লোকার্নো চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা,লোকার্নো চুক্তির প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করো
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ফ্রান্স ও জার্মানি উভয় রাষ্ট্রপতি পারস্পরিক সত্যতার আশঙ্কায় এক মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চায় জেনেভা প্রটোকলের ব্যর্থতার পর জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুস্তাপ স্টেটমেন্ট ফ্রান্সের কাছে চুক্তির প্রস্তাব পাঠালে ফ্রান্স এই প্রস্তাবের সম্মত হন ফলস্বরুপ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷ এই সম্পর্কে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন মন্তব্য করেন,"লোকার্নো ছিল যুদ্ধ ও শান্তির বছর গুলির মধ্যে প্রকৃত বিভাজন রেখা " ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
লোকার্নোতে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে মোট সাতটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এগুলি হল
- প্রথমতঃ ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম ও ইতালি এই পঞ্চ রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷
- দ্বিতীয়তঃ জার্মানির সঙ্গে আলাদাভাবে ফ্রান্স বেলজিয়াম পোল্যান্ড ও চেকোস্লোভিয়ার চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷
- তৃতীয়তঃ ফ্রান্স আবার পৃথকভাবে চেকোস্লোভিয়া ও পোল্যান্ডের সঙ্গে এর দুটি প্রতিশ্রুতিমূলক চুক্তিতে আবদ্ধ হয় ৷ এই মোট সাতটি চুক্তি লোকার্নো চুক্তি নামে খ্যাত ৷
![]() |
লোকার্নো সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের গ্রুপ ছবি |
লোকার্নো চুক্তির বিভিন্ন শর্ত ছিল সেগুলি হল
- প্রথমতঃ চুক্তি স্বাক্ষরের পর জার্মানি জাতিসংঘের সদস্যপদ পাবে এবং কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য পদ লাভ করবে ৷
- দ্বিতীয়তঃ জার্মানি ফ্রান্স ও বেলজিয়াম জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ ব্যতীত কোন যুদ্ধে একে অপরের বিরুদ্ধে নামবে না ৷
- তৃতীয়তঃ প্ররোচনাহীন আক্রমণের ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সকল রাষ্ট্রকে আক্রান্ত রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াতে হবে ৷
- চতুর্থতঃ জার্মানিকে রাইন অঞ্চলে সেনা সমাবেশ থেকে বিরত থাকতে হবে ইত্যাদি ৷
সমকালীন বিশ্বযুদ্ধ তার ইউরোপীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক মাইলস্টোন স্বরূপ ৷ ঐতিহাসিক ল্যাং এই চুক্তিকে বিশ্ব ইতিহাসের নবযুগের অগ্রদূত অভিধা দিয়েছেন ৷ এই চুক্তির মাধ্যমে পরাজিত জার্মানি বিজয়ী রাষ্ট্রগুলির সমমর্যাদা প্রাপ্ত হয় ৷ বিজয়ী ও বিজিতদের মধ্যে ব্যবধানের অবলুপ্তি ঘটে ৷ ফ্রান্সের জার্মানি ভীতি দূর হয় ৷ রাষ্ট্রের মধ্যেই বিদ্বেষ মূলক মনোভাব অনেকটাই প্রশমিত হয় ৷ ভার্সাই সন্ধি অপরিবর্তিত রাখার ব্যবস্থা করা হয় ৷ জার্মানি পুনরায় ফ্রান্সের আলসাস ও লোরেন নামক কয়লা ও লৌহ কনি সমৃদ্ধ প্রদেশ দুটি পায় ৷
লোকার্নো চুক্তি ত্রুটিমুক্ত ছিল না এই চুক্তি গুলির কার্যকারিতা নির্ভরশীল ছিল কেবলমাত্র সদস্য রাষ্ট্রগুলির সদিচ্ছার ওপর ৷ এই চুক্তিতে জার্মানি অধিক লাভবান হয় সে ফ্রান্সের আলসার ও লোরেন দখল করে এবং ফ্রান্সের রাইন অঞ্চল ছেড়ে দেয় ৷ শুরু থেকেই এই চুক্তির বাস্তবায়ন সম্পর্কে ফ্রান্স সন্ধিহান ছিল ফরাসি মন্ত্রী এই চুক্তিকে ফরাসি স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর আখ্যা দিয়েছেন । সর্বোপরি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে হিটলার রাইন অঞ্চলের সেনা সমাবেশ করলে এই চুক্তির অকাল মৃত্যু ঘটে ৷
সমকালীন ইউরোপের যুদ্ধময়ী রাজনৈতিক বাতাবরণকে কিছুটা হলেও পরিশুদ্ধ করতে সফল হয়েছিলেন ৷ লোকার্নো চুক্তি বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবধারায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘাত ও তিক্ততার অবসান ঘটে ৷ চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ফিরে আসে ফলে এক নবযুগের সূচনা হয় ৷ এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ল্যাংসাম বলেছেন লোকার্নো সন্ধির ধারা এক যুগের অবসান ও নতুন যুগের সূচনা হয়।
সম্ভাব্য প্রশ্নগুলো হলঃ
- লোকার্নো চুক্তির পটভূমি এবং তাৎপর্য পরীক্ষা করুন
- লোকার্নো চুক্তির প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য আলোচনা করো
- লোকার্নো চুক্তির প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য