রুদ্র দামনের কৃতিত্ব আলোচনা কর

রুদ্র দামনের কৃতিত্ব আলোচনা কর

 রুদ্র দামনের কৃতিত্ব আলোচনা কর


রুদ্র দামনের কৃতিত্ব আলোচনা কর



রুদ্র দামনের কৃতিত্ব আলোচনা কর

উত্তর। প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই বহু বিদেশী শাসক ভারতবর্ষে এসে ভারতীয় সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছেন এবং একজন উজ্জ্বল কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ভারতীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন। শক ক্ষত্রপ বুদ্রদামন এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। শকদের কাদমক শাখার অন্তর্গত এই মহান শাসক প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে খ্যাত হয়ে আছেন। কার্দমক গোষ্ঠীর নেতা চষ্টনের মৃত্যুর পর তাঁর পৌত্র রুদ্রদামন পশ্চিম ভারতে কেন্দ্রীভূত শক রাজ্যের শাসকপদে মনোনীত হন। ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উৎকীর্ণ তাঁর জুনাগড় লেখ থেকে আমরা রুদ্রদামন সম্পর্কে বিশদে
জানতে পারি। 

জুনাগড় লেখ থেকে জানা যায় যে, পিতামহ চষ্টন কর্তৃক সাতবাহনদের দখল থেকে শক রাজ্যের মুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 'মহাক্ষত্রপ' উপাধিকারী যুদ্রদামন এই লেখতে তিনি দাবি করেছেন যে, জনসমর্থনের মাধ্যমে তিনি সিংহাসন লাভ করেন। বীর্যবান ও প্রাজারঞ্জক শাসক রুদ্রদামন এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। জুনাগড় লেখ থেকে জানা যায় পূর্বমালব, অবন্তী বা পশ্চিম মালব, নর্মদা অববাহিকার মাখাতা নিম্ন সিন্ধু অববাহিকা, মারোয়াড়, অপরান্ত, বিন্ধ্য ও আরাবল্লী পার্বত্য অঞ্চল তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জুনাগড় লেখতে বুদ্রদামন দাবি করেছেন দক্ষিণাপথরাজ সাতকর্ণীকে তিনি পর পর দুবার পরাজিত করেন। তবে সাতকণীর সঙ্গে তার কুটুম্বিক সম্পর্কের জন্য তাঁর সংহার করেননি। সম্ভবত গৌতমীপুত্রের সঙ্গে (বশিষ্ট পুত্র সাতকণী) রুদ্রদামন নিজ কন্যার বিবাহ দিয়েছিলেন এই বিষয়টি কানহেরিতে প্রাপ্ত একটি লেখ থেকে সমর্থিত হয়েছে ।
সাতবাহনদের মতো প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয়লাভ বুরদামনের সবচেয়ে গৌরবাড়ি সামরিক কীর্তি ছিল।

 যৌধেয়রা বুদ্রদামনের আয় এক প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলেন, তাঁদেরও তিনি পরাস্ত কয়ে ক্ষত্রিয় সমাজে বীর বলে যৌধেরগণের সুখ্যাতি ছিল। বৌবেয়গণের বিরুদ্ধে বিজয়া আমি তাঁর এক শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব বলে তিনি চিহ্নিত করেছেন। যৌধেরগণ সম্ভবত সে সমর দড়ি বিলো পাঞ্জাব ও সন্নিহিত অঞ্চলে রাজত্ব করতেন।

বুদ্রদামন শুধু রণনিপুণ রাজনীতিজ্ঞ ছিলেন না, তিনি এক উচ্চশিক্ষিত, কৃষ্টিক প্রতিশ মানবদরদী প্রশাসকও ছিলেন। তাঁর রাজত্বের প্রথম বছরেই জুনাগড়ের নিকটবর্তী সুদর্ণ হ্রদের বাঁধে অতিবৃষ্টির কারণে ফাটল ধরে। মৌর্যরাজ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এই জলাধারাটি নির্ম করেন এবং তাঁর পৌত্র অশোক হ্রদটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করেন হ্রদটি বিনষ্ট হওয়ায় এর সন্বিত জলরাশি বেরিয়ে যায়। এর ফলে নিকটবর্তী কৃষির শেতগুলি জলের অভাবে মরুভূমির রূপ ধারণ করে। কৃষির উৎপাদন ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্রী হ্রদটির সংস্কার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অবশেষে তিনি বিভিন জনৈক পল্লব সুবিশাথকে সৌরাষ্ট্রের শাসক নিযুক্ত করেন। অসামান্য তৎপরতার সঙ্গে পরিম সুবিশাল জলাধারটিকে নতুন করে নির্মাণ করেন। হ্রদটির বাঁধ তিনগুণ দৃঢ় ও বিস্তৃত কর কৈ হয়। হ্রদটি সুন্দরতর হয়ে ওঠে। জলাধারটি সংস্কার করতে বুদ্রদামন প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। উলে তবে কোনো বাড়তি করভার তিনি প্রজাদের ওপর চাপিয়ে দেননি।

প্রজাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি তাঁর সতর্ক দৃষ্টি ছিল। রাজ্যে অসুখ-বিসুখের প্রাদুর্ভাব, বিষা চোর-ডাকাতের উৎপাত ও বন্য প্রাণীর উপদ্রব বন্ধ করতে তিনি সারাজীবন নিরলস চেষ্টা করে গেছেন।

শিক্ষার প্রতি তার অকৃত্রিম আগ্রহ ছিল। তিনি সংস্কৃতজ্ঞ ছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় গদ পাঁচ ও পদ্য রচনা করে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দুঃখের বিষয় তাঁর রচনাগুলি কালের কপোলতলে হারিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর নির্দেশনামায় রচিত জুনাগড় লেখ কালের প্রভাব এড়িয়ে আজও মোটামুটি অক্ষত আছে। আগাগোড়া সংস্কৃতে লেখা এই লেখখানি। পদ ও ছন্দের অনুপম প্রয়োগে রসোত্তীর্ণ সাহিত্যে উন্নীত হয়েছে। সংস্কৃত ছাড়া ব্যাকরণ, রাজনীতি, সংগীত, তর্কবিদ্যা প্রভৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় তিনি ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। প্রাচীন ভারতে সংস্কৃতির এক পীঠস্থান ছিল উজ্জয়িনী। সংস্কৃতির কেন্দ্ররূপে উজ্জয়িনীর জ্যাবাত্রা বুদ্রদামনের রাজত্বকালেই শুরু হয়। এদিক থেকে বিচার করলে তাঁতে উজ্জয়িনীর প্রকৃত স্বপতি আখ্যা দেওয়া যায়।

১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর কোনো এক সময়ে বুদ্রদামনের মৃত্যু হয়। শক শাসকদের মধ্যে। তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। কেবলমাত্র রাজ্যবিজেতা হিসাবে নয়, ভারতীয় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষক রুদ্রদামন তাঁর রাজত্বকালে বিভিন্ন বিষয়ের উন্নতি তাঁকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছো
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ রুদ্র দামনের কৃতিত্ব আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟