উত্তরের মানবতাবাদ বলতে কি বোঝো অথবা,উত্তরের মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
রেনেসা শুধু তার পৃষ্ঠ স্থান ইতালিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আগত ইউরোপীয় বণিকদের প্রভাব এবং শিল্পশৈলীর ব্যক্ত করতে আগত বিভিন্ন শিল্পীদের মাধ্যমে ইটালির রেনেসাঁ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড ও স্পেনে ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ এই সকল স্থানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষা চর্চা সঙ্গে সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব ,দর্শন, শিল্প, বিজ্ঞান ও সাহিত্য শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
উত্তরের রেনেসাঁ প্রাচীন সাহিত্যচর্চার সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব দর্শন ও ভাষাতত্ত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ৷ এখানকার শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদের মধ্যেও অন্যতম হলেন ফ্রান্সের বুঁদে, জার্মানির এগ্নিকোলা,বিউটালিন ও হার্টেন স্পেনের যাজক জিমনিশ উল্লেখযোগ্য ৷ এদের মধ্যে উত্তরের শ্রেষ্ঠ রেনেসাপন্থি মানবতাবাদী ছিলেন পন্ডিত ইরাসমাস ৷ পিয়ের গ্লাইলসের মতে," কবিরা ধ্রুপদী ভাবধারায় রপ্ত করে কাব্য রচনা করেছিলেন ৷ এই সকল কাব্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তারা যে সকল সাহিত্যচর্চা করতেন তা ধর্মনিরপেক্ষ হলেও ধর্মের বিরুদ্ধে চারণ করা হয়নি । তারা মনে করতেন নিজস্ব ধর্ম পালন করা একজন আদর্শ নাগরিকের কর্তব্য ।
এক্ষেত্রে ইরাসমাস ও হার্টেন নতুন শিক্ষার আলো দেখান ৷ তাদের এই শিক্ষা হলো মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে মানুষের জীবন যাপনের পথকে সহজ করে তোলা ৷ ইরাসমাসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল খ্রিস্টান ধর্মের সন্ন্যাস জীবন, ব্রহ্মচর্য জীবন ও বিভিন্ন অবাঞ্ছিত পূজার বিরোধী করে ধর্মের প্রকৃত রূপটি তুলে ধরা ৷
এই ধরনের দর্শনের সঙ্গে তৎকালীন বিখ্যাত আইনজ্ঞ রবার্ট গ্যাগুয়িন ঘনিষ্ঠ ছিলেন ৷ ফরাসি ভাষায় লিভির রোমের ইতিহাস অনুবাদ করেন ৷ ১৬ শতকের প্রথম দিকে ইংরেজ মানবতাবাদীদের অন্যতম জন কোলটের সঙ্গে ইরাসমাসের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল ৷
তিনি প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতা করেন এবং চার্চ যাজকদের দুর্নীতিকে আক্রমণ করেন ৷ তার মধ্যে বাইবেলে যে খ্রিস্টধর্মের পরিচয় পাওয়া যায় তার সঙ্গে প্রচলিত খ্রিস্টাধর্ম ব্যবস্থা কোনরূপ মিল ছিল না ৷ তাই তিনি তার রচিত "inpresent of folly" গ্রন্থে প্রচলিত খ্রিস্টধর্ম ও চার্চের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা করেন ৷ তিনি শুধুমাত্র দার্শনিকই নয়, তিনি ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক ৷ এই বহুমুখী প্রতিভার জন্যই তিনি মানবতাবাদী যুবরাজ হিসেবে ইতিহাসে খ্যাতি হয়ে আছেন ।
এইসব দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় মানবতাবাদী দার্শনিক ইরাসমাস একজন সমাজ সংস্কারও ছিলেন ৷ তিনি সারা জীবন তার জ্ঞানের ও প্রতিভার বলে মানুষকে ও সমাজকে সুপথের দিকে পরিচালিত করেছেন ৷ উত্তরের রেনেসাঁসের অন্যতম পুনরুত্থান পরবর্তী পর্যায়ে মানবিক মানবতার উজ্জ্বল উদাহরণ রূপে শ্রদ্ধেয় ৷