মহম্মদ বিন তুঘলকের প্রতীকী মুদ্রা সম্পর্কে আলোচনা কর
সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত সুলতানদের মধ্যে মহম্মদ বিন তুঘলক ৷ তার রাজত্বকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য মহম্মদ বিন তুঘলকের সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে সর্বাপেক্ষা আলোচিত বিষয় হলো প্রতীকী মুদ্রার প্রচলন ৷ তার সময় রূপমুদ্রাকে ডেকা এবং তাম্র মুদ্রা কে জিতল বলা হত ৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতীকী মুদ্রার প্রচলন থাকলেও ভারতে প্রথম প্রতীকী মুদ্রার প্রচলন করেন মহম্মদ বিন তুঘলক ৷ স্বাভাবিকভাবে মধ্যযুগে এই ধরনের অর্থব্যবস্থার প্রচলন মহম্মদ বিন তুঘলকের উদ্ভাবনীয় প্রতিভা এবং দূরদর্শিকা কথার পরিচয় দেয় ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
বারনি লিখেছেন যে প্রতীকী মুদ্রায় তামা ব্যবহৃত হত ৷ কিন্তু ফেরিস্তার মতে এই ধাতুটি ছিল ব্রোঞ্জের এই নতুন ধরনের মুদ্রা পরিবর্তনের পেছনে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ৷ যেমন বারনি বলেছেন,"রাজ কোষের শূন্যতা দূর করার জন্য প্রতিটি মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন ৷" তার মতে সুলতান সামরিক পরিকল্পনায় প্রচুর অর্থ খরচের ফলে রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়েছিল অথচ তার প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল ৷ তাই স্বল্পমূল্যে ধাতু ব্যবহার করে নতুন মুদ্রা চালু করা চেষ্টা করেছিলেন ৷ প্রত্যক্ষ মুদ্রা ব্যাপী লৌহ সংকট দেখা গিয়েছিল আর এই সংকট হতে মুক্তির লক্ষ্যে সুলতান এই নতুন ধরনের মুদ্রা প্রচলন এর উদ্যোগী হন ।
মহৎ উদ্দেশ্য এবং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এই নতুন ধরনের মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলিত হলেও কয়েকটি কারণে চরম ব্যর্থতার পরিণত হয় । সহজল্যাব্য ধাতুর দ্বারা মুদ্রা তৈরির ফলে দেশে জাল মুদ্রায় ভরে যায় ৷ প্রতিটি হিন্দুর জাল-মুদ্রার কারখানা পরিণত হয় ৷ এখানে হিন্দু বলতে সম্ভবত স্বর্ণকারদের বুঝিয়েছেন ৷ যাই হোক এই অবস্থায় প্রচুর জাল মুদ্রার লেনদেন শুরু হলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি ভেঙে পড়বার উপক্রম হয় ৷ জাল বা নকল মুদ্রার ভয়ে বিদেশি বণিকরা ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন ৷ এই অবস্থায় পরিপ্রেক্ষিতে সুলতান বাধ্য হয়ে তার প্রতীকী মুদ্রা প্রত্যহার করে নেয় ৷ ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার মনে করেন এই ধরনের একটি অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণের মুহূর্তে কেবল তথ্যগত দিকেই নয় প্রয়োগের দিকেও সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত ছিল ৷