বার্লিন সংকট বা অবরোধ সম্পর্কে আলোচনা করো।
বার্লিন সংকট বা অবরোধ সম্পর্কে আলোচনা করো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে ঠান্ডা লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল জার্মানির রাজধানী বার্লিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হলে জার্মানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষো মিত্রপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে রাশিয়ার সাথে মিত্রপক্ষের অন্যান্য সদস্য যেমন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা জার্মানির অধিকার নিয়ে স্বন্দ্বের ফলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল তাহা বার্লিন সংকট নামে পরিচিত।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
বার্লিন সংকটের পটভূমিঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের ফলশ্রুতিতে জার্মানীর বিভিন্ন অংশ মিত্রপক্ষীয় রাষ্ট্রগুলি দখল করে নেয়। সোভিয়েত রাশিয়া জার্মানির পূর্বাংশে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে; অপরদিকে জার্মানির পশ্চিমাংশ দখল করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। এরপর জার্মানির ভাগ্য নির্ধারণ করতে মিত্রপক্ষীয় শক্তিবর্গ ইয়াল্টা সম্মেলনে মিলিত হয়।
কিন্তু এই সম্মেলনে রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনের সাথে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির মতবিরোধ হওয়ায় কোনো সমাধান সম্ভব না হওয়ায় পটসডম সম্মেলনে জার্মানিকে এবং রাজধানী বার্লিনকেও এই চার শক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এভাবে মিত্রপক্ষ নিজ নিজ স্বার্থে জার্মানির সমস্যাকে অমীমাংসিত করে রাখে যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
চারভাগে বিভক্ত জার্মানির জন্য একই অর্থ-নৈতিক নীতি ও যাবস্থা চালু করার জন্য একটি কন্ট্রোল কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়ার অসহযোগিতায় এই কমিশন ঠিকমত তার কাজ করতে অসমর্থ হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯৪৬ সালে মার্কিন বিদেশ সচিব জেমস বার্নেস ঘোষণা করেন- ১) জার্মানি ইউরোপের অংশ, খ) মার্কিন সেনা জার্মানি তথা ইউরোপে অবস্থান করবে, গ আমেরিকান ও ব্রিটিশ অধিকৃত জার্মানিতে একই অর্থনীতি চালু হবে। ঘ) জার্মানদের পরিচালনায় একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গকে বার্লিন থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশো বার্লিন প্রবেশের মূল সড়কপথ অবরোধ করে। ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া এই অবরোধ পরিচিত ছিল বার্লিন অবরোধ নামে। মূলত দুটি উদ্দেশে। রাশিয়া বার্লিন অবরোধ করে। ১) পশ্চিমি শক্তিজোটের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বার্লিন শহর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা। ২) পশ্চিম জার্মানিতে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরিকল্পনা বিনষ্ট করা।
রাশিয়ার এই পদক্ষেপে পশ্চিম বার্লিনের প্রায় ২০লক্ষ মানুষ এক চরম দুঃসহ অবস্থায় পতিত হল। শুরু হয় খাদ্য সংকট। এই অবস্থায় ইঙ্গ- মার্কিন শক্তি এক অসাধ্যসাধন করে। দীর্ঘ প্রায় এগারো মাস ধরে তারা আকাশ পথে প্রতিদিন আট হাজার টন খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ, তেল, কয়লাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পশ্চিম বার্লিনের জনগণের কাছে সরবরাহ করে। এরফলে রাশিয়ার উদ্দেশ্য বার্থ হয় এবং রাশিয়া বাধ্য হয়ে বার্লিন অবরোধ তুলে নেয়।