প্রাচ্যবাদ বলতে কি বোঝ ?
প্রাচ্যবাদ :-
ব্রিটিশদের ভারত আগমনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এদেশের সময় সংস্কৃতি ও শিক্ষার জগতে নতুন ভাবধারা গড়ে উঠেছিল ৷ আলোচ্য কাল পর্বে ব্রিটিশ আধিকারিকরা শিক্ষা সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তা শুরু করেন ৷ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে সনদ আইনে বছরে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে দেশের শিক্ষা খাতে ব্যয় করার নীতি গৃহীত হয় ফলে শিক্ষা জগতে একটি পরিবর্তন সাধিত হয় ৷ এই সময় এই অর্থ শিক্ষার কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক দেখা দেয় ৷ একদল মনে করেন যে এই অর্থ ইংরেজি শিক্ষার সম্প্রসারণ এর ব্যয় করা হবে এরাই ইতিহাসের পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত ৷ আবার আরেক দল মনে করেন ভারতবর্ষে প্রচলিত ঐতিহ্যবাহিত দেশীয় শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ কে আরো গতিশীল করে তুলতে হবে যারা orientalist নামে পরিচিত হয়ে আছে ৷ প্রাচ্যবাদীদের মত ছিল এ দেশের ব্রিটিশ শাসন সুস্পষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য এ দেশের শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্রিটিশদের যথেষ্ট ধারণা থাকা উচিত তাই এদেশীয় শিক্ষা সম্প্রসারণ একান্ত অপরিহার্য ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
প্রাচ্যবাদীরা অনুধাবন করেন এদেশের হিন্দু ছাত্ররা টোল ও চতুষ্পাটিতে এবং মুসলিম ছাত্ররা মক্তব ও মাদ্রাসাতে যে শিক্ষা গ্রহণ করত তা ছিল মূলত ধর্ম , দর্শন এবং ভাষা কেন্দ্রিক ৷ কিন্তু মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতি খুব বেশি উন্নতমানের ছিল না । তাই প্রাচ্যবাদীরা মাতৃভাষার মাধ্যমে ভারতীয় ছাত্রদের প্রকৃতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাষ্ট্রদর্শন, ভূগোল, অর্থনীতি, গণিত ইত্যাদি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেন ৷ ভারতবর্ষে প্রাচীর বিকাশের ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেল ওয়ারিং হেস্টিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷ এই কাজে অবশ্য তিনি কয়েকজন প্রাচ্যবাদী ইংরেজদের সাহায্য পেয়েছিলেন যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জোনাথান ডানকান, উইলিয়াম জোন্স এবং চার্লস্ উইকিস ৷ বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন ভারতবর্ষের প্রতি অকৃত্রিম অনুরাগ হেস্টিংয়ের প্রাচ্যবাদী করে তুলেছিল ৷ কারণ তারই উদ্যোগে ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
প্রাচ্যবাদী জোনাথন ডানকানের উদ্যোগে হিন্দুদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বিন্দু বেনারসে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে একটি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ যে সংস্কৃতি চর্চার পৃষ্ঠস্থান হিসেবে পরিণত হয় ৷ তার উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত মানুষরা সুশাসন গড়ে তোলার জন্য ব্রিটিশদের সাহায্য প্রদান করবে । ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম জোন্স কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এশিয়াটিক সোসাইটি প্রাচ্যবাদী শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম পৃষ্ঠ স্থানে পরিণত হয় ৷ উইলিয়াম জোন্স প্রথম ব্যক্তি যিনি ভারত ইতিহাসের সুবর্ণ যুগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন ৷ তিনি প্রাচীন ভারতের শিল্পোন্ন পণ্য জ্ঞান চর্চা ,প্রশাসনিক ও আইন দক্ষতার ভুয়া সি প্রশংসা করেছেন এইচ.পি কোলব্রুক ছিলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ প্রাচ্যবাদী পন্ডিত ৷ উনবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষের সাংস্কৃতির জাগরণের ভিত্তি তাপন তার দাঁড়াই হয়েছিল ৷ তিনি প্রাচীন সাহিত্যসূত্র থেকেই দেখান সতীদাহ প্রথা ভারতীয় ঐতিহ্যের বিচ্যুতি ছাড়া আর কিছুই না বেদ চর্চা করে তিনি দেখান প্রাচীন ভারতীয়দের মধ্যে একেশ্বরবাদী ঐতিহ্য ছিল ৷ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে এ দেশে পাশ্চাত্যবাদ ভীষণভাবে গতি লাভ করে ৷ উইলিয়াম কেরি , জন গিলক্রিস্ট প্রমুখ এই কলেজে শিক্ষা কর্তা করেন এবং পাশ্চাত্য মনে প্রাচ্য ভাবধারা বিকশিত করতে শুরু করেন ৷ ইউরোপিয়ানদের পাশাপাশি রামচন্দ্র বিদ্যাসাগরীয়,শ্রী হরি বিদ্যারত্ন, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, জগন্নাথ তর্ক পঞ্চানন, মুন্সি রাম বসু, প্রমুখরা প্রাচ্যবাদী শিক্ষার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷