সেরাজাভ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লেখ? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল?
ত্রিশক্তি চুক্তি ও ত্রিশক্তি আঁতাত এই দুটি শক্তি দুটি পৃথক শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে । ইউরোপের এই বৃহৎ দেশগুলি যুদ্ধের জন প্রস্তুত থাকলেও একমাত্র ইন্ধনের অভাবে উভয় পক্ষের শত্তি পরীক্ষা বাস্তব রূপ গ্রহণ করেনি । সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাস্তব রূপ দিতে সমর্থ্য হল সেরাজাভোের হত্যাকান্ড । ১৯১৪ সালে ২৮ শে জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দ বসনিয়ার রাজধান সেরাজাভো নগরে প্রকাশ্য দিবালোকে জৈনিক সার্বিয়ার আততায়ীর হাতে নিহত হন । এই ফার্দিনান্দ ছিলেন অস্ট্রিয়ার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী । ইতিমধ্যে অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার পারস্পরিক শত্রুতা চরম আকার ধারণ করেছিল । এই হত্যাকাণ্ডের ফলে ইউরোপে এক ব্যাপক দাবাগ্মির সৃষ্টি হয় যা অল্প দিনের মধ্যে সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করে । আততায়ী ও তার সহচারিগণ অস্ট্রিয়ার প্রজা হলেও তারা জাতিতে ছিল শ্লাভ । এই অজুহাতে অস্ট্রিয়া এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী সাব্যস্ত করে সার্বিয়া সরকারের নিকট একটি চরমপত্র পেশ করে ।
এই চরমপত্রে দাবি করা হয়------
সার্বিয়া সরকার সকল প্রকার অস্ট্রিয়া বিরোধী প্রচার বন্ধ করবে
সার্বিয়া সরকার অস্ট্রিয়া বিরোধী সংবাদপত্র,সংঘ দমন করবে
অস্ট্রিয়ার দুজন রাজ কর্মচারীকে সার্বিয়া যুবরাজ ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে
অস্ট্রিয়া বিরোধী প্রচারকার্যে লিপ্ত থাকলে সার্বিয়ার রাজকর্মচারীদের ও স্কুল কলেজের শিক্ষকদের পদচ্যুত করতে হবে। এই চরম পত্রে উত্তর দেবার জন্য সার্বিয়াকে মাত্র ৪৮ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়।
সার্বিয়া চরমপত্রে উল্লেখিত প্রায় সকল শর্ত মেনে নিতে স্বীকৃত হল, কিন্তু বাকি কয়েকটি শর্ত পূরণ করলে তা সার্বিয়ার সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করবে এই কারণে সার্বিয়া অস্ট্রিয়ার নিকট একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকে এই পরিস্থিতি আলোচনার প্রস্তাব করে কিন্তু অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে। সার্বিয়ার প্রতি অস্ট্রিয়ার আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে রাশিয়া অস্টিয়া ও সার্বিয়ার সম্ভাব্য সংঘর্ষের নিষ্পত্তির জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। অস্ট্রিয়া রাশিয়ার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে ১৯১৪ সালে ২৮ শে জুলাই অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনী সার্বিয়ার অভিমুখে অগ্রসর হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্র সচিব স্যার এডওয়ার্ড গ্রে অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালিকে একটি প্রস্তাব পাঠান কিন্তু অস্ট্রিয়া ও জার্মানি এই প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকার করে। ফলে যুদ্ধ ছাড়া এই জটিল পরিস্থিতির মীমাংসার সকল সম্ভাবনা দূর হয়।
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়ার সেনা সমাবেশ দেখে ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তির শর্ত অনুসারে জার্মানি অস্ট্রিয়ার পক্ষ অবলম্বন করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। অপরদিকে রুশ ফরাসি মৈত্রী চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফ্রান্সও রাশিয়ার সাহায্যে অগ্রসর হয় জার্মানি ফ্রান্স আক্রমণের জন্য বেলজিয়ামের ভিতর দিয়ে সেনা চালানোর দাবি জানালে বেলজিয়াম সরকার তা অগ্রাহ্য করে এবং জার্মানি বেলজিয়ামের ভিতর দিয়ে সেনাবাহিনী ফ্রান্স অভিমুখে পাঠাতে শুরু করে। এভাবে বেলজিয়ামের নিরপেক্ষতা লঙ্ঘিত হলে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ৪ই আগস্ট ইংল্যান্ড জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সেরাজাভ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লেখ? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল? এই নোটটি পড়ার জন্য