স্তূপ স্থাপত্য রীতি সম্পর্কে আলোচনা কর
স্তূপ স্থাপত্য রীতি বলতে বোঝাই
ভূমিকা :-
প্রাচীন ভারতের অধিকাংশ স্তুপ স্থাপত্য রীতি ধর্মীয় মতবাদ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নির্দেশ হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষ স্থাপত্য তখন যে ছিল না তা নয় সাহিত্যে তার প্রচুর উল্লেখ পাওয়া যায় কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের বাস্তব নিদর্শন কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় স্থাপত্যের ক্ষেত্রে তু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মহাপরি নির্মাণ সূত্রে আছে যে বুদ্ধ আনন্দ কে বলেছিলেন যে রাজার মৃত্যু হলে যেমন নীতিরক্ষিত হয় তেমনি আমার মৃত্যু হলে যেন আমার দেহ ভস্মের উপরে স্তুপ নির্মাণ করা হয়।
প্রাচীন ভারতের জৌনগন এই ধরনের স্মৃতির স্তম্ভ নির্মাণ করেছিল ৷ কিন্তু বৌদ্ধ গণ বিশেষভাবে স্তূপ কে তাদের ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করায় ধীরে ধীরে স্পুপের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ৷ স্তূপের সঙ্গে ভক্তির মনোভাব সর্বদাই জড়িত ছিল ৷ প্রথমদিকে উপাসনার স্থল চৌএ গৃহগুলিতেও উৎসর্গকৃত বস্তু হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছিল ৷ ধীরে ধীরে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের মত স্তূপ নির্মাণ পূণ্য কর্মরূপে বিবেচিত হতো এবং বুদ্ধের স্মৃতির বিজড়িত পবিত্র স্থানগুলিতে নির্মাণ করা হয়েছিল ৷ সম্রাট অশোক বুদ্ধের সম্মানে ভারতের সর্বোচ্চ স্তূপ (ঐতিহ্য অনুসারে প্রায় ৮৪ হাজার) নির্মাণ করেছিলেন ৷ কিন্তু এই স্তূপ গুলি এবং তাদের আদিরূপ পাওয়া যায়নি,নেপালের স্তূপ এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ৷
খনন কার্যের ফলে যে স্তুপ গুলি পাওয়া গেছে প্রাচীনতর স্তুপের আকার এবং স্বরূপ জানা যায় ৷ স্তূপ গুলি ছিল দেখতে গোলাকার গম্বুজ বা অন্ডের মতো এই অন্ড ছিল স্তূপ এর প্রধান উপাদান। স্তূপের ভেতর একটি কেন্দ্রীয় কক্ষ যেটি প্রায়শই স্ফটিক শযিত একটি ক্ষুদ্র সম্পূট এর মধ্যে বুদ্ধের কুত চিহ্ন (ধাতুর) রাখা হতো ৷ কাঁচা ইট এবং পোড়া ইটের অগ্রভাগ দিয়ে স্তূপের অন্তর প্রদেশ রচিত হতো ৷ স্তূপ মাথায় বিশ্বজনিত সারমভৌমত্বের প্রতীক রূপে কাঠের অথবা পাথরে তৈরি ছত্র থাকতো ৷ তবে চারিদিকে একটি কাঠের বেষ্টনী থাকত এই বেষ্টনীর ফিতর স্তূপ ঘিরে থাকতো একটি পদক্ষেপ পথ ৷ সাধারণ মানুষ এই পথ ধরে পরিক্রমা করে বুদ্ধের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নির্মিত করত ৷ অনেকে মনে করেন যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসাবে অর্থাৎ মহাজাগতিক প্রতীক রূপে স্তূপ কল্পনা করা হয়েছিল ৷
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে সাঁচির স্তূপ এর আয়তন দ্বিগুণ করা হয়েছিল শুধু তাই নয় এ চারিদিকে কাঠের বেষ্টনীর পরিবর্তে ৯ অথবা ১১ ফুট প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, ভারতের খুব কম সংখ্যক স্তূপ সাঁচির তুলনায় আয়তনে বড়। কিন্তু প্রাচীন সিংহলের রাজধানী পুনরাধাপুড়ে স্তূপটি আয়তনের ছাড়িয়ে গেছে ৷ ঐতিহাসিক এ.এল.ব্যাসাম বলেছেন যে এটি মিশরের কোন কোন পিরামিডের থেকেও বৃহত্তর। কুষাণ যুগে প্রথম কনিষ্ক কর্তৃত্ব নির্মিত পুরুষপুরের স্তূপটি বিশেষভাবে ক্ষত ৷ ফাহিয়েনের অনুপম সৌন্দর্য এর কথা বলেছেন,কিন্তু হিউয়েন সাং যখন এটি দেখেন তখন এর পূর্ব গৌরব ম্লান হয়ে গিয়েছিল ৷ শাহ- জি-কি-চেরি তে খনন কার্যের ফলে দেখা গেছে এর বুনিয়াদের ব্যাস ছিল ২৮৫ ফুট ৷ ভারতের স্তূপ গুলির মধ্যে এটি বৃহত্তম ৷ গান্ধারের খনন কার্যের ফলে স্তূপ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে,এছাড়া সোয়াট উপত্যকা ও পাঞ্জাবের মন্কিয়ালাটে দুটি স্তুপ এর সন্ধান পাওয়া গেছে যার একটি ক্ষুদ্র ও দ্বিতীয়টি বৃহৎ ৷