মনসবদারি প্রথা আকবর কেন প্রবর্তন করেছিল ?মনসবদারের বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক ভিত্তি বিশ্লেষণ কর অথবা, মনসবদারি ব্যবস্থা মুঘল শাসন ব্যবস্থা কে কিভাবে সুগঠিত করেছিল
![]() |
Image source:- The Custodions |
অধ্যাপক ক্যায়সর উল্লেখ উল্লেখ করেছেন যে আকবরই প্রথম মনসবদারী প্রথা চালু করেন এবং এর পেছনে আকবরের কিছু উদ্দেশ্য ছিল, যেমন-
প্রথমতঃ আকবর তার রাজত্বকালের এক দশম অংশ বছর তার রাজকর্মচারীদের ওপর কিছু নির্দিষ্ট সামরিক দায়িত্ব চাপানোর কথা বলেন এবং কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার চেষ্টা করেন ৷ যাতে তারা তাদের জায়গীর থেকে উপার্জন অনুযায়ী কিছু সংখ্যক সৈন্য সামন্ত রক্ষণাবেক্ষণ করে ৷
দ্বিতীয়তঃ সামরিক দিক থেকে মনসবদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে সামরিক ব্যবস্থাকে সংগঠিত করার বিশেষ প্রয়োজন ছিল ৷ কেননা সাওয়ার পদ অনুযায়ী মনসবদারেরা অনেক সময় নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য বজায় রাখতেন না । এই কারণে আকবর মনসবদারদের পদ অনুযায়ীকে কত সংখ্যক সওয়ার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তা ঠিক করে দেন ৷
মনসবদারি ব্যবস্থা সংগঠিত করার পেছনে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছিল
প্রথমতঃ আকবরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটি সমন্বিত শাসক শ্রেণীর গড়ে তোলা আকবর মনসবদার ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে শাসক গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন ।
দ্বিতীয়তঃ সম্প্রতি দগলাস মন্তব্য করেছেন যে আকবর সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসাবে মনসবদারি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলিকে সংগঠিত করেন এবং সম্রাটের সাথে মনসবদারের সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্রাটের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
তৃতীয়তঃ আকবর মনসবদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে মুঘল রাজকর্মচারীদের সমজাতীয় বেতন কাঠামো প্রবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহন করেন ৷
১৫৬৭ সালে আকবর মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন করেন ৷ মনসব শব্দের অর্থ হলো পদমর্যাদা ৷ সাম্রাজ্যের শাসন কাঠামে অবস্থান অনুযায়ী একজন অধীনে কত সৈন্য থাকবে তাও তার পদমর্যাদা নির্দিষ্ট করে দিত ৷ মনসবদার হলেন সাম্রাজ্যের স্বগোষ্ঠী সামরিক ও বেসামরিক দুই ধরনের দায়িত্ব তাদের পালন করতে হতো ৷ দুই ভাবে মনসবদারদের বেতন দেয়া হতো কিছু মনসবদার নগদে বেতন পেতেন, তারা হলেন নগদী ৷ আর বেশিরভাগ মনসব বেতন হিসাবে ভূমি রাজস্বের বরাদ পেতেন এগুলিকে বলা হতো জায়গীর ৷ অধ্যাপক রায় বলেছেন যে মনসবদারকে সবার ক্ষেত্রে সামরিক কর্তব্য পালন বাধ্যতামূলক ছিল না ।
সর্বনিম্ন মনসবদারদের অধীনে ১০ জন এবং সর্বোচ্চ মনসবদার এর অধীনে পাঁচ হাজার সৈন্য থাকত ৷ পাঁচ থেকে দশ হাজার মনসবদার সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া কেবল রাজপুতদের জন্যই সংরক্ষিত থাকতো ৷ এছাড়াও সম্রাটদের জন্যই ৭০০০ মনসবদারীর দ্বারা সম্মানিত হতে পারতেন ৷ বাস্তব ক্ষেত্রে মনসবদারদের ৩৩ টি শ্রেণী গঠন ছিল মনসবদারদের পদে নিয়োগ পদোন্নতি সবই সম্রাটের ইচ্ছার উপর নির্ভর করত ৷
মনসবদার ব্যবস্থার আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল ৷ যথা জাট ও সওয়ার ৷ জাট হলো অফিসারদের পদমর্যাদা আর সওয়ার হল তার অধীনস্থ সওয়ার দিয়ে অধিনস্ত সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হতো ৷ ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদ এর মতে জাটপদ মনসবদার এর ব্যক্তিগত পদমর্যাদার সূচক ৷ আর সওয়ার ছিল তার অধীনে রক্ষিত অতিরিক্ত সৈন্যবাহিনীর সূচক ৷
উপরিউক্ত আলোচনা শেষে এ কথা বলা যায় যে মনসবদারি প্রথাকে একটা সুনিশ্চিত সুগঠিত এবং রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক দিক থেকে স্থায়ী ও শুষ্ক পদ্ধতি হিসেবে গঠনের গ্রহণ করা হয়তো কষ্টকর ৷ তা সত্ত্বেও একথা অনস্বীকার্য যে আকবরের মনসবদারি ব্যবস্থা ছিল এক উজ্জলতম অভিনব পদ্ধতি ৷ আকবরের এই মনসবদারি ব্যবস্থা মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতি ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছিল ৷