ছয় দিনের যুদ্ধ বলতে কী বোঝ ? অথবা, তৃতীয় আরব ইজরায়েলের যুদ্ধ সংক্ষেপে আলোচনা কর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক রাজনিতীতে যতগুলি সংঘর্ষ হয়েছে তার মধ্যে আবর ইজরায়েলে সংঘর্ষ ছিল সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী, আরব জাতীয়তাবাদ ও ইহুদি জিওনবাদের পারস্পারিক সংঘাতের ফলে মোট 4 বার আরব ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে । এর মধ্যে তৃতীয় আরব ইজরায়েলের যুদ্ধ ছিল অন্যতম, যা ৬ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, [১৯৬৭ খ্রি. ৫ জুন-থেকে ১০ জন পর্যন্ত] । এই কারণে একে ৬ দিনের যুদ্ধ ও বলা হয়ে থাকে ৷ তবে এযুদ্ধ হবার পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, যথা -
প্রথমতঃ - মার্কিন যুক্তরাষ্ট মারফত আইজেন নীতি ঘোষিত হলে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ৷ সুয়েজ সংকটকে ঘিরে প্রসারিত ঠান্ডা লড়াই বিশ্ব রাজনিতীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে ৷ ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্র ধরে সোভিয়েত রাশিয়া মিশরের সঙ্গে ঘনিষ্টতা বাড়ালে, সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয় ।
দ্বিতীয়তঃ ইজরায়েল চেয়েছিল ১টি কৃত্রিম খাল খনন করে জর্ডন নদীর গতিপথকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে, কিন্তু সিরিয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করে ৷ ইজরায়েল সিরিয়া, সংঘর্ষ যা আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি রচনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেন ৷
পঞ্চমতঃ - প্যালেস্টাইনের ইসরাইল অঞ্চল থেকে আরবদের বিতাড়িত করা হয় ৷ এক্ষেত্রে ইসরাইলের বক্তব্য হল আরবরা ইহুদি রাষ্ট্র তারা ইসরাইলের অস্তিত্ব বিনাশের সচেষ্ট, অপরদিকে আরবদের বক্তব্য হল প্যালেস্টাইনের ইহুদিদের সুরক্ষিত করার অজুহাতে আরবদের প্যালেস্টাইন থেকে গৃহচুত্য করা হচ্ছে ৷
চতুর্থতঃ - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের আর্থরাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্যে এবং পশ্চিম এশিয়ার সোভিয়াত রাশিয়া বা সাম্যবাদের প্রসার রোধের উদ্দেশ্যে ইসরাইলকে তার প্রতিবেশী আরোব রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে পড়েছ না দেয় ৷ তাছাড়া এর পাশাপাশি ইজরাইলকে যাবতীয় আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের অঙ্গীকার করেন মার্কিন প্রশাসন ৷
আরবরা যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ইজরাইলের বিমান বাহিনী আরব প্রজাতন্ত্রের উপর আক্রমণ শুরু করে ৷ ফলস্বরূপ আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয় ৷ এই যুদ্ধে ইজরাইল মাত্র ছয় দিনের মধ্যে আরব রাষ্ট্রগুলিকে বিধ্বস্ত করে এবং আরব ভূখণ্ডে এক বিস্তৃত অঞ্চলকে ইসরাইলরা দখল করেন এবং জাতিপুঞ্জের নির্দেশ অমান্য করে তা ফেরত দিতেও অস্বীকার করেন ৷ এই যুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়ায় আরব রাষ্ট্রগুলির এরপর থেকে অধিক মাত্রায় রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ৷ অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি ঘটলেও মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় ৷