মনসবদারি প্রথা আকবর কেন প্রবর্তন করেছিল ?মনসবদারের বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক ভিত্তি বিশ্লেষণ কর অথবা, মনসবদারি ব্যবস্থা মুঘল শাসন ব্যবস্থা কে কিভাবে সুগঠিত করেছিল

মনসবদারি প্রথা আকবর কেন প্রবর্তন করেছিল ?মনসবদারের বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক ভিত্তি বিশ্লেষণ কর অথবা, মনসবদারি ব্যবস্থা মুঘল শাসন ব্যবস্থা কে কিভাবে সুগঠিত

মনসবদারি প্রথা আকবর কেন প্রবর্তন করেছিল ?মনসবদারের বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক ভিত্তি বিশ্লেষণ কর অথবা, মনসবদারি ব্যবস্থা মুঘল শাসন ব্যবস্থা কে কিভাবে সুগঠিত করেছিল

মনসবদারি প্রথা আকবর কেন প্রবর্তন করেছিল ?মনসবদারের বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক ভিত্তি বিশ্লেষণ কর অথবা, মনসবদারি ব্যবস্থা মুঘল শাসন ব্যবস্থা কে কিভাবে সুগঠিত করেছিল
Image source:- The Custodions
মুঘল আমলে প্রশাসনিক পদবিন্যাসের তালিকার উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো মনসবদার ৷ আকবর বিশাল ভারত সাম্রাজ্য গঠনের পর রাজ সেবার ঐতিহ্য গঠনের যে ব্যাপক কর্মসূচি নেন তারই ফলশ্রুতি হিসাবে এদেশে মনসবদারী প্রথার প্রচলন ঘটে, ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড তার প্রবন্ধ এবং আব্দুল আজিজ তার গ্রন্থে মনসবদারির মনসবদারি বৈশিষ্ট্য গুলি ব্যাখ্যার প্রথম চেষ্টা করেন ৷ পরবর্তীকালে অধ্যাপক আতাহার আলি তার"The Mughal nobility under Aurangzeb' গ্রন্থে এবং ইরফান হাবিব- "The Mansab system" প্রবন্ধে পূর্ববর্তী অভিমতের পরিমার্জন ও সংশোধন করেন ৷

 

অধ্যাপক ক্যায়সর উল্লেখ উল্লেখ করেছেন যে আকবরই প্রথম মনসবদারী প্রথা চালু করেন এবং এর পেছনে আকবরের কিছু উদ্দেশ্য ছিল, যেমন-

প্রথমতঃ আকবর তার রাজত্বকালের এক দশম অংশ বছর তার রাজকর্মচারীদের ওপর কিছু নির্দিষ্ট সামরিক দায়িত্ব চাপানোর কথা বলেন এবং কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার চেষ্টা করেন ৷ যাতে তারা তাদের জায়গীর থেকে উপার্জন অনুযায়ী কিছু সংখ্যক সৈন্য সামন্ত রক্ষণাবেক্ষণ করে ৷


দ্বিতীয়তঃ সামরিক দিক থেকে মনসবদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে সামরিক ব্যবস্থাকে সংগঠিত করার বিশেষ প্রয়োজন ছিল ৷ কেননা সাওয়ার পদ অনুযায়ী মনসবদারেরা অনেক সময় নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য বজায় রাখতেন না । এই কারণে আকবর মনসবদারদের পদ অনুযায়ীকে কত সংখ্যক সওয়ার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তা ঠিক করে দেন ৷


মনসবদারি ব্যবস্থা সংগঠিত করার পেছনে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছিল

প্রথমতঃ আকবরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটি সমন্বিত শাসক শ্রেণীর গড়ে তোলা আকবর মনসবদার ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে শাসক গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন ।


দ্বিতীয়তঃ সম্প্রতি দগলাস মন্তব্য করেছেন যে আকবর সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসাবে মনসবদারি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলিকে সংগঠিত করেন এবং সম্রাটের সাথে মনসবদারের সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্রাটের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ৷


তৃতীয়তঃ আকবর মনসবদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে মুঘল রাজকর্মচারীদের সমজাতীয় বেতন কাঠামো প্রবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহন করেন ৷


১৫৬৭ সালে আকবর মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন করেন ৷ মনসব শব্দের অর্থ হলো পদমর্যাদা ৷ সাম্রাজ্যের শাসন কাঠামে অবস্থান অনুযায়ী একজন অধীনে কত সৈন্য থাকবে তাও তার পদমর্যাদা নির্দিষ্ট করে দিত ৷ মনসবদার হলেন সাম্রাজ্যের স্বগোষ্ঠী সামরিক ও বেসামরিক দুই ধরনের দায়িত্ব তাদের পালন করতে হতো ৷ দুই ভাবে মনসবদারদের বেতন দেয়া হতো কিছু মনসবদার নগদে বেতন পেতেন, তারা হলেন নগদী ৷ আর বেশিরভাগ মনসব বেতন হিসাবে ভূমি রাজস্বের বরাদ পেতেন এগুলিকে বলা হতো জায়গীর ৷ অধ্যাপক রায় বলেছেন যে মনসবদারকে সবার ক্ষেত্রে সামরিক কর্তব্য পালন বাধ্যতামূলক ছিল না ।


সর্বনিম্ন মনসবদারদের অধীনে ১০ জন এবং সর্বোচ্চ মনসবদার এর অধীনে পাঁচ হাজার সৈন্য থাকত ৷ পাঁচ থেকে দশ হাজার মনসবদার সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া কেবল রাজপুতদের জন্যই সংরক্ষিত থাকতো ৷ এছাড়াও সম্রাটদের জন্যই ৭০০০ মনসবদারীর দ্বারা সম্মানিত হতে পারতেন ৷ বাস্তব ক্ষেত্রে মনসবদারদের ৩৩ টি শ্রেণী গঠন ছিল মনসবদারদের পদে নিয়োগ পদোন্নতি সবই সম্রাটের ইচ্ছার উপর নির্ভর করত ৷


মনসবদার ব্যবস্থার আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল ৷ যথা জাট ও সওয়ার ৷ জাট হলো অফিসারদের পদমর্যাদা আর সওয়ার হল তার অধীনস্থ সওয়ার দিয়ে অধিনস্ত সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হতো ৷ ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদ এর মতে জাটপদ মনসবদার এর ব্যক্তিগত পদমর্যাদার সূচক ৷ আর সওয়ার ছিল তার অধীনে রক্ষিত অতিরিক্ত সৈন্যবাহিনীর সূচক ৷


উপরিউক্ত আলোচনা শেষে এ কথা বলা যায় যে মনসবদারি প্রথাকে একটা সুনিশ্চিত সুগঠিত এবং রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক দিক থেকে স্থায়ী ও শুষ্ক পদ্ধতি হিসেবে গঠনের গ্রহণ করা হয়তো কষ্টকর ৷ তা সত্ত্বেও একথা অনস্বীকার্য যে আকবরের মনসবদারি ব্যবস্থা ছিল এক উজ্জলতম অভিনব পদ্ধতি ৷ আকবরের এই মনসবদারি ব্যবস্থা মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতি ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছিল ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟