত্তর কুষাণ সাম্রাজ্যের। বিভিন্ন প্রদেশে নানা ধর্মের প্রচলন ছিল। সুতরাং বলা যায় যে, বৌদ্ধধর্মের প্রতি করিছের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও প্রলা থাকা সত্ত্বেও অবৌদ বিভিন্ন ধর্মের প্রতি তিনি ধর্ম সহিষ্কৃতায় উদারনীতি অনুসরণ করেছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি Cull of the Empire-co Cult of the Emperor-এর সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেননি। ফলত, তাঁর সাজাজ্যে বহু সমাবেশ সম্ভব হয়েছিল। ধর্মের একত্রে


কণিষ্ক তাঁর সাম্রাজ্যে আন এবং বিদ্যাচর্চাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বহু জ্ঞানীগুণী মানুষজনের সমাবেশ ঘটেছিল তাঁর সভায়। অশ্বযোয়, পার্শ্ব এবং বসুমিত্রের মতো বৌদ দার্শনিকদের তিনি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। মহাযান মতের অনুসারী নাগার্জুন তাঁর অনুগ্রহ লাভ করেছিল। বিখ্যাত পণ্ডিত সংঘরক্ষ তাঁর রাজসভায় স্থান লাভ করেছিলেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে সুপণ্ডিত চরক তাঁর সমসাময়িক ছিলেন এবং বিশেষ মর্যাদা লাভ করেন। কণিদ্ধের সময় কুষাণ সাম্রাজ্য জ্ঞানেরও বিদ্যাচর্চার পীঠস্থানে পরিণত হয়।


সুতরাং, ওপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, কুষাণসম্রাট কণিদ্ধ একজন শাসকোচিত গুণের পাশাপাশি ধার্মিক, নিষ্ঠাবান, বিদ্যোৎসাহী, প্রজাকল্যাণের মতো বহু কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন। এই সমস্ত গুণাবলির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে অনেক ঐতিহাসিক কশিক্ষকে মৌর্ঘসম্রাট অশোকের সঙ্গে তুলনা করে তাঁকে 'দ্বিতীয় অশোক' বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু স্মরণে রাখা দরকার, অশোক ছিলেন তাঁর সময়কার একজন শ্রেষ্ঠ ব্যস্তিত্ব, আশোকের রাষ্ট্রনৈতিক প্রজ্য, বিচক্ষণতা এবং বৌনন্দধর্মকে যেভাবে তিনি বিশ্বধর্মে পরিণত করেছিলেন, পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মের মূল দুই বাণী-শান্তি ও অহিংসা-আদর্শরূপে গ্রহণ করে সমগ্র ভারতবর্ষ তথা বিশ্বে এক অনন্য নজির তৈরি করেছিলেন, তা এককথায় অতুলনীয়। তাই নিরপেক্ষ বিচারে বলা যায় যে, কুষাণসম্রাট কষিদ্ধ বৌদ্ধধর্মকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং তার পূর্ব মর্যাদা পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অশোকের মতো রাজধর্মে পরিণত করেননি। তিনি অশোকের দেখানো পথের পথিক ছিলেন। দ্বিতীয় অশোক নয়। ইতিহাসে অশোক পৃথক মর্যাদার অধিকারী, অন্যদিকে কণিষ্ক স্বতন্ত্র কৃতিত্বের দাবিদার। দুই বাড়ি ভিএ সমারের, তাই দুইজনের গুরুত্বও ছিল ভিন্ন।







তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কুষাণসম্রাট কণিষ্ককে কী দ্বিতীয় অশোক বলা যায়? এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟