প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস

প্রাচীন মিশরীয় সংস্কৃতির একটি অন্যতম বিশেষ দিক হল তাদের ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্মচিন্তা। এই দেশের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে তথা রাজধানীকে (মেমফিস) বোঝাতে 'হাইকুপিতাহ' নামটি ব্যবহার করে, যার অর্থ দেবতার মন্দির বা দেশ। আর মিশর কথাটি আরবি ভাষায় 'দেশ' কে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। রাজতান্ত্রিক শাসনের প্রথমদিকে 'পিতাহ' কে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানা হত। যার থেকে বিশ্বের সময় কিছু, এমনকি অন্য দেবতারাও উদ্ভূত হয়েছেন। তাঁর পরিচিতি ছিল 'সত্যের দেবতা', 'নৈতিকতার ঈশ্বর প্রভৃতি নামে। হাইকুপিতাহ ছিল মেমফিসের আর এক নাম। তাই মেমফিসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মিশরীয় ধর্মকে 'মেমফীয় ধর্ম' বলা হয়। তবে মিশরীয় ধর্ম বহু ঈশ্বরবাদ থেকে একেশ্বরবাদ নানা সময় নানা রূপে ধরা দিয়েছে। আর সেখানকার প্রত্যেক দেবদেবী কোনো না কোনো প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

মিশরের দেবতা মন্ডলীতে সূর্যের মর্যাদা ছিল সবথেকে বেশি। সূর্য ('রা' বা 'রে') ছিল প্রধান দেবতা, তবে তিনি নানা সময়ে নানা নামে পরিচিত হতেন। যেমন- হোরাস, আমন, খেপরে, হারাখতি, আতুম, আতেন প্রস্তুতি। তবে তাকে বিশ্বস্রষ্টা, বিশ্বের শাসক, মহান দেবতা, স্বর্গের দেবতা ইত্যাদি নামেও ডাকা হতো। দেবতা মন্ডলীতে উপাসনার মাপকাঠিতে নানা সময় নানা পরিবর্তন দেখা গেলেও সূর্যের দেবতার মর্যাদা কখনো কমেনি। হেলিওপলিশ এবং উচ্চ মিশরের এদফু মন্দির ছিল সূর্য দেবতার মন্দির। সূর্য ছিলেন অমরত্বের প্রতীক, তাই মিশরের সম্রাটগণ নিজেদেরকে সূর্য দেবতার প্রতিনিধি বলে মনে করতেন।

মিশরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন দেবতার উপাসনা হত। যেমন, 'নেইথ' ছিলেন সইস শহরের উপাস্য দেবী। মাথায় নিম্ন • মিশরের প্রতীক লাল মুকুট, হাতে ধনুক। উপত্যকা অঞ্চলে ছিলেন 'বাস্ত', যার মাথাটা বিড়ালের। মিশর থেকে পূর্বদিকে বাণিজ্যের জন্য যারা যেত তারা যাযাবর, আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য 'মিন' এর উপাসনা করত। রাজনৈতিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আগে উচ্চ মিশরের সুরক্ষাকারী দেবী ছিলেন 'নেখবেত' যার প্রতীক শকুন। আর সাপরূপী দেবী 'উতো' ছিলেন নিম্ন মিশরের সুরক্ষাদায়িনী। থিবসের 'মাত' ছিলেন ঐক্যের প্রতিমূর্তি।

মিশরে শস্য এবং নীলনদের দেবতা ছিলেন 'ওসিরিস'। মিশরীয়দের ধারণায় 'রা' এবং ওসিরিস মিলে সমগ্র বিশ্ব পরিচালনা করেন। তবে দেবমণ্ডলীতে ওসিরিসের ক্ষমতায়ন হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। ওসিরিসের উত্থানে অন্যান্য বহু দেবতা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল। দুটি শহরে ওসিরিসের মূল মন্দির ছিল, উপত্যকা অঞ্চলে দেদু এবং মধ্য মিশরের অ্যাবিডসে। ওসিরিস দেবমন্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর মৃতের দেবতা হয়ে ওঠেন এবং তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হন। এখানে তিনি যেন অনেকাংশে হিন্দুধর্মের যমের রূপকল্প। এসময় থেকে তিনি মিশরীয়দের পাপ-পুণ্যের বিচা বিচারের দেবতা হয়ে ওঠেন।

মিশরীয় ধর্মতত্ত্বের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল মৃত্যু পরবর্তী জীবন। মৃতের দেবতাকে কল্পনা করা হয়েছিল শিয়াল, নেকড়ে ও বাজপাখি হিসেবে। মৃতের দেবতা আনরিস ছিলেন আধা শেয়াল আধা মানুষ। অন্ধকার জগতের যিনি মৃতদের পথ দেখাতেন তিনি নেকড়ে দেবতা। মিশরীয় ধর্মে পশু রূপে দেবতার ধারণার মূলে ছিল সম্ভবত নানা জনগোষ্ঠী ও উপজাতির টোটেম। টোটেম গুলি আঞ্চলিক উপাস্য দেবতায় পরিণত হয়েছিল। বিবর্তনের ফলে পশুরুপী দেবতারা আধা পশু আধা মানুষের স্তরে পৌঁছেছিল। যার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আকাশের দেবী হাথোর।

মিশরের পুরোহিতগণ বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। অদ্ভুত প্রদর্শনী দ্বারা জনমনে কাল্পনিক ভীতি জাগিয়ে তোলে। তাঁদের হাতে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু ধ্যানধারণা গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে তারা রাজনৈতিক কাঠামোকে যথেষ্ট প্রভাবিত করতেন। বিশেষত, কোনো সংকট দেখা দিলে তাদের সমর্থন পাওয়া শাসকের পক্ষে একান্ত জরুরি ছিল চতুর্থ রাজবংশের শাসনের পরে মিশরে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল। ফ্যারাওদের কর্তৃত্বের দুর্বলতার সযোগে হেলিওপলিসের পরোহিতরা কর্তৃত্বের দুর্বলতার সুযোগে হেলিওপলিসের পুরোহিতরা রাজনৈতিক দিক থেকে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ষষ্ঠ রাজবংশের পর প্রাচীন রাজত্বের পতন পুরোহিতদের ক্ষমতায় আঘাত হেনেছিল। পরবর্তীকালে বিখ্যাত ফ্যারাও তুতেনখামেন পুরোহিতদের পুরানো সকল অধিকার ফিরিয়ে দেন। সমাজে কুসংস্কার যাদুবিদ্যা জ্যোতিষ চর্চা প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। এইভাবে মিশরীয় ধর্ম চিন্তায় এবং দেবদেবীর বিবর্তনে সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকটিও যুক্ত হয়ে গিয়েছিল।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟