স্পেনে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে স্পেনে চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় । এই অবস্থায় সামরিক শাসক প্রাইমো-ডি-রিভেরা (১৯২৩-৩০ খ্রি.) দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
স্পেনের গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত
স্পেনে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে পপুলার ফ্রন্ট নামে জোট সরকার গঠিত হয় । এই সরকারের বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থীরা দেশের নানা স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধায়। বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বেশ কিছু সামরিক কর্মচারীকে বরখাস্ত, বদলি বা অবসর গ্রহণে বাধ্য করে । জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পাঠানো হলে সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক বিভাগে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ।
দক্ষিণপন্থী বিভিন্ন দল, জমিদার, বুর্জোয়া, যাজকরা ক্ষুদ্ধ সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে । মরক্কোয় অবস্থানকারী স্পেনীয় সেনাদল ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । এই বিদ্রোহে নেতৃত্বে দিতে জেনারেল ফ্রাঙ্কো মরক্কোয় উপস্থিত হন । স্পেন সরকারের বিরুদ্ধে উক্ত বিদ্রোহে প্রজাতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্টরা সরকার পক্ষকে সমর্থন করে ৷ অন্যদিকে ফ্যালানজিস্ট, ন্যাশনালিস্ট, কালিস্ট প্রভৃতি দক্ষিণপন্থী দল, শিল্পপতি, ভূস্বামী ও যাজকরা জেনারেল ফ্র্যাঙ্কোকে সমর্থন করে । ফলে স্পেনে উভয় পক্ষের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্পেন দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা 'জাতীয়তাবাদী' এবং সরকারের সমর্থকগণ প্রজাতন্ত্রী' নামে পরিচিত হয় । স্পেনের গৃহযুদ্ধে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ নিহত এবং দেশছাড়া হয় । ইউরোপের বিভিন্ন দেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় ঐতিহাসিক ল্যাংসাম এই গৃহযুদ্ধকে 'ক্ষুদ্র বিশ্বযুদ্ধ' বলে অভিহিত করেছেন।
স্পেনের গৃহযুদ্ধের গুরুত্ব/ফলাফল উল্লেখ করো।
স্পেনে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী পক্ষ এবং প্রজাতন্ত্রী সরকারের মধ্যে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের (১৯৩৬-৩০ খ্রি.) পর ফ্রাঙ্কো সেদেশের শাসনক্ষমতা দখল করেন এবং একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
স্পেনের গৃহযুদ্ধের গুরুত্ব/ফলাফল
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
স্পেনের গৃহযুদ্ধের গুরুত্ব/ফলাফলগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-
স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্রাঙ্কোর পক্ষে অংশ নিয়ে জার্মানির হিটলার আসন্ন বিশ্বযুদ্ধের আগে তাঁর অস্ত্রশস্ত্র ও বিমানবাহিনীর শক্তি পরীক্ষার সুযোগ পান । তাই এই গৃহযুদ্ধকে 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া' বলা হয় ।
বিদ্রোহী নেতা জেনারেল ফ্রাঙ্কো জয় লাভ করে স্পেনে একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। একনায়ক ফ্রাঙ্কো জার্মানির একনায়ক হিটলার এবং ইটালির একনায়ক 'মুসোলিনির পক্ষ গ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হিটলার-মুসোলিনি জোটের শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
স্পেনের গৃহযুদ্ধে নিরপেক্ষ থেকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক পরাজয় ঘটে । কারণ, জার্মানি ও ইটালি এই গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিপত্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি করেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ থেকে হিটলার বুঝতে পারেন যে. ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি আপাতত তাঁর বিবৃদ্ধে যাবে না । তাই তিনি চেকোস্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ড আক্রমণের সাহস পান ।
স্পেনের গৃহযুদ্ধে জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে । ফলে জাতিসংঘের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন বলেছেন যে, স্পেনের গৃহযুদ্ধের দ্বারা মুসোলিনি নন, প্রকৃত লাভবান হন হিটলার ৷"