মথুরা শিল্পকলা সম্পর্কে আলোচনা কর
শ্রীকৃষ্ণ স্মৃতি বিচারিত মথুরা নগরীর নাম ভারতের ইতিহাসে সুপরিচিত ৷ খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের মধ্যে এখানে বিকশিত শিল্পধারা মথুরা শিল্প নামে পরিচিত ৷ এই শিল্পধারার শিল্পী ও বুদ্ধ জীবনের তাৎপর্য ও বুদ্ধচরিত দৃঢ়তা এবং সংস্কৃতি এবং মুক্তির পথদর্শক বুদ্ধদেবকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
কুষাণদের পৃষ্ঠপোষকতায় যেমন গান্ধারের একটি শিল্পনীতি গড়ে উঠেছিল ঠিক তেমনি মথুরাতেও কুষাণদের সময়কালে একটি শিল্প রীতি গড়ে উঠেছিল যা মথুরা শিল্প নামে পরিচিত ৷ মথুরা শিল্পের মূল বিষয়বস্তু ছিল বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম ৷ মথুরা শিল্পে বুদ্ধমূর্তিগুলোর নির্মাণের শিল্পীরা অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন ৷ মথুরা শিল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যথা (১). মথুরা নগরীকে কেন্দ্র করে এই শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল ৷ (২). গান্ধারের মতো মথুরা শিল্পেও বুদ্ধমূর্তি তৈরি রীতি প্রচলিত ছিল ৷ (৩). এই শিল্পরীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করা হয়েছিল ৷ (৪). মথুরার সমস্ত শিল্প ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল লাল বেলে পাথর দিয়ে ৷ (৫). মথুরা শিল্পে বুদ্ধ ও বৌধী সত্য মূর্তিগুলির মুখমণ্ডল গোল আকারের হতো ৷ (৬). কনিষ্কের মস্তক বিহীন দণ্ডায়মান মূর্তিটি মথুরা শিল্প রিতির এক নিদর্শন ৷ (৭). মথুরার শিল্প ছিল সম্পূর্ণ ভারতীয় ভাবধারায় পুষ্ট ৷ (৮). মথুরা শিল্পের মূল বিষয়বস্তু ছিল বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম ৷
কুষাণ যুগের মথুরা শিল্পে বুদ্ধ ও বধিসত্ত্ব মূর্তি গুলি অফুরন্ত শক্তি ও পান ছলনতায় ভরপুর ৷ বুদ্ধের মস্তক গোলাকার মুন্ডিত এবং গোফববিহীন মুখে স্মৃতিহাসি ডান হাত অভয় মুদ্রা ভঙ্গিতে এবং বাম হাত উরুর ওপর রাখা চওড়া কাঁদ ও বুক সামনের দিকে ফোলানো, শরীরের পোশাক কিছুটা ভাঁজ অবস্থায় । শুধু বুদ্ধ মূর্তি নয় জৈন তীর্থ করদের মূর্তি ও মথুরা শিল্পে স্থান পেয়েছে, যেমন মহাবীর,ঋষভনাথ, সম্ভব নাথ প্রমুখদের মূর্তি ৷ ইতিহাসের পাতায় সম্রাট কনিষ্কের মস্তক বিহীন যে মূর্তিটি আমরা দেখি তা মথুরা শিল্পের নিদর্শন ৷
মথুরা শিল্পের মধ্যে ভারতীয় শিল্প ঐতিজ্যের ধারাবাহিকতা প্রতিফলিত হয় ৷ ভারতীয় শিল্পের ক্ষেত্রে মথুরা তৈরি ভাস্কর্য গুলি অতি সহজেই চেনা যায় ৷ মথুরা ও তার নিকটবর্তী স্থানে লাল পাথর খোদাই করেই এই মূর্তিগুলি তৈরি হয় এবং এই বিশেষ ধরনের লাল পাথরের গায়ে থাকত সাদা ও হলদে রঙের দাগ ৷
মথুরার মূর্তি গুলির সাজসজ্জা ও অলংকরণ ইত্যাদিতে পারস্য দেশীয় প্রভাব বর্তমান ৷ তবে মথুরার শিল্পীরা, কোন বিশেষ বা বৈদেশিক লক্ষণ গ্রহণ করেনি । রাজার মূর্তিতে শক্তিমত্তা বীরত্ব কাটিনত্ব ভাব বজায় থাকলেও অলংকরণে মথুরা শিল্পী অবহেলা দেখায়নি ৷ মথুরা শিল্পের প্রধান ভাবধারা ভারতীয় ভাবনাধারা পুষ্ট ছিল ৷ রোমান প্রভাব মথুরা শিল্পকে কিছুটা স্পর্শ করলেও এর মৌলিক চরিত্র কে পরিবর্তন করতে পারেননি ৷
সর্বশেষে বলা যায় সব কুষাণ যুগে মথুরা নগরকে কেন্দ্র করে মথুরা শিল্প গড়ে উঠেছে ৷ এই শিল্প কুষাণ যুগের আমলে যথেষ্ট খ্যাতীয় সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছিল ৷ মথুরা শিল্প আজও শিল্পমনা মানুষের যুগলকে সমৃদ্ধি করে ৷ তাই প্রাচীন ভারতের শিল্প হিসাবে মথুরা শিল্পের অবদানকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যায় না ৷