নজরানা পদ্ধতি বলতে কী বোঝো বা, নজরানা ব্যবস্থার বিশেষ উল্লেখ সহ চীনে ঔপনিবেশিক অনুপ্রবেশের ইতিহাস সন্ধান কর অথবা, নজরানা প্রথা সম্পর্কে আলোচনা কর

নজরানা ব্যবস্থার বিশেষ উল্লেখ সহ চীনে ঔপনিবেশিক অনুপ্রবেশের ইতিহাস সন্ধান কর অথবা, নজরানা প্রথা সম্পর্কে আলোচনা কর

 নজরানা পদ্ধতি বলতে কী বোঝো

নজরানা পদ্ধতি বলতে কী বোঝো

চীনের প্রাচীন রীতি ছিল নজরানা পদ্ধতি ৷ চীনের সম্রাট সামন্ত প্রভুদের জমিদারদের ভাসিদা করতেন । সামন্ত প্রভু ও জমিদাররা চীনা সম্রাটকে নাজরানা বা উপঠৌকন দিতেন প্রতিদান হিসেবে । সামন্ত প্রভুরা তাদের অঞ্চলে উৎপাদিত খাদ্য শোষণ করে নজরানা হিসেবে পাঠাতেন । এই প্রাচীন পদ্ধতিটি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যবহৃত হয় । মিং এবং কিং যুগে চীনে নাজরানা পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হত । কোরিয়া,আন্নামসাম, ব্রহ্মদেশ প্রভৃতি দেশ গুলি ছিল চীনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র । এই সমস্ত দুর্বল প্রতিবেশীর গুলির মধ্যে সবথেকে বেশি শক্তিশালী ছিলেন কোরিয়া, এই সমস্ত দেশগুলির উপহার সামগ্রী দেওয়া এই রীতিকে নজরানা পদ্ধতি বলে অভিহিত করা হয় ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

চীন মনে করেছিল যে এটি সমগ্র এশিয়ার সেরা সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী । চীন যে কোন ক্ষমতায় ইউরোপীয়দের সাথে যোগাযোগের বিরোধী ছিল । কিন্তু ইউরোপীয়রা চীনের সাথে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করে । চীন পশ্চিমা সব দূতাবাসের ওপর সতর্ক নজর রাখা শুরু করেছে । নজরনা নেওয়া ছাড়া ও চীনের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কাউটাও রীতি পালনের জন্য পাশ্চাত্য দেশগুলিকে অনেক সময় বাধ্য করা হয়েছিল । কাউটাও চীনের সম্রাটের কাছে নতি স্বীকার করছে । চীন সম্রাটের রাজদরবারে কাউটাও রীতি পালনের পর নজরানা দেওয়া হতো ৷ নাজরানার পরিমাণ, এটি পাঠানোর সর্বোত্তম সময়, যে দেশ থেকে এটি পাঠানো হবে এবং চীনে যাতায়াতের উপায় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । চীনা সম্রাট প্রতিবেশী দেশগুলিতে তার ভ্রমণের জন্য সময় এবং তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন । আবারও, নজরানার পরিমাণ ও অনেক সময় নির্দিষ্ট করা হয়নি । ঐতিহাসিক ফায়ার ব্যাংঙ্কের তথ্য থেকে জানা যায় কোরিয়া বছরের চার বার,লিউটিউ বছরে দুবার আন্নাম বছরে একবার সমাদেশ তিন ও বছরে একবার ব্রহ্মদেশ ও লাউস প্রতি ১০ বছরে একবার নজরানা দিত । পশ্চিমা দেশগুলিকে চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সময় কিছু পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি মেনে চলতে বাধ্য করা হয়েছিল ।

চীন সম্রাটকে নজরানা দেওয়া হলে চীন সম্রাট ও সেজন্য প্রকাশ করে নজরানা প্রদানকারী ব্যক্তিকে গুচ্ছ মনোরম দ্রব্য উপহার দিতেন । হল্যান্ড, রাশিয়া, পর্তুগাল, ব্রিটেন এবং অন্যান্যদের মতো পশ্চিমা দেশগুলির ব্যবহারের জন্য কাউটাও এবং নাজরানা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক ছিল, যদিও চীনা সম্রাটের দেওয়া উপহারের মূল্য নাজরানা মূল্যের চেয়ে অনেক কম ছিল । পশ্চিমা দেশগুলির জন্য, নাজরানা এবং কাউতাও প্রথার কঠোর আনুগত্য প্রয়োজন ছিল । চীনের সাথে বাণিজ্য করতে ইচ্ছুক পশ্চিমা দেশগুলিকে চীনা সম্রাটের দরবার এই রীতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছিল । পাশ্চাত্য দেশগুলি এই প্রথার বিরোধিতা করে জবাব দিলে চীনের কখনই পাশ্চাত্য দেশগুলির বাণিজ্যিক অভিযান বন্ধ করতে পারবে ৷ পাশ্চাত্য দেশগুলির নিজেদের শর্ত মেনে বাণিজ্য করবে ।

ইমানুয়েল সু নজরানা পদ্ধতির টেকনিক গুলিকে ব্যাখ্যা করেছেন তার "Rise of modern China" গ্রন্থে তার মতে প্রথমত চীনের সমস্ত বিদেশি রাষ্ট্রয় করদ রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত হতো । বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা যখন তাদের পরিদর্শন করত, তখন তারা কর রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবেও বিবেচিত হত । তারাও মনোযোগ দিচ্ছিল । দ্বিতীয়ত, চীনা সম্রাট তার সরকারকে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করতেন । ফলস্বরূপ, তিনি অন্যান্য রাজ্যকে সমানভাবে দেখেননি । তৃতীয়ত, জমিদার বা সামন্ত শাসকেরা নাজরানার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে এলাকার উপাধি লাভ করে । চতুর্থত, যদি কোনো বিদেশী চীনা সম্রাটকে দেখতে চায়, তাহলে তাকে সম্মান দেখাতে হবে এবং তাকে মনোযোগ দিতে হবে । চীনে, সম্রাটের সামনে তিনবার মাথা নত করা প্রথাগত, অভিবাদনের সাথে এগিয়ে যাওয়ার আগে মোট সাতটি মস্তকে এবং মাটি স্পর্শ করা । এই পদ্ধতির কারণে, চীন সম্রাট নিজেকে বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করতেন ।

নজরানা পদ্ধতির বিলুপ্তির করার জন্য কিছু কারণ হল: (1) নজরদারি ব্যবস্থার খরচ ছিল অত্যধিক, এবং করদ রাষ্ট্রগুলির পক্ষে এই ব্যয় বহন করে নজরানা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠছিল না ৷ (2).পশ্চিমা বণিকদের বিরোধিতার কারণে নজরদারি ব্যবস্থার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছিল। (3)। জাঙ্ক বাণিজ্য নাজরানা ঐতিহ্যের সহ্য করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছিলভ। জাঙ্ক কথার অর্থ ছিল চীনে বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত এক ধরনের ছোট তরণী । এই বাণিজ্য নজরানা প্রথার বহির্ভূত হওয়ার নজরানা পদ্ধতি অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল । (4)। ক্যান্টন বাণিজ্য নজরানা পদ্ধতির বহির্ভূত হওয়ায় নজরানা পদ্ধতির অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়েছিল । ক্যান্টন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের নজরানা পদ্ধতি অবলুপ্তিতেও বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟