পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে আলোচনা কর

পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে আলোচনা কর

 

 পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে আলোচনা কর

পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে আলোচনা কর

৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধের বিজয় লাভের পূর্বেও বাবর ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছিলেন ৷ বাবরের নিজের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারত অভিযান করেন এবং কনৌজ দখল করেন ৷ ১৫২৫ এর নভেম্বরের বাবর বিশাল বাহিনীসহ ভারতের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন এটি ছিল ভারতের বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধ ৷ ইতিহাস খ্যাত পানিপথের পান্থরে বাবর ও ইব্রাহিম লোদীর মুখোমুখি হয় ৷ ১৯২৬ এর এক ২২ মার্চ সংখ্যার বিচারে ইব্রাহিম লোদীর সৈন্য ছিল গরিষ্ঠ ৷ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল তাদের পরিচয় ৷ আবহাওয়া ছিল ভারতের সেনা সেনাদের পক্ষে ৷ তবু যুদ্ধের পরিণতি হল উল্টো,পরাজিত হলেন ইব্রাহিম লোদী ৷ বাবর দিল্লি আগ্রা দখল করে ভারতের সংগঠক ও রক্ষকে পরিণত হন ‌৷


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

পানিপথের সংগ্রামের বাবরের সৈন্য ছিল সর্ব সাফল্য ১২-১৩ হাজার ৷ একান্তরে ইব্রাহিমের পক্ষ ছিল এক লক্ষ সৈন্য এক হাজার হাতি ৷ স্বভাবতই এই যুদ্ধে ইব্রাহিমের পরাজয় যথেষ্ট বিস্ময়ের উদ্বেগ সৃষ্টি করে ৷ এই যুদ্ধ সামরিক পূর্ণের জয় দিয়ে বাবরের সামরিক বাহিনী হয়তো পরে অনেকটাই সমৃদ্ধি হয়েছিল বহু সংখ্যক আফগান ও স্থানীয় হিন্দু যোগদানের ফলে ৷ তাছাড়া দুর্ভাগ্যের বিষয় ইব্রাহিম লোদী বাবরের রক্ষণাত্মক সামরিক ব্যবস্থাপনা বুঝতে পারে ৷ এমনকি টানা সাত দিন ধরে এই দুই পক্ষ সেনাবাহিনী মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধ করলেও তিনি বাবরের কৌশল অনুধাপনের ব্যর্থ হন ।


ইব্রাহিম লোদীর তুলনায় অনেক দুর্বল সেনাশক্তি থাকাও এবং সহজেই যাতে তাকে আত্মসমর্পণ করতে না হয় এই পরিকল্পনা করে খুব সতর্কভাবে বাবর যুদ্ধ ক্ষেত্র নির্বাচন করেছিলেন ৷ তিনি তার ডানদিকে পানিপথ শহর ঘেঁষে সেনা মোতায়ন করেন এবং বাম দিকে কাটা গাছ পালা দিয়ে পরীক্ষা করে তুলেছিলেন ৷ যাতে বিপক্ষের অশ্বারোহী বাহিনী তা অতিক্রম করতে না পারে, সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন মোট 67 প্রশিক্ষিত ও স্থানীয় এলাকার থেকে জোগাড় করা ঘোড়ার যুদ্ধ গাড়ি এই গাড়িগুলি একে অপরের সঙ্গে চামড়া দড়ি দিয়ে বাধা থাকতো এবং দুই শারির গাড়ির মাঝে মাটির কৃত্রিম ফাঁক তৈরি করা হতো ৷ যেখানে দাঁড়িয়ে গোলান্দাজ বাহিনী গোলা ছুটতে পারতো ৷ বাবর এই দড়ি বাধা ঘোড়ার গাড়ির যুদ্ধ পদ্ধতি কে বলতেন অটোমান রুমি হাতিয়ার ৷ ফলত বাবরের বাহিনী নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায় এবং আক্রমণাত্মক নীতি ও ফলপ্রসু হয় ৷


বাবুর রুমি পদ্ধতির সঙ্গে নতুন একটি বিষয় যোগ করেছিলেন ৷ সেটি হল ঘোড়ার গাড়ির মাঝে এমন একটি ফাঁক তৈরি করা যেখানে ৫০ থেকে ১০০ টি ঘোড়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অনায়াসে আক্রমণ চালাতে পারতো ৷ এটি ছিল রীতিমতো শক্তিশালী রচনাত্মক এবং আক্রমণাত্মক ব্যবস্থাপনা ৷ বাবরের এক্ষেত্রে একটি অভিমত ছিল যে ইব্রাহিমকে জৈবিক খান সুলতানের মত ভাবলে ভুল হবে ৷ কারণ তার এই পরিকল্পিত যুদ্ধ ক্ষেত্র এবং সেনা মোতায়ন কার সাজেক সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না ৷ বাবর বলেছেন যে,"তিনি একজন অবিঞ্জ সাহসী যুবক তার সামরিক অভিযান গুলিতে তিনি কিছুই করে দেখাতে পারেনি । কিভাবে যুদ্ধে অবস্থান নিতে হয়, কিভাবে এগোতে হয়,কেমন ভাবে লড়তে হয় কিছুই পরিপূর্ণভাবে করতে পারেননি তিনি ৷"


অন্যদিকে আফগান উপজাতিদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং ইব্রাহিম লোদীর ও জনপ্রিয়তা দিল্লির শক্তি হ্রাস করেছিল ৷ বাবরের সুকৌশল নেতৃত্বে মুঘল বাহিনী শৃঙ্খলা পরাজয়তা জয় লাভের একান্ত ইচ্ছা আত্মক লহ এবং অসন্তোষের জীর্ণ সুলতানি বাহিনীকে সহজে পরাস্ত করতে সক্ষম হয় ৷ বাবরের অশ্বারোহী বাহিনীর ক্রমাগত তীর বর্ষণ ও গোলন্দাজ বাহিনীর অকৃতজ্ঞ মৃত্যু গোলার আঘাতে ইব্রাহীমের আফগান বাহিনী এক ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ৷ এই যুদ্ধে বাবর দুজন অটোমান গোলন্দাজ ওস্তাদ আলী এবং মোস্তফাকে ব্যবহার করেন ৷ বাবর ছিলেন একজন অস্বারোহী যোদ্ধা এবং পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয় লাভ করেছিলেন প্রধান অস্বারোহী ও ধনুকধর বাহিনীর জোরে ৷


আলোচনা শেষে বলা যায় মুঘল যুগে ভারত ইতিহাসে পানিপথের এই যুদ্ধ অবশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৷ একদিকে এটি ছিল চূড়ান্ত যুদ্ধ ক্ষেত্র মুঘলদের নেতৃত্বে ভারত ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের শুরু হয় ৷ পানিপথের এই যুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ৷ বদায়ুনি লিখেছেন,"এই যুদ্ধের বহু পরেও যুদ্ধক্ষেত্রের পাশ দিয়ে গভীর রাত অতিক্রম করলে যুদ্ধের আওয়াজ ও মানুষের আর্তনাদ শোনা যায় ৷ " বাবরের এই সাফল্যের ফলে পরবর্তীকালে যে মহান মুঘল শাসন শুরু হয়েছিল তার রাজনৈতিক ঐক্য ধর্মীয় সহনশীলতা ও সাংস্কৃতিক জাগরণ ইত্যাদির মাধ্যমে ভারতের জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছিল ৷


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟