মুঘল স্থাপত্যশৈলীর ওপর একটি প্রবন্ধ লেখো বা, মুঘল আমলের স্থাপত্য ও চিত্রকলার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
মুঘলদের আগমন কেবল ভারতবর্ষের রাজনীতি অর্থনীতি সামরিক বা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন সংঘটিত করেননি । মুঘলদের ভারত আগমনের মধ্য দিয়ে এদেশের শিল্প,সংস্কৃতি,সংঙ্গীত সাহিত্য সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল ৷ মুঘল যুগের সামগ্রিক পরিবর্তনের মধ্যে দাঁড়িয়ে স্থাপত্যজগতের যে আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ৷ মুঘল শাসকদের অধিকাংশই ছিলেন উদার দৃষ্টিভঙ্গিযুক্ত তারা ছিলেন মানবতাবাদী এবং শিল্পানুরাগী মুঘল শিল্প স্থাপত্য নান্দিকতার মাধুরী মুঘলন্দনতত্ত্বকে ইতিহাসের ধ্রুপদী অধ্যায় স্থান দিয়েছে ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
মুঘল স্থাপত্য গড়ে উঠে ভারতীয় তৈমুরীয় এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যের সমন্বয়ের দ্বারা ৷ মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর কেবল বীরই ছিলেন না তিনি ছিলেন প্রকৃতি প্রেমী এবং সুকুমার শিল্পপৃষ্ঠপ্রসাদ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ৷ তিনি কেবল লেখক হিসাবেই খ্যাতিমান ছিলেন না তিনি ছিলেন শিল্পেও প্রজ্ঞাযুক্ত ব্যক্তিত্ব ৷ ১৫২৬ থেকে ৩০ এই স্বল্পকালীন সময়ে তিনি আগ্রা রায়ানা ধোলপুর গোয়ালিয়ার প্রভৃতিস্থানের স্থাপত্য কীর্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন ৷
মুঘল সম্রাট হুমায়ুন পিতার মতো শিল্পানুরাগী হলেও তার বিলম্বিত ভাগ্য শিল্প স্থাপত্যে তাকে খুব বেশি স্বাক্ষর রাখতে দেয়নি । "হুমায়ুননামা" গ্রন্থ থেকে জানা যায় হুমায়ুন দিল্লিতে 'দীন-ই- পনাহা' নামক এক নগর নির্মাণের পরিকল্পনা করেন ৷ হুমায়ুনের ইচ্ছা ছিল এই নগরীকে রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ৷ কিন্তু তার ভাগ্য বিপর্যয় তাকে এই কাজ সফল করতে দেয়নি । যদিও পাঞ্জাবে হুমায়ুন নির্মিত একটি মসজিদ আছে যা কালের গ্রাসে এখনো কিছু চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ যা থেকে হুমায়ুনের শিল্প ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় । গবেষক পার্শি ব্রাউন বলেন "বাবর ও হুমায়ুন ভারতের শিল্প স্থাপত্যকে যথেষ্ট উৎসাহিত করেছিল ৷"
হুমায়ুনের পরের শেরশাহ তার স্বল্পকালীন শাসনে শিল্প স্থাপত্যকে উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠার সফল হয়েছিলেন ৷ শেরশাহ নির্মিত স্থাপত্যের মধ্যে পুরানো কেল্লা কিলারী-ই- কোহনা, কুইলা-ই-কুইনা মসজিদ শৈল্পিক গঠনে অনন্দী সুন্দর ৷ তবে শেরশাহের সমাধি অতি উচ্চস্বল্পিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৷
মুঘল স্থাপত্যের সম্রাট আকবরের অবদান ছিল চির স্মরণীয় ৷ আবুল ফজল লিখেছেন নির্মাতা হিসাবে আকবর ছিলেন সহজাত প্রতিবার অধিকারী ৷ তার আমলে স্থাপত্যে ইন্দো পারসিক রীতির অপূর্ব সমন্বয় ও বিকাশ ঘটে ৷"দেওয়ান-ই-আম","দেওয়ান-ই-খাস" মুঘল স্থাপত্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য | "দেওয়ান-ই- খাস" প্রসঙ্গে আধুনিক গবেষকরা বলেন নির্মিত একটি গৃহে সেলিমের একটি রত্নগৃহ আবিষ্কৃত হয়েছে ৷
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে একাধিক স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল ৷ জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের শেষ পর্যায়ে শ্বেত পাথরের তৈরি প্রাসাদ নির্মিত হয় । এইসব গৃহে দেওয়াল গুলি আবার বহু মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি ৷ জাহাঙ্গীরের সময় নির্মিত "ইতমাদ-উদ- দৌলা" সমাধি একটি বিখ্যাত স্থাপত্যের নিদর্শন ৷ এই ধরনের আয়তাকারগৃহে বিশেষ অনুসংখ্যা ছিল গৃহের চারকোণ সুন্দর গম্বুজ সম্পন্ন আটকানো মিনার ৷ আকবর নিজের সমাধি সৌধের কাজ শুরু করলেও তা সমাপ্ত করেছিলেন জাহাঙ্গীর ৷
মুঘল স্থাপত্যের ক্ষেত্রে শাহজাহানের রাজত্বকাল ছিল সুবর্ণ যুগ ৷ শাহজাহান নির্মিত আগ্রা দুর্গ,লাহোর দুর্গ, খাস মহল, শিষমহল, ওরঙ্গাবাদ,মাসানি ভবন মতি মসজিদ জুম্মা মসজিদসহ একাধিক স্থাপত্যের মধ্যে হৃদয় মুগ্ধ শিল্প মাধুরী বর্ষিত হয়েছে ৷ শাহজাহানের শিল্প কৃতির একাধিক নিদর্শন এর মধ্যে লালকেল্লা ময়ূর সিংহাসন ছিল অনবদ্য ৷ শাহজাহানের স্থাপত্য কেবল শিল্প সাধকের নয় সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করেছিল ৷
তবে শাহজাহানের স্থাপত্য কীর্তি অদ্বিতীয় নিদর্শন হলো যমুনা নদীর তীরে তার প্রিয় পত্নী মমতাজ মহলের প্রেমের স্মৃতি সৌদ তাজমহল ৷ গবেষক হ্যাভেল বলেছেন ভারতীয় শিল্পে চেতনা থেকে উদ্ভূত এক জৈব উপাদান তাজমহলকে বলা হয়ে থাকে ৷ মার্বেল নির্মিত প্রেমের সুখ সঙ্গী তাজমহল সম্পর্কে বিশ্ব বর্ণে কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন এটি হলো সম্রাটের দুঃখ থেকে বিগলিত হৃদয় থেকে নিঃসারিত অশ্রু বিন্দু । ডঃ এস কে সরস্বতী লিখেছেন যুগ যুগ ধরে তাজমহল অমর প্রেম দুঃখের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কল্পনাও বিচার করা হয়েছে ৷ শাহজাহানের স্থাপত্য শৈলী সম্পর্কে নারায়ণ সান্যাল বলেছেন ইন্দ্র পারস্যিক স্থাপত্যের সমন্বয় শাজাহান মুঘল স্থাপত্যের এক নতুন শৈলী আমদানি করেন যার বৈশিষ্ট্য হল মার্বেলের ব্যাপক ব্যবহার নয় খিলানী মণিমুক্ত খচিত নকশার অধিক জাফরিন কাজের নিপুনতা ৷