মিউনিখ চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা কর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রক্কালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের জার্মান তোষণ নীতির এক চরম প্রকাশ হল ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের সংগঠিত মিউনিখ চুক্তি । হিটলারের সুদেতান অঞ্চল গ্রাস তথা চেকোস্লোবিয়া আক্রমণে উদ্দত হওয়াকে কেন্দ্র করেই এই চুক্তির অবতারণা ৷ ঐতিহাসিক লাৎসাম এর মতে,"মিউনিখ চুক্তি ছিল জার্মান ২০০ নীতির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ ৷"
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে অস্ট্রিয়া গ্রাস করার পর হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়া দিকে দৃষ্টি দেন ৷ জার্মান সীমান্তে অবস্থিত অঞ্চলে বসবাসকারী জার্মান সংখ্যালঘুগণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানালে হিটলার সেই সুযোগে সুদেতান কে জার্মান সাম্রাজ্যভুক্ত করার দাবি পেশ করেন ৷ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির এই প্রস্তাবের বিরোধিতার পরিবর্তে সম্মতি জানায় । শুধু তাই নয় যাতে এই প্রস্তাব মেনে নেয় সে ব্যাপারেও তারা চাপ দেয় ৷ নতী শিকার করলে হিটলার আরো বেশি অঞ্চল দাবি করে চেকোশ্লোভাকিয়া আক্রমনের উদ্যত হন । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেম্বারলেন এতে বিচলিত হয়ে ওঠেন ও বার্লিনে ছুটে গিয়ে হিটলার কে চেকোশ্লোভাকিয়া আক্রমণ থেকে বিরত হওয়ার অনুরোধ জানান ৷
এই পরিপ্রেক্ষিতেই শেষ পর্যন্তই ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনির মধ্যস্থতায় জার্মানির মিউনিকে চেম্বারলেন, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী দালা দিয়ের, হিটলার ও মুসোলিনীর মধ্যে এক নতুন চুক্তি সম্পাদিত হয় । এই চুক্তি মিউনিখ চুক্তি নামে পরিচিত ৷ চেম্বারলেন এই চুক্তি সম্পর্কে বলেন," আমার বিশ্বাস এটা আমাদের সময়কার শান্তি রক্ষক ৷"
মিউনিখ চুক্তিতে বলা হয় যে
- প্রথমতঃ ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের 1 থেকে 10 অক্টোবর এর মধ্যে সুদেতান জেলা থেকে চেকোশ্লোভাকিয়ার সেনা ও সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে ৷
- দ্বিতীয়তঃ উল্লেখিত সময়কালের মধ্যে জার্মান সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে সুদেতান অঞ্চলের দখল নেবে ৷
- তৃতীয়তঃ চার সপ্তাহের মধ্যে চেক সরকার সুদেতানে জার্মান দের চেক পুলিশ ও সেনাদল থেকে মুক্তি দেবে ৷
- পঞ্চমতঃ ব্রিটেন ও ফ্রান্স অবশিষ্ট চেকোশ্লোভাকিয়ার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নেবে ৷
মিউনিখ চুক্তিকে তোয়াক্কা না করে হিটলার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সমগ্র চেকোশ্লোভাকিয়া অধিকার করে নেয় । এরপরে হিটলার পোল্যান্ডের ডান্ডিজ বন্দর দাবি করেন ৷ পোল্যান্ড এই দাবি অগ্রাহ্য করলে হিটলার আক্রমণ করেন ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয় ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় মিউনিখ চুক্তি ছিল এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আপোষরফা ৷ মিউনিক চুক্তি সম্পাদন করে হিটলার কূটনৈতিক দিক থেকে জয়ী হয়েছিলেন বলা চলে, কেননা এই আপোষরফার মাধ্যমেই হিটলারের সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মেনে নিয়েছিল ৷ অস্ট্রিয়া সংলগ্ন সুদেতান অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ উৎপাদন সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে জার্মানির আর্থিক ভীত অনেকটাই মজবুত সমৃদ্ধ হয় ৷ সুদেতান অঞ্চলের সীমানা বরাবর চেক সরকার যে সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছিলেন তার সুবিধা লাভ করেছিলেন হিটলারের জার্মানি ৷ তাই জিওফ লেটন বলেন,"এই সীমান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কর্তৃত্ব লাভ করেন জার্মানি ৷"