মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কিভাবে নেপোলিয়নের পতনকে তরান্বিত করেছিল।

মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কিভাবে নেপোলিয়নের পতনকে তরান্বিত করেছিল।

মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কিভাবে নেপোলিয়নের পতনকে তরান্বিত করেছিল। অথবা, মহাদেশীয় অবরোধ কথা বলতে কি বোঝো? নেপোলিয়নের পতনে এই প্রথা কতটা দায়ী ছিল বলে তুমি মনে কর ৷

১৮১৫ খ্রিঃ ভিয়েনা কংগ্রেসের মূলনীতি গুলি আলোচনা কর অথবা,ভিয়েনা সম্মেলন (১৮১৫) সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ইংল্যান্ডের সামুদ্রিক বাণিজ্যকে স্তব্ধ করে তার সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিপর্যস্ত করার প্রচেষ্টায় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৮০৬ ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে মোট চারটি (বার্লিন,ওয়ারশ, মিলান ও ফন্টেডব্লু) ডিগ্রী জারি করে যে অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ে তোলে তা মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলা হয় ৷ নেপোলিয়ান তার সেনাপতি লেনমন্ট জেলার্ড অর্থনৈতিক অবরোধের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে এই মহাদেশীয় অবরোধ প্রথার ছক কষেন ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

ইংরেজদের নেপোলিয়ন হাতে না মারতে চেয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি ইংল্যান্ডের সমৃদ্ধির মূল উৎস যে বাণিজ্য সেই বাণিজ্য ব্যবস্থাকে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন এই লোকে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ৷

নেপোলিয়ন ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ১১ ই নভেম্বর বার্লিন ডিগ্রী জারি করে বলেন," ফ্রান্সের বন্দর গুলিতে ইংল্যান্ড বা তার উপনিবেশ গুলি থেকে আগত কোন জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে না ৷ এমনকি ইংল্যান্ডে উৎপাদিত শিল্পজাত সামগ্রী অন্য কোন দেশের জাহাজে করে ইউরোপে আনলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে ৷ ইংল্যান্ড ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন ডিগ্রীর জবা হিসেবে অর্ডারস ইন কাউন্সিল জারি করে বলেন," ইউরোপের কোন রাষ্ট্র ফ্রান্স বা ফ্রান্স অধিকৃত বন্দরে পণ্য সামগ্রী পাঠালে তা বাজেয়াপ্ত হবে ৷" এই ঘোষণায় আরো বলা হয় নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ ব্রিটিশ বন্দরে এসে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত শুল্ক প্রদান করার পর ফ্রান্স ও তার মিত্র দেশগুলিতে যেতে পারবে ৷

নেপোলিয়ন আবার এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে বালির ডিগ্রি জারি করে বলেন অর্ডারস ইন কাউন্সিল মান্যকারী যে কোন দেশের জাহাজ বাজেয়াপ্ত করা হবে ৷ নেপোলিয়ান ওয়ারিস ডিগ্রী ও ফ্রন্টেন্ড ব্লু ডিক্রি জারির মাধ্যমে ঘোষণা করেন ফ্রান্স অধিকৃত অঞ্চল গুলিতে ব্রিটিশ বর্ণবাহী জাহাজ প্রবেশ করলে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে ।

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা জারির মাধ্যমে নেপোলিয়ান ইংল্যান্ডের সর্বনাশ করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে ৷ ব্রিটেনের শিল্পজাত পণ্যগুলি ছিল সস্তা এবং মানের দিক থেকে ছিল উন্নত তাই এই ধরনের পণ্য সামগ্রীগুলির অভাবে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে । এর মধ্যে বেশ কিছু দেশ ফ্রান্সের মৃত্যু হলেও নেপোলিয়নের বিরোধিতা শুরু করে ৷ মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে পোপের সঙ্গে নেপোলিয়নের মতবিরোধ দেখা দেয় এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নেপোলিয়ন পক্ষে বন্দী করলে সমগ্র ক্যাথলিক জগত নেপোলিয়নের ওপর হয়ে ওঠে ৷

নেপোলিয়ান মহাদেশীয় অবরোধ নীতিকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইংল্যান্ডের ফরাসি অর্থনীতিতে পাল্টা আঘাত আনার জন্য অর্ডারস ইন কাউন্সিল জারি করেছিলেন ৷ এলবো থেকে এমস নদীর উপকূল বরাবর এক বিশাল অঞ্চল ব্রিটেন অবরুদ্ধ করে নেয় ৷ এছাড়াও ব্রিটিশ অধীনস্থ বন্দরগুলিতে আটক হওয়া বিদেশি পণ্য সামগ্রী গুলি ব্রিটিশ বাণিজ্যের উপরে পাওনা হিসেবে বিবেচিত হয় ৷ নিজেদের বিশাল ও শক্তিশালী নৌবহরের সাহায্যে ফ্রান্স ও ফরাসি উপনিবেশ গুলির ওপর ইংল্যান্ডের পাল্টা অবরোধ সফল হয় ।

পর্তুগাল ইংল্যান্ডের সঙ্গে গোপনে বাণিজ্যিক লেনদেনের বজায় রাখলে নেপোলিয়ান স্পেনের মধ্য দিয়ে পর্তুগাল দখলের জন্য অভিযান শুরু করে। কিন্তু ফরাসি সেনাবাহিনীর স্পেনের মধ্যে দিয়ে পর্তুগাল যাবার পথে বিশ্বাসঘাতকতা করে স্পেনের দখল নিলে শুরু হয় পেনিয়ে যুদ্ধ বাণীপলিয়নের পতন কে ডেকে আনে ৷ রাশিয়ার জার মহাদেশীয় প্রথা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করে বসেন পরিণাম স্বরূপ নেপোলিয়নের বিখ্যাত গ্রান্ড আর্মি ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ঐতিহাসিক লজ বলেছেন একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে নেপোলিয়নের অযোগ্যতার সর্বাধিক বড় প্রমাণ হল মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা।"

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে," মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার দ্বারা এই ব্যবস্থা পরিকল্পনাকারী নিজেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইংল্যান্ডকে বিপদে ফেলতে গিয়ে নেপোলিয়ন ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রের সত্যতা অর্জন করে এবং নিজের পত্তনের পথ প্রস্তুত করে ঐতিহাসিক লজের ভাষায় একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে নেপোলিয়নের অযোগ্যতার সর্বাধিক বড় প্রমাণ হল মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ৷"

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কিত প্রশ্নাবলীঃ

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হল কেন?

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছিল কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রাখতে পারেনি। অনেক দেশ গোপনে ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যায়। তাছাড়া, এই ব্যবস্থা ইউরোপের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মহাদেশীয় অবরোধ নামকরণের কারণ কি?

ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ মহাদেশকে ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে অবরুদ্ধ করার জন্য এই ব্যবস্থাকে ‘মহাদেশীয় অবরোধ’ বলা হয়। এটি ১৮০৬ সালে নেপোলিয়নের নির্দেশে প্রণীত হয়।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟