মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।

মুঘল চিত্রকলা :- 

ভারতবর্ষের মুঘল শাসকরাই প্রথম তরবারি, কলম ও ছবি আঁকার তুলিকে সমান মর্যাদা দিয়েছিলেন । কালজয়ী স্থাপত্যের পাশাপাশি মুখল চিত্রশৈলিও এক অভাবনীয় মর্যাদার সমান অধিকার করেছিল ।


                 পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সম্রাট বাবরের জয়লাভের বহু পূর্বেই ভারতবর্ষের জৌনপুর, মান্ডু, আহমেদাবাদ প্রভৃতি স্থানের মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা "মিনিয়েচার" চিত্রর বিকাশ ঘটেছিল । ভারতীয় এই মিনিয়েচার চিত্রশৈলি মুঘলদের সংস্পর্শে পারসিক চিত্র রসে সিক্ত হয়ে এক নব জীবন লাভ করে । সম্রাট হুমায়ুন, আকবর উভয়েই পারস্যের শিল্পরীতি দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এবং পারস্য থেকে অনুচিত্র আমদানি করে ছিলেন । মুঘল রাজত্বকালে অধিকাংশ ছবিই ছিল "অনুচিএ' । এগুলি দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখা হত না । এইসব ছবি কাগছে আঁকা হত । অনেক সময় পুঁথির অভাংকার হিসেবে এগুলি ব্যবহৃত হত। কিন্তু মসজিদ বা প্রাসাদের দেওয়ালে এই ধরনের ছবি শোভা পেত না । অনুচিত্র আঁকার জন্য যেসব কাগজ ব্যবহার করা হত, তা সব সময় একরকম হত না । যেমন- সম্রাট আকবরের রাজত্বের শেষ দিকে শিল্পীরা চক্‌চকে ও শক্ত কাগজের ব্যবহার পছন্দ করতেন । অন্য দিকে শাহজাহানের আমলে শিল্পীরা পাতলা ও দামী এবং সম্ভবত রেশমের তন্তু থেকে তৈরী কাগজ ব্যবহার করতেন ।



বাবর :--

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।
Image source:Wikipedia



মুঘল সম্রাট বাবরকে মাত্র চার বছর রাজত্বের মধ্যেই তিনি তিনটি যুদ্ধে ব্যস্ত থাকয় ৷ তাঁর শিল্পচর্চার দিকে নজর ও সময় কম ছিল । তবে তিনি শিল্পী মনের অধিকারী ছিলেন। রাজদরবারে চিত্রশিল্পীর পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। সমকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারত চিত্রকলা শিল্পে তাঁর প্রভাব ও অবদান প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোভাবে অনুভূত হয়েছে ।



হুমায়ুন :-

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।
 Image source:Wikipedia


ভাগ্য বিড়ম্বিত হুমায়ুনের দীর্ঘ ১৫ বছর সময় তাঁকে নির্বাসনে যাযাবর জীবনে বেছে নিতে হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় চিত্রকলার ইতিহাসে এই নির্বাসন গুরুত্বহীন ছিল না। পারসিক রাজদরবারে সঞ্জীদ নির্বাসনে থাকাকালীনই হুমায়ুন পারস্যের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মীর সৈয়দ আলিকে দিয়ে "দাস্তা-ই-আমির- হামজা' নামক একটি কাব্যে ছবি আঁকান ৷




আকবর :- 

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।
Image source:Wikipedia



সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে মুঘল শিল্পকলার যাত্রা শুরু হয়। আকবরের রাজত্বকালে মুঘল চিত্রশিল্পীরা  ক্রমশ পারসিক রীতি নীতি থেকে মুক্ত হয়ে ফুল, গাছ, লতাপাতা ও সৌন্দর্য দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে ছবি আঁকতে শুরু করেন । আকবরের আমলে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শিল্পীরাই সমানভাবে রাজানুগৃহীত হতেন । তাঁর রাজ্যসভার ১৭ জন চিত্রকর ছিলেন । তাঁদের মধ্যে ১৩ জনই হিন্দু । ফতেহপুর সিক্রির বিভিন্ন প্রাসাদের দেওয়ানে সুন্দর চিত্রাঙ্কনে উৎসাহ দেন । আকবরের আমলে চিহ্নিত পুঁথির মধ্যে প্রাচীনতম 'হামজা নামা' রচিত হয়। আকবরের উদারতা, ধর্মনিরপেক্ষ মন ও সমন্বয়ী মন পারসিক ও ভারতীয় শিল্পরীতির সমন্বয়ে মুঘল চিত্রাঙ্কন শিল্পের ভিত রচনা করে ।


 তিনি শুধু শিল্পের কদর ও শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতাই করেননি, চিত্রশৈলীর সঙ্গে যে তার কারিগরি দিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ সেবিষয়েও তিনি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন । ছবি আঁকার উপকরণ যাতে শিল্পীরা নায্য দামে কিনতে পারে ভাবা গুলির মানও যাতে উন্নত হয় সেদিকেও আকবরের সজাগ দৃষ্টি ছিল । বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ যাতে যথাযেল ও শিল্পসশত হয়, সেইদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয় ।


জাহাঙ্গীর

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।
Image source:Wikipedia




জাহাঙ্গীর ছিলেন চিত্রকলার প্রকৃত সমজদার। তাঁর আমলে চিত্রশিল্পের প্রকৃত উন্নতি হয়। জাহাঙ্গীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূজারী ছিলেন। প্রকৃতি চিএ ছাড়াও তিনি ইসলাম আদর্শ বিরোধী প্রতিকৃতি অঙ্কনেরও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন । জাহাঙ্গীরের আসলে শিরারের ছবি, দুষ্প্রাপ্য ফুলের ছবি, জীবজন্তুর ছবিগুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করে । অঙ্কিত জীব জন্তুর ছবির মধ্যে সম্ভবত শ্রেষ্ঠ ছবি একটি টার্কি মোরগ যার রঙ, নাকসা সব কিছুই দেখার মত। বিষয় বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে ভাবচিএ গড়ে ওঠে জাহাঙ্গীরের আমলে। ব্লু "পকধর্মী চিত্রকলার মধ্যে " জাহাঙ্গীর বিদ্বান কে সম্মান দিচ্ছেন' বা 'শাহজাহান ভূ-মন্ডলে দণ্ডায়মান" ➡ এই রূপকধমী চিএগুলি মুঘল অঙ্কন রীতিতে মৌলিক বলা যায়। জাহাঙ্গীরের আমলে চিত্রকলার এক স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে পাড় চিত্রণ বিকাশ লাভ করে । আলংকারিক ও জ্যামিতিক আকার ছাড়াও ভূ-দৃশ্য, পশুপাখি, মানুষ, প্রাকৃতিক পুষ্পিত পাতা, পাশ্চাত্য কাঁচ ও খোদিত চিত্রাবলীর অঙ্কন বিশেষ কদর লাভ করতে থাকে। নিঃসন্দেহে জাহাঙ্গীরের আমলে মিনিয়েচার চিত্রাঙ্কন উন্নতির চরম সীমা স্পর্শ করে ।



শাহজাহান

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।
Image source:Wikipedia




শাহজাহানের দরবারের আসফ খাঁ ছিলেন চিত্রশিল্পের অনুরাগী, সাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকোহ প্রতিকৃতি অঙ্কনে উৎসাহী ছিলেন। শাহজাহানের আমলে আঁকা ছবিগুলির মেজাজ ও রুচি ছিল স্বতন্ত । শাহজাহানের আমলে অঙ্কিত চিত্রায়নের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাহজাহান নামা'র পান্ডুলিপি চিত্রায়ন।


ওরঙ্গজেব

মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ।
Image source:Wikipedia


ওরঙ্গজেব চিএবিভাগ বন্ধ করে দিলেও অভিজাত সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষীন হলেও চিত্রাঙ্কন শিল্পের ঐতিহ্য একে- বারে লুপ্ত হয়ে যায়নি। তবে ঔরঙ্গজেবের আমলের চিত্রাঙ্কন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল মিশ্র-দক্ষিণী রীতির উদ্ভব । মুঘল দক্ষিণী-রীতি ভারতের চিত্রকলার ইতিহাসে ঔরঙ্গজেবের দান ।


মুঘলযুগে মুসলিম চিত্রকলার সর্বোত্তম বিকাশ ঘটে। স্বাভাবিক ভাবেই মুঘল চিত্রকলার ইসলামীয় চিত্রকলা বিশেষত পারসিক চিত্রকলার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহানের আমলে সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে মুঘল শিল্পকলা দরবারী চরিত্র লাভ করেছিল। তথাপি মুঘল চিত্রকলা কেবল কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠেনি । ভারতীয় মিনিয়েচার চিত্ররীতি এবং ভারতীয় ঐতিহ্যগত চিত্র রসের সমন্বয়ের মাধ্যমে মুঘল চিত্রশিল্পের প্রাণসঞ্চার হয়েছিল।



               ❎  মুঘল চিত্রকলায় ইন্দো পারসিক রীতির অসাধারণ মিশ্রন দেখা যায় । ভারতীয় চিত্র শিল্পীরা পারসিক চিত্রশিল্পকে নিজেদের মত করে প্রয়োগ করেন। মুঘলে চিত্রকলায় ভারতীয় রীতির সাথে বল্মীক ও চীনা শিল্পরীতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায় । বাবর ও হুমায়ূন পারসিক শিল্পরীতির অনুরাগী হলেও আকবরের সমন্বয়বাদী ধর্মীয় মনোভার হিন্দু, গৌরা,জৈন আঙ্গিক গ্রহণ করে মুঘল রীতিতে এক স্বেতন্ত্র চরিত্র দান করেন ।


            ❎ প্রাক মুঘল পর্বে ভারতীয় চিত্রশিল্পের বৃহৎ পরিসকে চিত্রাঙ্কন পদ্ধতির প্রচলন ছিল। কিন্তু ক্ষুদ্র পরিসরে চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি মিনিয়েচার পেইন্টিং সেটি চিত্ররীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


            ❎ মুঘল চিত্রকলার মূল বিষয় ছিল কঠোর বাস্তন, বিচিএ, সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনা, সম্রাটকে কেন্দ্র করে দৃশ্যাবলী, যুজি যাত্রা, শিকারের দৃশ্য ছিল মুখতল দরবারী চিত্রগুলির বিষয়বস্তু। চিত্রগুলি ছিল বৃহদায়তন এবং তাতে তুলির কাজ ছিল অসাধারণ, মুঘল চিত্রকলার বিষয়বস্তুতে সৌন্দর্য ও প্রকৃতি চেতনাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

         মুঘলে আমলের কয়েকজন বিখ্যাত চিত্রকর হলেন – আব্দুস সামাদ, ফারুক বেগ, মহম্মদ মুরাদ, ওস্তাদ মনসুর,জামশেদ, বিষেণ দাস, তুলসী, মহোহের, মাধব, গোবর্ধন প্রমুখ ৷

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মুঘল চিত্রকলার উপর একটি প্রবন্ধ লেখ। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟