জার্মানির বিশ্ব রাজনীতি বা ওয়েল্ট পলিটিক সম্পর্কে আলোচনা কর
১৮৮৮ সালের জার্মানির সম্রাট প্রথম উইলিয়ামের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় উইলিয়াম জার্মানির সম্রাট বা কাইজার পদে অভিষিক্ত হন । ১৮৯০ সালে জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম তার রাজনৈতিক শুরু ও নব জার্মানি রূপকার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্কের পদচ্যুত করে সমস্ত ক্ষমতার নিজে গ্রহণ করেন ৷ এই সময় অনেক জার্মান ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণ বলেন ৷ তার কারণ হলো কাইজার বিসমার্কের পররাষ্ট্রনীতির মূলধারা ত্যাগ করে নতুন ধারা গ্রহণ করেন এবং সেই পথে জার্মানিকে নিয়ে যান ৷ ১৮৯৬ সাল থেকে কাইজার পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্ব রাজনীতিতে জার্মান প্রাধান্য স্থাপনের লক্ষ্য গ্রহণ করেন, বিসমার্কের পররাষ্ট্রনীতির মূলসূত্র গুলি ছিন্ন করেন ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
অতীত ঐতিহাসিকরা কাইজারের বিসমার্ক নীতি থেকে বিচ্যুত ও ওয়েল পলিটিক বা বিশ্ব রাজনীতি অনুসরণের জন্য কেবলমাত্র কাইজারের উচ্চাকাঙ্ক্ষীকে দাবি করেন ৷ তবে সঠিক অর্থে বলা যেতে পারে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ শক্তির ঘাত- প্রতিঘাতের জন্যই কাইজার নব নীতি গ্রহণ করেছিলেন ৷ যেসব লবির গোষ্ঠীর চাপে কাইজার নতুন বিশ্ব রাজনীতি গ্রহণের বাধ্য হল সেগুলি হল কৃষি লবি, প্ল্যান জার্মান লবি, শিল্পলবি, সামরিক লবি ও বুদ্ধিজীবী লবি ৷ ১৮৯৬ সাল থেকে বিশ্ব রাজনীতিতে বিশেষত উপনিবেশ দখলে ও নৌ নির্মাণ নীতিতে কাইজার যে ঝুঁকে পড়েছিলেন তার পিছনে এইসব চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব ছিল ৷
ওয়েল পলিটিক্স বলতে জার্মানির সঠিক কি চায় তা জার্মান নেতারা কখনো স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করেননি ৷ সাধারণভাবে বলা যায় যে বিশ্ব রাজনীতি বলতে ইউরোপ মহাদেশের ক্ষেত্রে জার্মানিকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া ৷ বলকান অর্থনৈতিক ও উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপন, নৌবহরে সম্প্রসারণ ও সামুদ্রিক প্রাধান্য লাভ, আফ্রিকার সাম্রাজ্য বিস্তার, নিকট প্রাচ্যে বাণিজ্যিক আধিপত্য স্থাপন এবং দূর প্রাচ্যে উপনিবেশি স্থাপন বোঝাই ৷
ওয়েল পলিটিকের অন্যতম প্রচারক ছিলেন হাইন ব্রিস ট্রাইসকি এবং ফ্র্যান্স ওয়েবার এরা বলেন যে জার্মানির লোকসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্প বিস্তার ইত্যাদি বিশ্ব রাজনীতির নীতি কে বাধ্যতামূলক করেন ৷ প্ল্যান জার্মান ওয়েবার বলেন যে জার্মানি ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি হলেও জার্মানির বিশ্ব আধিপত্য যেভাবে ব্রান্ডেনবার্গ রাজ্য ও পার্শিয়াতে পরিণত হয়। পার্শিয়া জার্মানিতে পরিণত হয় , সেই ভাবে জার্মানি একটি বিশ্বশক্তিতে পরিণত হবে ৷ ম্যাক্স ওয়েবারের উপনিবেশবাদ ও সম্প্রসারণ তথ্য গোটা জার্মানিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ৷ কুট রিজলার ওয়েল পলিটিকের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দেন যে প্রতিবছর জার্মানির জনসংখ্যা বাড়ছে তার জন্য বাসস্থান চাই, জার্মানির উদ্বৃত্ত শিল্পের বাজার চাই, তাই উপনিবেশ দখলের প্রয়োজন । নৌ সেনাপতি ফন র্মুলার বলেন 'হয় জার্মানির সামগ্রিক আধিপত্য চাই, নতুবা কিছুই চায় না ৷'
আপাতদৃষ্টিতে বিসমার্কের পররাষ্ট্রনীতি ও দ্বিতীয় উইলিয়ামের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে পার্থক্য বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় ৷ কিন্তু একই বিশেষভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এই দুজনের পররাষ্ট্রনীতির বিশেষ কোন মৌলিক পার্থক্য ছিল না ৷ বিসমার্ক পররাষ্ট্রনীতির যে বুনিয়াদ স্থাপন করেছিলেন দ্বিতীয় উইলিয়াম তার উপর ভিত্তি করে তার পররাষ্ট্র নীতি গড়ে তোলেন ৷