দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধ অথবা দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধে তাৎপর্য আলোচনা কর

দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধ অথবা দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধে তাৎপর্য আলোচনা কর

  দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধ অথবা, দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধে তাৎপর্য আলোচনা কর


দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধ


ফগানিস্তানের অন্তর্গত ঘুর রাজ্যের শাসক মহাম্মদ ঘুরি সঙ্গে আজমির ও দিল্লির চৌহান বংশীয় রাজপুত রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানের ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে থানেশ্বরের নিকটবর্তী তরাইনের প্রান্তরে উভয়পক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয় ৷ এই যুদ্ধে মহাম্মদ ঘুরির পরাজয় ঘটে ৷ পরের বছরই ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহাম্মদ ঘুরি প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীসহ পৃথ্বীরাজকে আক্রমণ করেন ৷ অবশ্যই পৃথ্বীরাজের শেষ পরিণতি সম্পর্কে একাধিক মত প্রচলিত রয়েছে ৷ মিনহাজ উদ্দিন এর মতে মহাম্মদ ঘুরি যুদ্ধের পরে পৃথ্বীরাজ ও তার ভাইকে হত্যা করে ৷ কিন্তু হাসান নিজামী বলেন বন্দি পৃথ্বীরাজকে মহাম্মদ ঘুরি কিছুদিন বন্দী করেন এবং বশ্যতা স্বীকারের বিনিময়ে আরো কিছুদিন আজমিরের শাসনের দায়িত্ব দেন তবে কিছুদিন পরে ষড়যন্ত্রের অভিজাগে পৃথ্বীরাজকে হত্যা করে ৷ তার পুত্রকে আজমিরের শাসক নিয়োগ করা হয় ৷ এই মতকে অধিকাংশ পণ্ডিত গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন ৷


ভারতবর্ষের ইতিহাসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ এক নতুন অধ্যায় সূচনা করে ৷ এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের হিন্দু সাম্রাজ্যের পতন ও মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে যুব সন্ধিক্ষণ ঘটেছিল এই যুদ্ধের ফলে আর্থ ও রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে একাধিক পরিবর্তন সূচিত হয় ৷ পূর্বে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন ঐক্য ছিল না একটি অখন্ড শক্তিশালী সাম্রাজ্যের পরিবর্তে তখন ভারত একাধিক খন্ড খন্ড অঞ্চলে বিভক্ত ছিল ৷ কিন্তু এই যুদ্ধের পর ভারত বর্ষ একটি অখন্ড সাম্রাজ্যে পরিণত হয় ৷ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্বে কর ব্যবস্থা কোন সুনির্দিষ্টতা ছিল না কিন্তু মুসলিমদের আগমনের পর ইক্তার মধ্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট কর ব্যবস্থা প্রচলিত হয় । কৃষি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভৃতি ক্ষেত্রে সুলতানদের আগমনের পর এক ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয় ৷ বানিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন গতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক সমন্বয়ে সংঘটিত হয়েছিল ৷


পরিশেষে বলা যায় যে এই যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ পরাজয়ের প্রতিক্রিয়া ছিল সুদূরপ্রসারী ৷ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে মহাম্মদ ঘুরি সাফল্য একদিকে যেমন ভারতীয় রাজপুত জাতির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয় ৷ তেমনি ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে অ হিন্দু বহিরাগত তুর্কিদের প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে ৷ মহাম্মদ ঘুরী এই সাফল্যকে ভিত্তি করে অল্প কালের মধ্যেই ভারতে মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা ঘটে ৷ তুর্কি শাসনের সূত্রে ভারতের সমাজ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে ৷ এই যুদ্ধে ভারতীয় সামরিক ত্রুটি ও দুর্বলতা আক্রমণকারীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় ।


এই নোটটি পড়লে আপনি কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেনঃ

  • তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ কবে হয়? এবং কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟