আদি মধ্যযুগের ইতিহাস রচনায় লেখ এর অবদান লেখা

আদি মধ্যযুগের ইতিহাস রচনায় লেখ এর অবদান লেখা

 আদি মধ্যযুগের ইতিহাস রচনায় লেখ এর অবদান লেখা

আদি মধ্যযুগের ইতিহাস রচনায় লেখ এর অবদান লেখা

ইতিহাস হল তথ্যাশ্রয়ী। তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিকগণ নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তবে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সাহিত্যিক উপাদান নিতান্তই স্বন্ধ। তবে প্রাচীন ভারতীয় জনজাতি ভারতের বুকে তাদের পদচিহ্ন রেখে গেছে। এই পদচিহ্ন ধরে পরবর্তীকালে ঐতিহাসিকরা তাঁদের জীবনযাপন পদ্ধতি উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন। আর এক্ষেত্রে ঐতিহাসিকরা লেখ বা লিপির ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেছেন।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদানগুলিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-(ক) সাহিত্যিক উপাদান ও (খ) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা- (ক) লিপি বা লেখ, (খ) মুদ্রা ও স্থাপত্য ও (গ) ভাস্কর্য। এই প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলির মধ্যে শিলালেখ বা লিপি প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনঃমূল্যায়ণে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলির মধ্যে প্রথমে লিপি বা লেখর স্থান। লেখর গুরুত্ব সাহিত্যের চেয়ে বেশি। ভারতীয় লিপির মধ্যে অশোকের লিপিগুলি সর্বোচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। এগুলি শিলাখণ্ডে, স্তম্ভগাত্রে এবং গিরিগুহায় পাওয়া গেছে। শিলাগাত্রে প্রাপ্ত লিপিকে শিলালিপি, স্তস্তগাত্রে প্রাপ্ত লিপিকে স্তম্ভলিপি বলা হয়। তাছাড়াও গিরিগুহায় প্রাপ্ত লিপিকে গৃহালিপি বলা হয়।

অশোকের শিলালিপি ও স্তম্ভলিপিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-(১) প্রধান ও (২) অপ্রধান। প্রধান লিপিগুলি পরস্পর সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত। তাদের মধ্যকার অংশ পরিমাণে বৃহৎ। অপ্রধান লিপিগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও সংক্ষিপ্ত হয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায় যে, অশোকের প্রধান লিপিগুলি সাম্রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলে এবং অপ্রধান লিপিগুলি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে পাওয়া গেছে। প্রাচীন ভারতে আশাকের লিপির গুরুত্ব খুব  বেশি, কারণ সেগুলিতে রাজাজয়, বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ এবং জনহিতকর কাজগুলির প্রস্তুত বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

অশোকের পরবর্তীকালে লিপিগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) সরকারি লেখ ও (২) বেসরকারি লেখ। সরকারি লেখগুলিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-(৩) প্রশক্তি ও (খ) ভূমিদান। যেগুলি ইতিহাস রচনাকে আরও সহজ করে তুলেছে।



প্রশস্তিগুলির মধ্যে সমুদ্রগুপ্তের 'এলাহাবাদ প্রশস্তি', থেকে সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যজার। সীমান্তংতী উপজাতিদের সঙ্গে সম্পর্ক, ধর্মনৈতিক অবস্থান, শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক সম্পর্কে জানা যায়। সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা গৌতমী পুত্র সাতকণীর 'নাসিক প্রশস্থি গুরুত্বপূর্ণ শিলালিপি। এখানে গৌতমী পুত্র সাতকর্ণীর রাজ্যজয় ও সাহাজ্য সংস্কার বিষয়ে উল্লেখ আছে। শকদের রাজা বুদ্রদামনের 'জুনাগড় শিলালিপি' একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশান্তি লেখ। চৈতবংশীয় রাজা কলিঙ্গরাজ খারবেলের "হাতিগুম্ফা লিপি" প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিচিত।

ভূমিদানসংক্রান্ত দলিল দস্তাবেজ ইতিহাসের উপাদান হিসাবে বিশেষ উল্লেখযোগা। এই সনদ বা দলিলে জমির সীমানা, মূল্য, জমির হস্তান্তরের বিষয় প্রভৃতি উল্লেখ করা। হয়েছে। বেসরকারি শিলালিপি প্রচুর সংখ্যায় পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেবমূর্তি, মন্দির, প্রাসাদ এবং প্রাসাদের গায়ে এগুলি খোদাই করা থাকত। এই লিপি থেকে সময় বা তারিখ ধর্মনৈতিক জীবনাবলি প্রভৃতি জানা যায়। গুপ্তযুগের পরবর্তী লিপিগুলি বেশিরভাগ প্রাকৃত। ভাষায় লেখা। এগুলি বৌদ্ধ বা জৈনধর্মসংক্রান্ত। গুপ্ত পরবর্তী যুগে লিপিগুলি প্রায় সংস্কৃত ভাষায় রচিত। ব্রাহ্মধর্মবিষয়ক পালি, প্রাকৃত ও সংস্কৃত ছাড়া তামিল, তেলেগু প্রভৃতি ভাষাতে লিপিগুলি রচিত হয়েছিল।

সাম্প্রতিককালে প্রাচীন নিদর্শনগুলিকে ইতিহাস রচনায় আরও ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। ডি. ডি. কৌশাম্বিসহ কয়েকজন পণ্ডিত ইতিহাস রচনায় বিভিন্ন যুগে এমনকি প্রাক্-ঐতিহাসিক যুগে মানুষের ব্যবহৃত হাতিয়ারগুলির ওপর গুরুত্ব আরোগ করেছেন। সাম্প্রতিক পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্যে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ভূগর্ভ থেকে তোলা কোনো নিদর্শনের প্রাচীনত্ব নির্ণয় করে থাকেন। প্রাচীন নিদর্শন থেকে ঐতিহাসিক তত্ত্বনিরূপণে প্রত্নতত্ত্ববিদদের সঙ্গে সঙ্গে নৃতত্ত্ববিদরাও নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের বিভিন্ন দিকগুলির আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, অন্যান্য লিখিত উপাদান অপেক্ষা প্রত্নতত্ত্ব বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনুলিপি ভাষ্যরচনাকালে লিখিত উপাদান অনিচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তাই বলা যায় যে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল হল লিপি বা লেখ।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আদি মধ্যযুগের ইতিহাস রচনায় লেখ এর অবদান লেখা এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟