তাইপিং বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর।

তাইপিং বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর।

 তাইপিং বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর।

তাইপিং বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর।

ল্লিশের দশকের মধ্যভাগে তাইপিং বিদ্রোহের নেতা ও তার অনুরানীরা গঠন করেন ঈশ্বরের ভক্তদের সমিতি (Society of God worshippers)। প্রথমদিকে হা শিত চুত্তাদের দুজন প্রধান সহকর্মী হলেন যেন শুন শান ও ইয়রা শিঃ চিং। জোয়াংসি প্রদেশের চিন তিয়েন ছিল তাদের প্রধান কার্যালয়। ১৯৫০ খ্রিস্টকে তারা মার সরকারের সেনাবাভিরীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে সাবতীর্ণ হয়, ১৮৫১ খ্রিস্টান্দের ১১ জানুয়ারি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মহতী শান্তির স্বর্গরাজ্যের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেছিল (তাইপিং তিয়েন কুয়ো)। রা হলেন স্বর্গরাজ্যের রাজা, অন্যরা হলেন তাঁর সহযোগী। প্রথম থেকে এই বিদ্রোহ ছিল মাক্ত-বিরোধী, অপশাসন-বিরোধী এবং সামন্ততন্ত্র বিরোধী। চিনের ভূস্বামী জেস্ট্রিয়া তাইপিং আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছিল। ক্ষমতা দখল করে বং তাঁর প্রধান পাঁচজন সহযোগীর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করেন (ফেং উন শান, ইয়াং শিউ চিং, শিয়াও চাও কুই, শি-কা-ফাই এবং ওয়েই চ্যাং দুই)। সামরিক ও বেসামরিক কাজকে পৃথক করা হয়নি। কৃষক চায় করায় আবার যুদ্ধ করত, অফিসাররা শাসন, বিচার ও জনকল্যাণমূলক কাজের তদাকি করত আলর যুদ্ধে নেতৃত্ব নিত। সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনেরা সঙ্গে মহিলারা যুক্ত হয়েছিল। আইপিংদের নতুন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা ছিল ধর্মনির্ভর । তাদের সংবিধান হল স্বর্গরাজ্যের ভূমি ব্যবস্থা সলেন্ত দলিয় ৷ এই দলিলে তাইপিং নেতাদের ভূমি, অভিাগা, শাসন, অর্থ, রিয়ায় ও শিক্ষা সংক্রান্ত চিলা-ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

তাইপিং সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান আদর্শ ছিল সমতা। সবাই ঈশ্বরের সন্তান, সকলে তাঁর আশীর্বাদ সমানভাবে ভোগ করবে । জমি সকলের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করার ব্যবস্থা হয়, উদ্বৃত্ত ফসল তাইপিং কোষাগারে জমা হবে । চিনের পুরনো ঐতিহ্যে সম্পত্তির যৌগ মালিকানার ধারণা ছিল, তাইপিং স্বর্গরাজ্যে সামাজিক কুপ্রথা নেশা, মদ্যপান, পদবন্ধন, জুয়া, ব্যভিচার, পতিতাবৃত্তি, দাসপ্রথা ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয়। নারী পুরুষের সমান অধিকার মেনে নেওয়া হয়। তাইপিং বিদ্রোহীরা খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করেছিল, প্রথাগত তাও, বৌদ্ধ ও কনফুসীয় মন্দির ও মূর্তি ভেঙেছিল, পূর্বপুরুষ পূজাও নিষিদ্ধ হয়েছিল। খ্রিস্টান আদর্শের ওপর নির্ভর করে, মোজেসের মডেলে, দশটি পালনীয় নীতির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তাইপিং বিদ্রোহীরা পুরনো ব্যবস্থার অনুকরণে ছটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করেছিল, সরকারি চাকুরিতে প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল যদিও এই পরীক্ষা ছিল তুলনামূলকভাবে সহজ। তারা একটি নতুন ক্যালেন্ডারও চালু করেছিল। তাইপিং শাসকরা জনসেবামূলক কাজকর্মকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। অসমর্থ, দুর্বল, রুগ্ন ব্যক্তি, বিধবা ও অনাথদের রাষ্ট্রীয় সাহায্যদানের ব্যবস্থা হয়। নৈতিক চরিত্র গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়। তাইপিং বিদ্রোহীরা পশ্চিমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছিল। তাইপিং রাজধানী নানকিং শহরে হুং-এর আত্মীয় প্রধানমন্ত্রী হং জেন কান (Hung Jen-kan) পশ্চিমি বিজ্ঞান ও অর্থনীতি অধ্যয়ন করেন। তিনি তাইপিং অধিকৃত অঞ্চলে ব্যাংক, রেলপথ, ডাক তার ব্যবস্থা, স্কুল, হাসপাতাল, বাষ্পীয় পোত ইত্যাদি প্রবর্তনের মাধ্যমে আধুনিকতার সূত্রপাত করতে চেয়েছিলেন।

মানবেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন যে বহু নিন্দিত, ভ্রান্ত ব্যাখ্যাত এবং স্বল্পজাত তাইপিং বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে চিন বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের যুগে পদার্পণ করেছিল। তিনি তাইপিং বিদ্রোহকে ফরাসি বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য হল বুর্জোয়ারা বিদ্রোহ শুরু করেছিল, কৃষকেরা তাতে যোগ দিয়েছিল। এই ব্যাখ্যা ঐতিহাসিকরা গ্রহণ করেননি কারণ চিনের বুর্জোয়া জেস্ট্রি এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়নি, বরং তারা আক্রমণের শিকার হয়েছিল। চিনে স্রাব্দের মতো বুর্জোয়া শ্রেণী ছিল না। জার্মান পণ্ডিত উলফগাঙ্গ ফ্রাঙ্ক বলেছেন এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, কৃষক, খনি মজুর ও দস্যুরা। জাঁ শোনো বলেছেন জীবনযুদ্ধে পরাস্ত, হতাশ, দারিদ্র্যক্লিষ্ট একদল মানুষ প্রতিষ্ঠিত বাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। দক্ষিণ চিন থেকে শুরু করে বিদ্রোহীরা মধ্য চিনের সমৃদ্ধ ইয়াংসি উপত্যকায় খাঁটি গঠন করেছিল। সমাজ বিজ্ঞানীরা এই মাঞ্চু-বিরোধী অভ্যুত্থানের মধ্যে জাতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ লক্ষ করেছেন। হান জাতির লোকেরা বিদেশি তাতার বংশোদ্ভূত মাঞ্চুদের বিরোধিতায় নেমেছিল। এরা বিদেশি খ্রিস্টানধর্ম, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছিল। কনফুসীয় সংস্কৃতির এরা বিরোধিতা করেছিল তবে পারিবারিক জীবনে 'লি' ধর্মকে ব্যতিল করেনি।

চিনের জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হল কৃষক, তাইপিং বিদ্রোহে দরিদ্র কৃষকেরা যোগ দিয়েছিল। সন্দেহ নেই তাইপিং ছিল প্রধানত ও মূলত কৃষক বিদ্রোহ। মার্কসবাদী ঐতিহাসিকরা একে সামন্ততন্ত্র-বিরোধী কৃষক বিদ্রোহ বা বলে এটি ছিল পুরোনো স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে ইজরায়েল এপস্টেন। মনে করেন খারার কৃষক বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ থেকে আধুনিক গণত দিতান্ত্রিক বিপ্লবের বিপ্ল সূচনা হয়েছিল। জাঁ শোনো এই বিদ্রোহের মধ্যে কৃষক বিদ্রোহের উপ উপাদান। করেছেন। বিদ্রোহীরা ইয়াংসি উপত্যকা ধরে অগ্রসর হলে দলে দলে কৃষকেরা। স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। বিদ্রোহীরা জমিদারের নথিপত্র, মহাজনের কাগজপত্র ঋণপত্র ইত্যাদি পুড়িয়ে দিয়েছিল, কয়েকজন ভূস্বামী ও মহাজন নিহত হার। ধনীদের সম্পত্তি লুট করে দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে তা বণ্টন করা হয়। কৃষকেরা বিদ্রোহীদের বন্ধু বলে গণ্য করেছিল । কৃষকেরা জমি পেয়েছিল, উৎপীড়নমূলক কর ব্যবস্থ ব্যবস্থা থেকে অব্যাহতি বাণিজ্যক্ষেত্রে সহনশীল কর s was in general লাভ করেছিল। তাইপিং শাসকেরা কৃষি ও শিল্প ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন।। তাইপিং অধিকৃত অঞ্চলে ভাগচাষি বা (tenant farmers) দেয় খাজনার হার কমেছিল, ব্যবসায়ীদের কম বর্গাদারদের শুল্ক দিতে হত। শুল্ক ও ভূমিকর আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমেছিল ৷

চিন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা থেকে তাইপিং রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা অবশ্যই পৃথক ছিল । তাইপিং বিদ্রোহীরা নানকিং শহরে তাদের রাজধানী স্থাপন করেছিল, এর প্রতীকমূল্য কম নয়। মিং শাসকেরা মোঙ্গলদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে নানকিং-এ রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। এই বিদ্রোহের জাতীয় চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন ওয়েই চ্যাং হুই-এর মতো কয়েকজন ভূস্বামী ও শি-ডা-কাই-এর মতো কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। তাইপিং বিদ্রোহ পরিচালনা ও শাষন স্থাপনে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অনেকে তাইপিং বিদ্রোহের মধ্যে মধ্যযুগের ইউরোপের কৃষক বিদ্রোহের উপাদান খুঁজে পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের জন বুল, জার্মানির টমাস মুঞ্জার বা বোহেমিয়ার হাসের সঙ্গে ছং-এর তুলনা করা হয়েছে। এদের আন্দোলনের মধ্যেও ধর্মীয় উপাদান ছিল, ধর্মীয় নেতারা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে বিদ্রোহ ঘটিয়েছিলেন। তাইপিং বিদ্রোহ নতুন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা গঠনের সংকল্প নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু বিদ্রোহীরা পুরনো রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামো ভেঙে দিতে পারেনি। দলিত, উৎপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তি কামনা নিয়ে যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল অধিকতর শক্তিশালী রাষ্ট্র ও সামরিক শক্তির কাছে তা পরাস্ত হয়।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ তাইপিং বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟