মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে আলোচনা কর

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে আলোচনা কর

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে আলোচনা কর

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে আলোচনা কর


 মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট


ভারতের বিভিন্ন কলকারখানায় কমিউনিস্ট পার্টিটির নেতৃত্বে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়তে থাকে। কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ রিকদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনে সরব হলে ভারতের বিভিন্ন লকারখানার শ্রমিকরা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে আন্দোলনে শামিল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রদান, কাজের সময় হ্রাস, বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথার বিলোপ, সংবাদপত্র ও বাক্-স্বাধীনতা, ট্রেড ইউনিয়নের ধীনতা প্রভৃতি দাবিতে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। শ্রমিক ন্দোলনের ধারাবাহিক প্রসারে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।


শ্রমিকদের ক্ষোভ বৃদ্ধি ও আন্দোলনের প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাদের ক্ষোভ ও আন্দোলন দমনের দ্যোগ নেয়। এই উদ্দেশ্যে সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে 'তুইটলি কমিশন' Whitley Commission) গঠন করে। এর দ্বারা সরকার প্রমাণ করার কায় করে যে, শ্রমিকদের উন্নতির বিষয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দের চেয়ে কারই বেশি আগ্রহী। কিন্তু শ্রমিকরা এই কমিশন বর্জন করে।


বড়োলাট লর্ড আরউইন শিল্পবিরোধ বিল' (Trade Disputes Bill) ও 'জননিরাপত্তা বিল' Public Safety Bill) নামে শ্রমিক-স্বার্থ বিরোধী দুটি আইন পাসের উদ্যোগ নেন। শিল্পবিরোধ বিলের দ্বারা শ্রমিকদের ধর্মঘট বেআইনি ঘোষিত হয় এবং সালিশি কমিটির মাধ্যমে শ্রমিক-মালিক বিরোধের মোংসার কথা বলা হয়। জননিরাপত্তা বিলের দ্বারা কমিউনিস্টদের জননের উদ্যোগ নেওয়া হয়।


কমিউনিস্টদের কার্যকলাপ ও শ্রমিক আন্দোলন দমন কার উদ্দেশ্যে সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভাঙ্গে-সহ ৩২ জন কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। এটি 'মিরটি যড়যন্ত্র মামলা' নামে পরিচিত। অভিযুক্ত ৩৩০ জন কমিউনিস্ট নেতার মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুজাফ্ফর আহম্মেদ, শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ধরণি গোস্বামী, শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে, পি. সি. যোশি, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ। অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ নাগরিকও ছিলেন। এঁরা হলেন ফিলিপ স্প্যাট, বেঞ্জামিন ফ্রান্সিস ব্র্যাডলি এবং লেস্টার হাচিনসন।


মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পরিণতি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে। এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কমিউনিস্ট নেতাদের পক্ষে সওয়াল করেন জওহরলাল নেহরু, এম. সি. চাগলা প্রমুখ। মামলার পরিণতি কমিউনিস্টদের পক্ষে মোটেই ভালো হয়নি, যেমন-


 ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার রায়ে কমিউনিস্ট পার্টির যাবতীয় প্রচারকার্য নিষিদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতার বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড প্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুজাফ্ফর আহমেদ, শওকত উসমানি, কে. এন. জোগেলকর, শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে, শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ধরণি গোস্বামী, পি. সি. যোশি, গঙ্গাধর অধিকারী, ফিলিপ স্প্র্যাট প্রমুখ



কংগ্রেস নেতা গান্ধিজি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কমিউনিস্ট নেতাদের পক্ষ সমর্থন করেন। তিনি জেলে গিয়ে বন্দি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান।


ভারতে কমিউনিস্ট আদর্শের প্রসার, শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সক্রিয়তা, শ্রমিক আন্দোলন প্রভৃতি স্তুপ করতে সরকার মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।


বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতাদের কারাদণ্ডের সত্ত্বেও ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে কমিউনিস্ট দলের প্রভাবে আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পায়। শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট দলের প্রভাব লক্ষ করে সরকার ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে (২৩ জুলাই) কমিউনিস্ট পার্টি এবং তার সকল শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে কমিউনিস্ট দলের প্রভাব অক্ষুন্ন ছিল।


মিরটি ষড়যন্ত্র মামলা ভারতে বামপন্থীর প্রসারে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। জেলে বন্দি বামপন্থী নেতাদের আদর্শ ও বক্তব্য সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে পৌঁছোলে ভারতে সমাজতন্ত্রের আদর্শ দ্রুত প্রসার লাভ করে। শুধু ভারতে নয় ভারতের বাইরেও বহু, ঞ্জানী মানুষ মিরাট ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনসভ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড লাস্কি, দার্শনিক রোলাঁ প্রমুখ মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।







তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟